Friday, December 20, 2024

বেআইনীভাবে চলছে সিকিউরিটি কোম্পানিগুলো-দেখার কেউ নেই। (BDC CRIME NEWS24)

BDC CRIME NEWS24

বেআইনীভাবে চলছে সিকিউরিটি কোম্পানিগুলো-দেখার কেউ নেই

বাংলাদেশে ট্রেড লাইসেন্সধারী সিকিউরিটি কোম্পানির সংখ্যা প্রায় ১০ হাজার। বর্তমানে প্রায় আটশত সিকিউরিটি কোম্পানি সচল আছে। একটি সিকিউরিটি কোম্পানি খোলা খুবই সহজ। দুই কপি ছবি, একটি ভোটার আইডি কার্ড ও কোন্ নামে খুলবেন সেই নামসহ সরকারি ফি-র অতিরিক্তি কিছু টাকা দিলেই সিটিকরপোরেশন  বা পৌরসভা থেকে ৩/৪ দিনের মধ্যে সিকিউরিটি কোম্পানির ট্রেড লাইসেন্স বের করা সম্ভব। সিটি করপোরেশন  বা পৌরসভা  পরবর্তীতে এইসব কোম্পানি নিয়ে তেমন খোঁজ খবর রাখে না। যাদের কোম্পানি সচল থাকে তাদেরকে প্রতি বছর নবায়ন করতে হয় আর এখানেই সিটিকরপোরেশন  বা পৌরসভার মোটা অংকের একটা রাজস্ব আয় হয়। সিটিকরপোরেশন  বা পৌরসভা থেকে ট্রেড লাইসেন্স নেয়ার পর অনেকে জয়েন্ট স্টক থেকে লিমিটেড করে নেয়। এটা করাও খুবই সহজ টাকা হলেই হবে। যাই হোক কোম্পানি গঠিত হলো, ব্যবসাও চলছে কিন্তু সরেজমিনে দেখা গেছে এইসব কোম্পানির ৯৫% মালিক বা ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি আইন ১৯৯৪, বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ ও বিধিমালা ২০১৫ এবং বেসরকারি নিরাপত্তা সেবা আইন ২০০৬ ও বিধিমালা ২০০৭ সম্পর্কে কিছুই জানে না। বাংলাদেশের প্রথম সারির কয়েকটি কোম্পানি ব্যতীত বেসরকারি নিরাপত্তা সেবা আইন ২০০৬ ও বিধিমালা ২০০৭ নামক এই বই দুইটি অন্য কোনো কোম্পানিতে নেই। অধিকাংশ কোম্পানির মালিক সরকারি কোনো আইনকানুন মানে না, নিজের মনগড়া মতো কোম্পানিগুলো চালাচ্ছে।

বেআইনীভাবে কোম্পানিগুলো যেভাবে পরিচালনা করা হচ্ছে তা নিম্নে তুলে ধরা হলোঃ

(১) সার্ভিস রুলস প্রনয়ণ না করাঃ

বেসরকারি নিরাপত্তা সেবা বিধিমালা ২০০৭ এর ৮(২) নং বিধিতে উল্লেখ আছে যে, বেসরকারি নিরাপত্তা সেবা আইন ২০০৬ এর ১১ নং আইনের ১০ নং ধারার উদ্দেশ্য পূরণকল্পে কোম্পানি পরিচালনায় একটি সার্ভিস রুলস প্রনয়ণ করবে। অর্থাৎ সিকিউরিটি গার্ড ও অন্যান্য কর্মকর্তা/কর্মচারীদের নিয়োগ, বেতন ভাতা, ছুটি, প্রভিডেন্ট ফান্ড, সার্ভিস বেনিফিটসহ সকল নিয়মকানুন বা পলিসি উক্ত সার্ভিস রুলস নামক বইয়ে লিপিবদ্ধ থাকবে। যে বইয়ের প্রতিটি পাতায় লাইসেন্স প্রদান কর্তৃপক্ষ কর্তৃক সত্যায়িত হতে হবে। উক্ত আইন বা পলিসিগুলো শ্রম আইন অনুসারে হতে হবে।

বিশেষ কিছু কোম্পানি ব্যতিত অন্য কোনো কোম্পানিতে সার্ভিস রুলস প্রনয়ণ নেই। যেহেতু এইসব কোম্পানিগুলো দেখভালের কেউ নেই, তাই প্রথমত যারা সার্ভিস রুলস প্রনয়ণ করেছিল এবং মাঝখানে শত শত আইনের পরিবর্তন হলেও আপডেট অনুমোদিত কোনো সার্ভিস রুলস প্রনয়ণ করা নেই। অন্যান্য কোম্পানিগুলোতে তো সার্ভিস রুলস প্রনয়ণ নেই। তারা যখন যা ইচ্ছে সেটাই আইন বলে চালিয়ে আসছে। অনেকে পরবর্তীতে ধরা পড়ার ভয়ে লিখিত কোনো আদেশও দেয় না।

(২) রেজিস্টার সংরক্ষণ না করাঃ

বেসরকারি নিরাপত্তা সেবা আইন ২০০৬ এর ৯(৪) নং ধারায় উল্লেখ আছে, নিয়োগকৃত সকল নিরাপত্তা প্রহরীসহ অন্যান্য কর্মকর্তা ও কর্মচারীর নাম, ঠিকানা, ছবি ও পূর্ণাঙ্গ জীবন-বৃত্তান্তসংবলিত একটি রেজিস্টার সংরক্ষণ করতে হবে এবং ইহার একটি কপি স্থানীয় থানায় সরবরাহ করতে হবে এবং উক্ত রেজিস্টারে কোনো রদবদল করা সাত দিনের মধ্যে সংশ্লিষ্ট থানায় অবহিত করতে হবে। সরেজমিনে দেখা যায়, অধিকাংশ কোম্পানিতে গার্ড ভর্তির কোনো রেজিস্টার নেই। নামীয় কোনো তালিকা নেই। কোম্পানি গঠিত হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত কতোগুলো গার্ড ভর্তি হয়েছে বা চলে গেছে তার কোনো তথ্য প্রমাণ নেই। পোস্ট থেকে গার্ড চলে যাচ্ছে আবার বিভিন্ন জায়গা থেকে লোক ধরে এনে পোস্টে রাখা ইউনিফরম পরিধান করে ডিউটিতে লাগিয়ে দিচ্ছে, এদের ভর্তির কাগজপত্রগুলোও ঠিকভাবে নেয়া হয় না বা অফিসে প্রেরণ করা হয় না। বেতনের সময় ফিল্ড স্টাফ একটা নামীয় তালিকা দেয় সেই অনুপাতে হাতে হাতে বেতন প্রদান করে থাকে। সংশ্লিষ্ট থানায় অদ্যবধি কোনো নামীয় তালিকা প্রদান করা হয়নি।

(৩) গার্ডের নিকট থেকে অবৈধভাবে ভর্তিবাবদ টাকা গ্রহণ করাঃ

বেসরকারি নিরাপত্তা সেবা বিধিমালা ২০০৭ এর ৪(১) ও ৫(১) নং এ উল্লেখ আছে, সরকারের পূর্বানুমতি ব্যতীরেকে কোনো সিকিউরিটি গার্ডের নিকট থেকে নিরাপত্তা জামানত ব্যতীত (যা ফেরতযোগ্য) অন্য কোনো অর্থ গ্রহণ করতে পারবে না। যদি অর্থ গ্রহণের অভিযোগ প্রমাণিত হয় তাহলে সেই কোম্পানির বিরুদ্ধে সরকার আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

জামানত হিসেবে সিকিউরেক্স প্রাঃ লিঃ, গ্রুপ ফোর্স, এলিট ফোর্সসহ এরকম কয়েকটি কোম্পানি কিছু করে টাকা নিলেও পরবর্তীতে সেই টাকা ফেরত দেয়। এছাড়া হাজার হাজার যতো সিকিউরিটি কোম্পানি আছে কেউ ভর্তি ফি, কেউ ট্রেনিং ফি, কেউ অ্যাডমিন কস্ট, কেউ ইউনিফরম বাবদ ইত্যাদি নামে দুই হাজার থেকে পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত বা  তারও বেশি টাকা নিয়ে থাকে। এই টাকাগুলো কেউ ফেরত দেয় না। তাদের নির্ধারিত সেই টাকা কোনো গার্ড একবারে দিতে না পারলে বেতন থেকে মাসে মাসে কর্তন করে নেয়া হয়। অনেক কোম্পানি টাকা নেয়ার মানি রিসিট দিয়ে থাকে। অথচ সিকিউরিটি আইন অনুসারে এইসব টাকা নেয়া সম্পূর্ণ নিষেধ এবং টাকা নেয়া প্রমানিত হলে সেই কোম্পানির বিরুদ্ধে সরকার আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। কিন্তু অদ্যবধি সরকারিভাবে কোনো ব্যবস্থা না নেয়ায় এইসব কোম্পানি অসহায় গরিব লোকদের নিকট থেকে মাসে লক্ষ লক্ষ টাকা আদায় করে আত্মসাৎ করে আসছে। মাঠ পর্যায়ে গার্ডদের জিজ্ঞেস করলেই এর সত্যতা পাওয়া যাবে। এইসব টাকার সরকারি কোনো ভ্যাট ট্যাক্স না দেয়ায় সরকার প্রতি মাসে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব হারিয়ে আসছে। 

অধিকাংশ কোম্পানি ইউনিফর্ম বাবদ একবারে হোক বা মাসে মাসে বেতন থেকে কর্তন করে হোক কোনো গার্ড চলে গেলে এবং পোশাক জমা না দিলে সেই গার্ডের শেষ মাসের বেতন থেকে ইউনিফর্ম বাবদ টাকা কর্তন করে। আবার অনেক কোম্পানি শেষ মাসের বেতনই দেয় না।

(৪) সিকিউরিটি গার্ডদের প্রশিক্ষণ প্রদান না করাঃ

বেসরকারি নিরাপত্তা সেবা আইন ২০০৬ এর ৯(৩) নং ধারায় উল্লেখ আছে যে, প্রত্যেক নিরাপত্তা প্রহরীকে যথাযথ ও পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ প্রদান করতে হবে এবং প্রশিক্ষণ প্রদান না করে কোনো নিরাপত্তা প্রহরীকে নিরাপত্তা সেবা প্রদান কাজে নিয়োগ করা যাবে না। সরেজমিনে দেখা গেছে, অধিকাংশ কোম্পানির কোনো প্রশিক্ষণ রুম নেই, তাদের কোনো প্যারেড গ্রাউন্ড নেই। নেই কোনো প্রশিক্ষক। প্রশিক্ষণের নেই কোনো প্রশিক্ষণ গাইড বা মডিউল। এদের নেই কোনো ব্লক সিলেবাস, নেই কোনো প্রোগ্রাম। প্রশিক্ষণের বিষয়ে ক্লায়েন্ট জিজ্ঞেস করলে এইসব কোম্পানি মিথ্যে কথা বলে ক্লায়েন্টকে শান্ত্বনা দেয়। এরা বলে গার্ডকে তারা সাত দিন বা চৌদ্দ দিন ট্রেনিং দিয়ে থাকে। ট্রেনিং সেন্টার কোথায় জানতে চাইলে এরা নিজ অফিস থেকে অনেক দূরের কোনো জায়গার কথা বলে সেখানে তাদের ট্রেনিং সেন্টার আছে। আসলে এসব ভুয়া কথা। নতুন কোনো পোস্ট উদ্বোধন হলে বিভিন্ন জায়গা থেকে লোক ধরে এনে ট্রেনিং ছাড়াই পোস্টে দাঁড় করিয়ে দেয়। আবার পূরনো পোস্টগুলোতে এদের এক্সট্রা ইউনিফরম থাকে। এরা বিভিন্ন জায়গা থেকে লোকজন ধরে এনে ইউনিফরম পরিধান করে  পোস্টে ডিউটি লাগিয়ে দেয়। এরা চোর, ডাকাত, সন্ত্রাসী নাকি জঙ্গি কোনো যাচাই বাছাই নেই। প্রশিক্ষণ না থাকায় যেমন স্যালুট দিতে পারে না তেমনি এইসব গার্ড পোস্টের জন্যে হুমকিস্বরুপ। প্রশিক্ষণবিহীন এইসব গার্ডকে দিয়ে নিরাপত্তা সেবা প্রদান করায় সেবার মান ভালো না হওয়ায় কিছুদিন পর সেই পোস্ট আবার চলে যায়।

 (৫) নিয়োগ পত্র ও পরিচয় পত্র প্রদান না করাঃ

সিকিউরিটি গার্ড নিয়োগের অন্যতম শর্ত হচ্ছে, সিকিউরিটি গার্ডদের নিয়োগ পত্র ও পরিচয় পত্র প্রদান করা।  বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ এর ৫ নং ধারা ও বিধিমালা ২০১৫ এর ১৯(১) নং ধারায় উল্লেখ আছে যে, কোনো মালিক নিয়োগপত্র প্রদান না করে কোনো শ্রমিককে নিয়োগ করতে পারবে না এবং নিয়োজিত প্রত্যেক শ্রমিককে ছবিসহ পরিচয়পত্র প্রদান করতে হবে।

বাংলাদেশের দুই/তিনটি কোম্পানি ব্যতিত বাকি কোনো কোম্পানি গার্ডদের কোনো প্রকার নিয়োগ পত্র প্রদান করে না। তবে কমপ্লায়েন্স ফ্যাক্টরিগুলোতে ক্লায়েন্টের চাহিদা মোতাবেক সব কোম্পানিই নিয়োগ পত্র প্রদান করে থাকে আবার সেই কোম্পানিই জেনারেল গার্ডদের নিয়োগ পত্র দেয় না। কোনো কোনো কোম্পানি অফিস স্টাফদের পর্যন্ত নিয়োগ পত্র দেয় না। অনেক কোম্পানি পার্ডদের বেতন ভাতাসহ অন্যান্য সুযোগ সুবিধা প্রদান না করে তাদের সাথে প্রতারণা করে থাকে। আর নিয়োগ পত্র না থাকায় গার্ডরা তাদের দাবিদাওয়া সঠিকভাবে উপস্থাপন করতে না পারায় তারা সকল সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছে।

অনেক কোম্পানি আছে তারা গার্ডদের নিয়োগ পত্রও দেয় না আবার আইডি কার্ডও দেয় না।

সিকিউরিটি কোম্পানিগুলো এভাবে সরকারি আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে অবৈধভাবে দিব্যি ব্যবসা চালিয়ে আসছে।

বিধিমালা ২০১৫ এর ১৯(৫) নং ধারায় উল্লেখ আছে যে, মালিকের নিজ খরচে ছবিসহ পরিচয়পত্র প্রদান করবে। এখানে দেখা যায়, অনেকে আউডি কার্ড দিলেও প্রতি কার্ডবাবদ পঞ্চাশ টাকা/একশত টাকা করে নিয়ে থাকে। অথচ এসব দেখার কেউ নেই।

 (৬) জয়নিং লেটার না দেয়াঃ

অনেক সিকিউরিটি কোম্পানি গার্ডসহ অন্যান্য কর্মকর্তাকে যেমন নিয়োগপত্র প্রদান করে না তেমনি জয়নিং লেটারও প্রদান করে না। এসব আইন বহির্ভুত কর্মকান্ড করার কারণে একজন গার্ড কতো তারিখ থেকে ডিউটি করছে তার সঠিক তথ্য না থাকায় সরকার প্রকৃত রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

(৭)  ইউনিফরম ও আইডি কার্ড জমা না নেয়াঃ

বেসরকারি নিরাপত্তা সেবা আইন ২০০৬ এর ১১(৩) ধারায় উল্লেখ আছে যে, কোনো কারণে কোনো সিকিউরিটি গার্ড চলে গেলে তাদের ইউনিফরম ও আইডি কার্ড জমা প্রদান বাধ্যতামূলক। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, অধিকাংশ  সিকিউরিটি কোম্পানি থেকে অহরহ গার্ড ইউরিফরম নিয়ে চলে যাচ্ছে সেগুলো ফেরত আনার কোনো উদ্যোগ নেই। তাদের নামে কোনো লেটার ইস্যু করা হয় না।

 (৮) সিকিউরিটি গার্ড নিয়োগের পূর্বে পুলিশ ভেরিফিকেশন করাঃ

সিকিউরিটি গার্ড ও অন্যান্য কর্মকর্তা কর্মচারী নিয়োগের পূর্বে তাদের পুলিশ ভেরিফিকেশন করা বাধ্যতামূলক। বেসরকারি নিরাপত্তা সেবা আইন ২০০৬ এর ১১ নং আইনের ৯(২) ধারা ও বিধিমালা ২০০৭ এর ৮(৩) অনুযায়ী  সিকিউরিটি গার্ড ও অন্যান্য কর্মকর্তা কর্মচারী নিয়োগের পূর্বে তাদের পুলিশ ভেরিফিকেশন করা বাধ্যতামূলক। কমপ্লায়েন্স ও মাল্টিন্যাশনাল যতো কোম্পানি আছে প্রত্যেকেই এগ্রিমেন্ট এর সময় পুলিশ ভেরিফিকেশন এর বিষয়টি জুড়িয়ে দেয়।  প্রথম সারির কয়েকটি কোম্পানি ব্যতিত বাকি হাজার হাজার কোনো সিকিউরিটি কোম্পানি পুলিশ ভেরিফিকেশন করায় না। আবার যারা করায় তারা গার্ড নিয়োগ দেয়ার কয়েক মাস পরে  পুলিশ ভেরিফিকেশন করায়। অথচ আইনে বলা আছে, নিয়োগ দেয়ার পূর্বে পুলিশ ভেরিফিকেশন করাতে হবে। এখানে বুঝতে হবে, নিয়োগের পূর্বে যে তদন্ত করা হয় তার নাম ভেরিফিকেশন আর নিয়োগের পর যেটা করা হয় তার নাম ভেটিং। এখানে কোনটা করা হচ্ছে? সরকারি প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী প্রত্যেক সিকিউরিটি গার্ডের জন্য সোনালী ব্যাংকে নির্দিষ্ট একটি কোডে ট্রেজারি চালানের মাধ্যমে একশত টাকা জমা দিয়ে সেই ট্রেজারী চালানের মূল কপি ও একটি চিঠিসহ এডিশনাল আইজিপি, এসবি, মালবাগ, বাংলাদেশ পুলিশ এই ঠিকানায় প্রেরণ করতে হবে। এখানে উল্লেখ্য যে, সিকিউরিটি গার্ডের জন্য একশত টাকা আর সেই অফিসের অফিস স্টাফ হলে পাঁচ শত টাকার ট্রেজারি চালান করতে হবে।

অনেক সিকিউরিটি কোম্পানি আছে কোনো টাকা খরচ না করে সরাসরি ভেরিফিকেশনের জন্য সেই গার্ডের লোকাল থানায় চিঠি দিয়ে থাকে। লোকাল থানা ইচ্ছে করলে ভেরিফিকেশন করে ইচ্ছে না হলে করে না। কিন্তু কেনো সিকিউরিটি কোম্পানি  এই কাজটি করে ? তারা এ কাজটি এজন্যে করে যে, ক্লায়েন্টকে দেখানোর জন্য। এভাবে সিকিউরিটি কোম্পানিগুলো সরকারকে রাজস্য ফাঁকি দিয়ে আসছে। নামে মাত্র কয়েকটি কোম্পানি পুলিশ ভেরিফিকেশন করায় তবুও নিয়োগের কয়েক মাস পরে, কয়েক বছর পরে। এই ক্ষেত্রে সরকারি কেউ নিয়ম নীতি মেনে চলছে না।

(৯) প্রধান কার্যালয় ও শাখা অফিসের দৃশ্যমান স্থানে লাইসেন্সের ফটোকপি লটকিয়ে রাখাঃ

বেসরকারি নিরাপত্তা সেবা আইন ২০০৬ এর ৮(৩) ধারায় উল্লেখ আছে যে, প্রধান কার্যালয় ও শাখা অফিসের সর্বাপেক্ষা দৃশ্যমান স্থানে লাইসেন্সের একটি ফটোকপি লটকিয়ে রাখতে হবে। এক্ষেত্রে দেয়া যায়, অনেকে রাখে আবার অনেকে রাখে না।

(১০) সার্ভিস বুক প্রদান না করাঃ

বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ এর ৬(১) ও বিধিমালা ২০১৫ এর ১৯(৭), ২০ ধারা অনুযায়ী প্রত্যেক মালিক তার নিজ খরচে নিযুক্ত প্রত্যেক শ্রমিকের জন্য একটি সার্ভিস বইয়ের ব্যবস্থা করবেন। মাত্র হাতে গোনা কয়েকটি কোম্পানি সার্ভিস বুক দিয়ে থাকে বাকি কেউ সার্ভিস বুক দেয় না। আবার অনেক কোম্পানি আছে, যারা কয়েকটি সার্ভিস বুক অফিসে বানিয়ে রাখে। কোনে ক্লায়েন্ট অফিস ভিজিট করতে গেলে তারা ঐ নমূনা সার্ভিস বুক বের করে দেখায়। কিন্তুআদৌ গার্ডদেরকে কোনো সার্ভিস বুক দেয় না।

(১১) প্রভিডেন্ট ফান্ড এর টাকা না দেয়াঃ

বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ এর ২৬৪(১) ধারা অনুযায়ী বেসরকারী খাতের কোনো প্রতিষ্ঠান ইহার শ্রমিকগণের সুবিধার জন্য প্রভিডেন্ট ফান্ড বা ভবিষ্য তহবিল গঠন করতে পারবে। বাংলাদেশে যতো প্রতিষ্ঠিত সিকিউরিটি কোম্পানি আছে সবগুলোতেই গার্ডদের জন্য এই সুবিধা আছে। নিয়ম হলো, মালিক পক্ষ প্রভিডেন্ট ফান্ড এর জন্য গার্ডের বেতন থেকে একশত টাকা করে বা কমবেশি কর্তন করবে আর মালিক পক্ষ সমপরিমান টাকা তার একাউন্টে জমা করবে। এখন গার্ড চলে যাওয়ার সময় উক্ত সমূদয় টাকা তাকে প্রদান করবে। কিন্তু এই নিয়ম প্রথম সারির কয়েকটি কোম্পানি পালন করলেও বাকি হাজার হাজার কোনো কোম্পানি এই নিয়ম পালন করে না। ধানমন্ডি এলাকায় অবস্থিত প্রতিষ্ঠিত একটি কোম্পানি প্রভিডেন্ট ফান্ড এর কথা বলে প্রত্যেক গার্ডের বেতন থেকে প্রতি মাসে একশত টাকা করে কেটে নেয় কিন্তু এপর্যন্ত কোনো গার্ডকে প্রভিডেন্ট ফান্ড এর টাকা ফেরত দিয়েছে বলে তার কোনো প্রমাণ নেই। উক্ত কোম্পানি প্রভিডেন্ট ফান্ডে মালিক পক্ষ থেকে কোনো টাকাও জমা করে না। এভাবে এই কোম্পানির মতো অনেকেই গরিব অসহায় গার্ডদের টাকা মেরে আত্মসাৎ করে আসছে। যা দেখার কেউ নেই। 

(১২) সার্ভিস বেনিফিট প্রদান না করাঃ

বাংলাদেশ শ্রম আইন-২০০৬, সংশেধিত আইন-২০১৩ অনুযায়ী চাকুরীর অবসান নীতিমালায় (ধারা-২৬ ও ২৭,) আওতায় একজন শ্রমিক/কর্মচারী স্বেচ্ছায় চাকুরী হতে অবসর গ্রহণ করুক বা মালিক কর্তৃক চাকুরীর অবসান হউক নিম্ন বর্ণিত হারে সার্ভিস বেনিফিট প্রদত্ব হবে।

(১) ধারা-২৬ এর উপধারা (৪) অনুযায়ী মালিক কর্তৃক কোন স্থায়ী শ্রমিকের চাকুরীর অবসান করা হয় সেক্ষেত্রে, মালিক শ্রমিককে তার প্রত্যেক সম্পূর্ণ বৎসরের চাকুরীর জন্য ক্ষতিপূরণ হিসাবে সার্ভিস বেনিফিট  প্রদান করবে, ত্রিশ (৩০) দিনের মজুরী, অথবা গ্রাচুইটি (অথার্ৎ কোন শ্র্রমিকের প্রতি পূর্ণ বৎসর চাকুরী অথবা ছয় মাসের অতিরিক্ত সময়ের চাকুরীর জন্য তার সর্বশেষ প্রাপ্ত মজুরী হারে নিরবিচ্ছিন্নভাবে কোনো প্রতিষ্ঠানে কিংবা একই মালিকের যে কোন প্রতিষ্ঠানে অনধিক ০৮ বৎসরের চাকুরীর ক্ষেত্রে তার সর্বশেষ প্রাপ্ত মজুরী হারে ৩০ দিনের মজুরী অথবা ৮ বৎসরের অধিককাল চাকুরীর ক্ষেত্রে তার সর্বশেষ প্রাপ্ত মজুরী হারে ৪৫ দিনের মজুরী যাহা উক্ত শ্রমিককে তার চাকুরীর অবসানে প্রদেয়, ইহা এই আইনের অধীনে শ্রমিকের বিভিন্ন ভাবে চাকুরীর অবসানজনিত কারনে মালিক কর্তৃক প্রদেয় ক্ষতিপূরন বা নোটিশের পরিবর্তে প্রদেয় মজুরী বা ভাতার অতিরিক্ত হইবে) যদি প্রদেয় হয়, যা অধিক হবে. প্রদান করবেন এবং এই ক্ষতিপূরণ এই আইনের অধীন শ্রমিককে প্রদেয় অন্যান্য সুবিধার অতিরিক্ত হবে।

(২) ধারা-২৭  অনুযায়ী শ্রমিক কর্তৃকঃ কোনো স্থায়ী শ্রমিক মালিককে ষাট দিনের লিখিত নোটিশ প্রদান করে তার চাকুরী হতে ইস্তফা দিতে পারবেন। সেক্ষেত্রে, মালিক উক্ত শ্রমিককে ক্ষতিপূরণ হিসাবে তার প্রত্যেক সম্পূর্ণ বৎসরের চাকুরীর জন্য,

(ক) যদি চাকুরীর মেয়াদ পাচঁ (০৫) বৎসর বা তার অধিক কিন্তু দশ (১০) বৎসের কম মেয়াদে অবিছিন্ন ভাবে মালিকের অধিনে চাকুরী করে থাকেন তা হলে চৌদ্দ (১৪) দিনের মজুরী; এবং

(খ) যদি চাকুরীর মেয়াদ দশ (১০) বৎসর বা তা অধিক সময় হয় তা হলে ত্রিশ (৩০) দিনের মজুরী অথবা গ্রাচুইটি (অথার্ৎ কোন শ্র্রমিকের প্রতি পূর্ণ বৎসর চাকুরী অথবা ছয় মাসের অতিরিক্ত সময়ের চাকুরীর জন্য তার সর্বশেষ প্রাপ্ত মজুরী হারে নিরবিচ্ছিন্নভাবে কোনো প্রতিষ্ঠানে কিংবা একই মালিকের যে কোন প্রতিষ্ঠানে অনধিক ০৮ বৎসরের চাকুরীর ক্ষেত্রে তার সর্বশেষ প্রাপ্ত মজুরী হারে ৩০ দিনের মজুরী অথবা ৮ বৎসরের অধিককাল চাকুরীর ক্ষেত্রে তার সর্বশেষ প্রাপ্ত মজুরী হারে ৪৫ দিনের মজুরী যাহা উক্ত শ্রমিককে তার চাকুরীর অবসানে প্রদেয়, ইহা এই আইনের অধীনে শ্রমিকের বিভিন্ন ভাবে চাকুরীর অবসানজনিত কারনে মালিক কর্তৃক প্রদেয় ক্ষতিপূরন বা নোটিশের পরিবর্তে প্রদেয় মজুরী বা ভাতার অতিরিক্ত হইবে) যদি প্রদেয় হয়, যা অধিক হবে প্রদান করবেন।

সরেজমিনে দেখা গেছে, হাতে গোনা তিন/চারটি সিকিউরিটি কোম্পানি ব্যতিত অন্য কোনো কোম্পানি সার্ভিস বেনিফিট প্রদান করে না। 

ভাটার থানায় অবস্থিত একটি সুপ্রতিষ্ঠিত সিকিউরিটি কোম্পানি সার্ভিস বেনিফিট দিতে হবে বলে তারা গার্ডের সাথে প্রতারণা করে তিন/চার বছর পর গার্ডকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করে। পরে পুনরায় ভর্তি করে নতুন ID দেয়। এই কোম্পানিটি একই গার্ডকে তার সার্ভিস জীবনে কয়েকবার এই ঘটনা ঘটায়। যার ফলে সেই গার্ড চাকরি জীবন শেষ করে খালি হাতে বাড়ি ফিরে। এই প্রতারণার সাথে HR ও অপারেশন ডিপার্টমেন্ট ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এই কোম্পানিটি গার্ডদের সাথে অনুরূপ প্রতারণা করে শুধু তাই নয় এরা স্টাফদের সাথেও একই প্রতারণা করে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক অফিসার অভিযোগ করেন, তিনি প্রতি বছর ইনক্রিমেন্ট পেতে পেতে বেতন দাঁড়িয়েছে ৩৯ হাজার টাকা। এখন কর্তৃপক্ষ বলছে এতো টাকা দিয়ে তাকে চাকরিতে রাখবে না। হয় ৩০ হাজার টাকায় চাকরি করো নতুবা পদত্যাগ করো, এই ঘোষণা আসার পর সেই অফিসার বাধ্য হয়ে এখন ৩০ হাজার টাকায় চাকরি করছে। এভাবেই কোম্পানিগুলো এমপ্লয়ীদের সাথে অমানবিক, অবিচার করে আসছে।

 (১৩) বেতনসহ কোনো ছুটি প্রদান না করাঃ

মালিক পক্ষ বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ অনুযায়ী সিকিউরিটি গার্ড বা শ্রমিকদেরকে বেতনসহ নির্ধারিত ছুটিগুলো প্রদান করতে বাধ্য।

(ক) নৈমিত্তিক ছুটিঃ

বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ এর ১১৫ ধারা অনুযায়ী প্রত্যেক শ্রমিক প্রতি পঞ্জিকা বৎসরে পূর্ণ মজুরীতে দশ দিনের নৈমিত্তিক ছুটি পাইবার অধিকারী হবেন।

(খ) অসুস্থতাজনিত ছুটিঃ

বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ এর ১১৬ (১) ধারা অনুযায়ী প্রত্যেক শ্রমিক প্রত্যেক পঞ্জিকা বৎসরে পূর্ণ মজুরীতে চৌদ্দ দিনের পীড়া ছুটি পাইবার অধিকারী হবেন।

(গ) বেতনসহ বাৎসরিক ছুটি প্রদানঃ

বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ এর ১১৭(১) ধারা অনুযায়ী কোনো প্রতিষ্ঠানে কোনো শ্রমিক অবিচ্ছিন্নভাবে এক বৎসর চাকুরী পূর্ণ করেছেন এমন প্রত্যেক প্রাপ্ত বয়স্ক শ্রমিককে পরবর্তী বারো মাস সময়ে তার পূর্ববর্তী বারো মাসের কাজের জন্য প্রতি আঠার দিন কাজের জন্য একদিন ছুটি প্রাপ্য হবে। সেই হিসেবে বছরে বেতনসহ একজন শ্রমিক ২০ দিন ছুটি পাইবার অধিকারী হবে।

(ঘ) উৎসব ছুটিঃ

বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ এর ১১৮(১) ধারা অনুযায়ী প্রত্যেক শ্রমিককে প্রতি পঞ্জিকা বৎসরে এগার দিনের মজুরীসহ উৎসব ছুটি মঞ্জুর করতে হবে।

(ঙ) সাপ্তাহিক ছুটিঃ

বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ এর ১০৩ ধারা অনুযায়ী কোনো প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কোনো শ্রমিক প্রতি সপ্তাহে কারখানা ও শিল্পের ক্ষেত্রে একদিন এবং দোকান ও প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে দেড় দিন ছুটি পাবেন।

শ্রম আইন অনুযায়ী একজন শ্রমিক বা সিকিউরিটি গার্ড উক্ত ছুটিগুলো পাইবার অধিকার রাখে। এবং মালিক পক্ষ দিতে বাধ্য।

সরেজমিনে দেখা গেছে, অধিকাংশ সিকিউরিটি কোম্পানিতে কোনো লিভ পলিসি নেই। লিভ রেকর্ড রেজিস্টার নেই। লিভ ফরম নেই। তাদের ভর্তি ফরমে লেখা থাকে, তিন মাস/ ছয় মাস শৃংখলার সাথে চাকরীর মেয়াদ হলে কোম্পানি নিয়মানুযায়ী যেকোনো গার্ড ছুটি ভোগ করতে পারবে। ফরমে এই শর্ত থাকলেও  অদ্যবধি কোনো গার্ডকে বেতনসহ ছুটি প্রদান করা হয় না। সাপ্তাহিক কোনো ছুটি নেই, বাৎসরিক ছুটি প্রদান করা হয় না, নৈমত্তিক ছুটি নেই, উৎসব কোনো ছুটি নেই। তথা কোনো প্রকার ছুটি প্রদান করা হয়না।  গার্ড তার নিজের প্রয়োজনে ছুটি যায় কিন্তু সেই কয়দিনের বেতন দেয়া হয়না। তেমনি কোনো উৎসবে বেতনসহ ছুটি প্রদান করা হয় না। কমপ্লায়েন্স ফ্যাক্টরিতে গার্ডরা রোটেশন অনুযায়ী সাপ্তাহিক এক দিনের ছুটি ভোগ করে তবুও ক্লায়েন্ট সেই টাকা পে করে বলে। এছাড়া বেতনসহ কাউকে ছুটি দেয়া হয় না। এখানে সকলেই শ্রম আইন লংঘন করে আসছে।

 (১৪) জোড় পূর্বক ওভারটাইম করানো ও নিয়মানুসারে ওভারটাইমের টাকা না দেয়াঃ

যেকোনো প্রতিষ্ঠানে কর্মকর্ততা কর্মচারী বা শ্রমিক কিংবা সিকিউরিটি গার্ড দৈনিক ০৮ ঘন্টার বেশী শ্রম দিবে না। তবে মূল বেতনের দ্বিগুণ হারে ভাতা প্রদান করলে দৈনিক ১০ ঘন্টা পর্যন্ত কাজ করতে পারবে। এর বেশী নয়।

বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ এর ১০০ ধারা অনুযায়ী কোন প্রাপ্তবয়স্ক শ্রমিক কোনো প্রতিষ্ঠানে সাধারণতঃ দৈনিক আট ঘণ্টার অধিক সময় কাজ করবেন না বা তাকে দিয়ে কাজ করানো যাবে না।

তবে শর্ত থাকে যে, ধারা ১০৮ এর বিধান সাপেক্ষে কোন প্রতিষ্ঠানে উক্তরূপ কোনো শ্রমিক দৈনিক দশ ঘণ্টা পর্যন্ত ও কাজ করতে পারবেন।

বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ এর ১০৮(১) ধারা অনুযায়ী, যে ক্ষেত্রে কোনো শ্রমিক কোনো প্রতিষ্ঠানে কোনো দিন বা সপ্তাহে এই আইনের অধীন নির্দিষ্ট সময়ের অতিরিক্ত সময় কাজ করেন, সে ক্ষেত্রে তিনি অধিকাল কাজের জন্য তার মূল মজুরী ও মহার্ঘভাতা এবং এডহক বা অন্তবর্তী মজুরী, যদি থাকে, এর সাধারণ হারের দ্বিগুণ হারে ভাতা পাবেন।

সাপ্তাহিক কর্মঘন্টাঃ

বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ এর ১০২(১) ধারা অনুযায়ী কোনো প্রাপ্তবয়স্ক শ্রমিক কোনো প্রতিষ্ঠানে সাধারণতঃ সপ্তাহে আটচল্লিশ ঘণ্টার অধিক সময় কাজ করবেন না বা তাকে দিয়ে কাজ করানো যাবে না। (২) ধারা ১০৮ এর বিধান সাপেক্ষে, কোনো প্রাপ্তবয়স্ক শ্রমিক কোনো প্রতিষ্ঠানে সপ্তাহে আটচল্লিশ ঘণ্টার অধিক সময়ও কাজ করতে পারবেনঃ

তবে শর্ত থাকে যে, কোনো সপ্তাহে উক্তরূপ কোনো শ্রমিকের মোট কর্ম-সময় ষাট ঘণ্টার অধিক হবে না, এবং কোনো বৎসরে উহা গড়ে প্রতি সপ্তাহে ছাপ্পান্ন ঘণ্টার অধিক হবে না।

ঈগল সিকিউরিটিতে সরেজমিনে দেখা যায়, একজন গার্ড প্রতিদিন ১২ ঘন্টা করে ডিউটি করে। সেই হিসেবে সপ্তাহে ৮৪ ঘন্টা ডিউটি করে যা অমানবিক। মাঝে মধ্যে গার্ডকে দিয়ে ডাবল ডিউটিও করানো হয় তথা একজন গার্ড নিজের ১২ ঘন্টা ডিউটি করার পর আবার ডাবল ১২ ঘন্টা ডিউটি করে আবার নিজের ডিউটিতে ফিরে আসতে আরো ১২ ঘন্টা ডিউটি করতে হয় এভাবে একনাগারে ৩৬ ঘন্টা একজন গার্ড ডিউটি করে অনেকে অসুস্থা হয়ে যায়। আর মজার ব্যাপার হলো, ৮ ঘন্টা ডিউটি করার পর অতিরিক্ত ঘন্টার জন্যে কাউকেই মূল বেতনের দ্বিগুন ভাতা প্রদান করা হয় না। এভাবে শ্রম আইনকে তোয়াক্কা না করে গার্ডদের উপর স্টিম রোলার চালানো হচ্ছে।

(১৫) বেতন বৃদ্ধি বা ইনক্রিমেন্ট না দেয়াঃ

বেসরকারি নিরাপত্তা সেবা বিধিমালা ২০০৭ এর ৬(খ) ধারা অনুযায়ী সিকিউরিটি গার্ডদের বাৎসরিক বেতন বৃদ্ধির কথা বলা হয়েছে। প্রথম সারির কয়েকটি কোম্পানি ব্যতিত অন্য কোনো কোম্পানিতে গার্ডদের বাৎসরিক বেতন বৃদ্ধি করা হয় না। অথচ ভর্তির সময় মিথ্যে শান্ত্বনা দিয়ে বলা হয় বছরে বছরে বেতন বৃদ্ধি হবে। কিন্তু দেখা যায় এক বছর হওয়ার আগেই বিভিন্ন টালবাহানা করে সেই গার্ডকে চাকরিচ্যূত করা হয়ে থাকে।

(১৬) প্রতারণামূলক কর্মকান্ড ও অসহায় গরিব গার্ডদের বেতন মেরে খাওয়াঃ

সিকিউরিটি কোম্পানিতে যেসব লোক চাকরি করতে আসে তারা সকলেই গ্রাম গঞ্জের অসহায় ও গরিব মানুষ। এরা কখনো চাকরি ছেড়ে চলে গেলে তখন সিকিউরিটি কোম্পানিগুলো বেতন না দেয়ার বিভিন্ন পলিসি তৈরী করে। তথা একজন গার্ড ১৫ দিন ডিউটি করে চলে গেলে সেই ১৫ দিনের বেতন এরা প্রদান করে না। এরা নিজেরাই শ্রম আইন মানে না তখন বিভিন্ন আইন বের করে।

(১৭) নতুন ইমপ্লয়িদের সাথে প্রতারণা করা (অফিস স্টাফ):

নাম সর্বস্ব অনেক কোম্পানি আছে যাদের দক্ষ ও অভিজ্ঞ জনবল নেই। তারা অনেক সময়

স্বনামধন্য বিভিন্ন কোম্পানি থেকে দক্ষ ও অভিজ্ঞ লোকদের ডেকে এনে উচ্চ বেতন ও বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা দেয়ার কথা বলে তাদের কোম্পানিতে যোগদান করায়। তারপর অপারেশন পরিচালনার বিভিন্ন  কৌশল/মার্কেটিং এর সকল তথ্য  নিজেরা রপ্ত করে এক দুই মাস পর একটা অজুহাত সৃষ্টি করে বের করে দেয়। এভাবে নাম সর্বস্ব কোম্পানিগুলো মাঝে মধ্যেই বিজ্ঞাপন দিয়ে প্রতারণা করে আসছে।

(১৮) রাজস্ব ফাঁকি দেয়াঃ

উৎসে কর আইন অনুযায়ী প্রতি মাসে  ২৫ লাখের নীচে বেতন হলে ১০% কর ও সাথে এআইটি ১.৫% দিতে হবে আর ২৫ লাখের উর্দ্ধে বেতন হলে ১২% কর ও সাথে এআইটি ২% দিতে হবে। এখানে প্রতি মাসে কতোজন গার্ডের  বেতন হচ্ছে সেই হিসেব করে ঐ উৎসে কর প্রদান করতে হয়। অনেক কোম্পানির মালিক আছেন যারা উৎসে কর সম্পর্কে কিছুই জানেন না। আবার ব্যাংকের মাধ্যমে বেতন না দেয়ায় সরকারও এর হিসেব ধরতে পারছে না। যার ফলে সরকার প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে। হাতে হাতে বেতন দিলেও বেতন শিটে সিকিউরিটি কোম্পানির মালিক ১০ টাকার রাজস্ব টিকিটও লাগায় না। ধানমন্ডি এলাকায় অবস্থিত মোটামুটি নাম করা একটি সিকিউরিটি কোম্পানি আছে যারা প্রতি মাসে প্রত্যেক কর্মকর্তা কর্মচারীদের বেতন থেকে দশ টাকা রাজস্ব টিকিটির কথা বলে কেটে নেয় কিন্তু বেতন ব্যাংকের মাধ্যমে দেয় বলে ঐ দশ টাকার রাজস্ব টিকিট বেতন শিটে আর লাগায় না । ফলে প্রতি মাসে এভাবে প্রায় ষাট থেকে সত্তর হাজার টাকা আত্মসাৎ করে আসছে এবং সরকারও হাজার হাজার টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে। ঐ কোম্পানি একটা উদাহরণ এরকম শত শত কোম্পানি আছে যারা হাতে হাতে টাকা দেয় সরকারি রাজস্ব ফাকি দিয়ে।

(১৯) আগ্নেয়াস্ত্র বহন ও ব্যবহার বিধিবিধানঃ

বেসরকারী নিরাপত্তা সেবা আইন, ২০০৬ এর ১২(১) আইনে উল্লেখ আছে,  এই আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে কোনো ব্যক্তি বা বেসরকারী নিরাপত্তা সেবা প্রতিষ্ঠানকে কোনো আগ্নেয়াস্ত্র, অস্ত্র বা উহাতে ব্যবর্হায গুলি/গোলা ও বারুদের জন্য লাইসেন্স প্রদান করা যাইবে না৷

(২) কোনো বাণিজ্যিক ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের নগদ অর্থ পরিবহন অথবা এ সকল প্রতিষ্ঠানের স্থির দায়িত্ব এর ক্ষেত্রে সংশ্লষ্টি প্রতিষ্ঠানের চাহিদার ভিত্তিতে মহাপরচিালক, আনসার ও ভিডিপি বা তাহার নিকট হইতে ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোনো কর্মকর্তা এই আইনের অধীন প্রণীতব্য বিধি অনুযায়ী সশস্ত্র আনসার নিয়োগ করিতে পারিবেন।

আগ্নেয়াস্ত্র লাইসেন্স প্রদান, নবায়ন ও ব্যবহার নীতিমালা ২০১৬ অনুযায়ী,

(ক) কোনো ব্যক্তি স্বীয় লাইসেন্সে এন্ট্রিকৃত অস্ত্র আত্মরক্ষার নিমিত্ত নিজে বহন/ব্যবহার করতে পারবেন। তবে অন্যের ভীতি উদ্রেক করতে পারে এরুপ অস্ত্র প্রদর্শন করা যাবে না।

(খ) আর্থিক প্রতিষ্ঠান অথবা কোনো প্রতিষ্ঠানের গার্ড ইউনিফরম ছাড়া প্রকাশ্যে আগ্নেয়াস্ত্র প্রদর্শন করতে পারবে না।

(গ) আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্সধারী কোনো ব্যক্তি নিজ ব্যতীত অন্য কোনো ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা বা সম্পত্তি রক্ষার জন্য অস্ত্রধারী প্রহরী হিসেবে নিয়োজিত হতে পারবেন না। সে ক্ষেত্রে  তার অস্ত্রের লাইসেন্স তাৎক্ষনিকভাবে বাতিলযোগ্য হবে।

(ঘ) একইভাবে কোনো আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্সধারী ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গকে অন্য কোনো ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গকে অন্য কোনো ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গের সম্পত্তি রক্ষার জন্য অস্ত্রধারী প্রহরী হিসেবে নিয়োজিত করা যাবে না।

(ঙ) প্রতিষ্ঠানের নামে ইস্যু করা আগ্নেয়াস্ত্র সে প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা ব্যতীত অন্য কোনো উদ্দেশ্যে, প্রতিষ্ঠানের মালিক কিংবা কর্মরত কোনো ব্যক্তির ব্যক্তিগত সম্পত্তি বা ব্যক্তির নিরাপত্তার কাজে ব্যবহার করা যাবে না।

(চ) যে প্রতিষ্ঠানের নামে  আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স ইস্যু করা হবে সে প্রতিষ্ঠান ব্যতীত অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান/অধীনস্থ/সহযোগী প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির নিরাপত্তা কিংবা অন্য কারো স্থাবর এবং অস্থাবর সম্পত্তি রক্ষা করার কাজে উক্ত আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করা যাবে না।

(ছ) আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স প্রাপ্ত কোনো প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম বন্ধ হলে বা বিলুপ্ত হয়ে গেলে প্রতিষ্ঠানটির স্বত্ত্বাধীকারী/নির্বাহী প্রধান নিকটস্থ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বা জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট আগ্নেয়াস্ত্র জমা দিবেন।

(জ) প্রবাসী বাংলাদেশী/বাংলাদেশী দ্বৈত নাগরিককে বিদেশে অবস্থানকালে আবশ্যিকভাবে লাইসেন্সকৃত অস্ত্র সংশ্লিষ্ট থানায় বা সেফ কিপিং লাইসেন্স প্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানে জমা রাখতে হবে।

(ঝ) উপরে বর্ণিত যে কোনো শর্ত ভংগের কারণে লাইসেন্স বাতিলযোগ্য হবে।

সরকার আগ্নেয়াস্ত্র লাইসেন্স প্রদান, নবায়ন ও ব্যবহার নীতিমালা যেভাবে বলে দিয়েছেন সেভাবে কোনো সিকিউরিটি কোম্পানিগুলো চলছে না। তারা আনসারের বদলে আগ্নেয়াস্ত্র লাইসেন্সধারী ব্যক্তিকে মাসিক বেতনে নিয়ে অন্য জায়াগায় নিরাপত্তা দিচ্ছে। আবার  দেখা যায়, একজন অন্য জনের বন্দুক ভাড়া নিয়ে নিরাপত্তা দিচ্ছে। অনেকে অন্য জনের বন্দুক এফিডেভিড করে নেয় । এগুলো সব আইন বিরোধী কাজ। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আসার পর সকলের আগ্নেয়াস্ত্র জমা নিয়ে চেক করতে গিয়ে দেখা যায় অনেকের লাইসেন্স ভুয়া। অথচ এই ভুয়া লাইসেন্স দিয়ে তারা এতো দিন চাকরি করে আসছে। সরকারিভাবে এগুলো দেখভালের কেউ না থাকায় সিকিউরিটি কোম্পানিগুলো সুযোগ পেয়ে তারাও অবৈধভাবে চলছে।

(০) চাকরিচ্যূত করার বিধান না মানাঃ

সিকিউরিটি কোম্পানিতে কর্মরত গার্ডদের ছাটাই, ডিসচার্জ বা অবসান কিংবা টার্মিনেশন ইত্যাদি বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬ এর ধারা ২০, ২১, ২২, ২৩ ও ২৪ মোতাবেক কাউকে চাকরিচ্যূত করা হয়না। গার্ডদের ‍শুধু মৌখিক কথায় কোনো সুযোগ সুবিধা না দিয়েই বিদায় করা হয়। গার্ড ক্ষতিগ্রস্ত হলে কোথায় এর প্রতিকার পাবে সে সম্পর্কে এরা কিছুই জানে না। তাছাড়া এদেরকে নিয়োগ পত্র না দেয়ায় সঠিক প্রতিকারও পায় না। এভাবে সহজ সরল অসহায় গরিব লোকগুলো চোখের জলে বুক ভাসিয়ে বাড়ি চলে যায়।

(২১) গার্ড অনুপস্থিত থাকলে  নোটিশ না করাঃ

বাংলাদেশ শ্রম আইন ৬, ২৭ (৩ক) কোনো শ্রমিক বিনা নোটিশে অথবা বিনা অনুমতিতে ১০ দিনের অধিক কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকিলে মালিক উক্ত শ্রমিককে ১০ দিনের সময় প্রদান করিয়া এই সম্পর্কে ব্যাখ্যা প্রদান করিতে এবং চাকুরীতে পুনরায় যোগদানের জন্য নোটিশ প্রদান করিবেন এবং এইরূপ ক্ষেত্রে উক্ত শ্রমিক নির্ধারিত সময়ের মধ্যে লিখিত ব্যাখ্যা প্রদান বা চাকুরীতে যোগদান না করিলে সংশ্লিষ্ট শ্রমিককে তাহার আত্নপক্ষ সমর্থনের জন্য আরো ৭দিন সময় প্রদান করিবেন। তাহাতেও যদি সংশ্লিষ্ট শ্রমিক চাকুরীতে যোগদান অথবা আত্নপক্ষ সমর্থন না করেন তবে, উক্ত শ্রমিক অনুপস্থিতির দিন হইতে চাকুরী হইতে অব্যহতি গ্রহণ করিয়াছেন বলিয়া গণ্য হইবেন।

গার্ড অনুপস্থিত থাকলে বাংলাদেশ শ্রম আইন ৬, ২৭ (৩ক) অনুযায়ী কয়েকটি সিকিউরিটি কোম্পানি ব্যতিত বাকি হাজার হাজার কোম্পানি উক্ত আইন অনুযায়ী কেউ নোটিশ করে না। তারাভাবে কেউ চলে গেলে সেই কয়েকদিনের বেতন কোম্পানির থেকে যায় বা সেই এলাকার অপারেশন অফিসার আরেকজন ভর্তি করে তার নামে অনুপস্থিত গার্ডটির ডিউটিগুলো টাইম শিটে তুলে দিয়ে আত্মসাৎ করে থাকে।

(২২) চাকরি থেকে চলে গেলে বকেয়া বেতন প্রদান না করাঃ

অনেক সিকিউরিটি গার্ড বাড়ির বিশেষ প্রয়োজনে ছুটি চাইলে দেয়া হয় না। অনেকে চলে গেলেও ফিরে এসে দেখে তার স্থলে অন্য কেউ ডিউটি করছে। তাকে হয়তো কম বেতনের পোস্টে দেয়া হয়। তথা কেউ চলে গেলে তার সেই কয়দিনের বেতন দেয়া হয় না। অনেকে বেতনের পরই চলে যায় তাকেও সেই কয়দিনের বেতন দেয়া হয়না।

(৩) ডাক্তারী পরীক্ষা না করেই নিয়োগ প্রদানঃ

বাংলাদেশ শ্রম বিধিমালা, ২০১৫ অনুযায়ী, রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের প্রদান করা প্রত্যয়ন অনুযায়ী গার্ডদের চাকরিতে নিয়োগ দিতে হয়। দুই/তিনটি কোম্পানি ব্যতীত অন্য কোনো কোম্পানিতে বয়স নিরুপন ও শারীরিক সক্ষমতা যাচাই করার কোনো ডাক্তার নেই। যাদের কমপ্লায়েন্স ফ্যাক্টরি আছে সেখানে ঐ দুইটি প্রত্যায়ন পত্র দেখাতে হয়। যেহেতু ডাক্তার নেই তাই এইচআর ডিপার্টমেন্ট নিজেই ডাক্তার সেজে নকল সাইন দিয়ে প্রত্যায়ন পত্র তৈরী করে তাদেরকে দিয়ে থাকে। এখানে পুরোটাই হযবরল। এসব বিষয়ে ক্লায়েন্ট এর দিক থেকে বা বহিরাগত অডিট কোনো যাচাই বাছাই করে না বলে সিকিউরিটি কোম্পানিগুলো সেই সুযোগটা নিয়ে থাকে।

(৪) মাতৃত্বকালীন ছুটি প্রদান না করাঃ

বাংলাদেশ সার্ভিস রুলস বিধি ১৯৭ তে মাতৃত্বকালিন ছুটি সম্পর্কে বিস্তারিত বলা হয়েছে। যদিও পরবর্তীতে এ ছুটি একাধারে ৬ মাস পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়েছে। আবার নতুন যোগদানকারীদের ক্ষেত্রে শিশুর জন্মের পরও এ ছুটি নেয়ার বিধান রাখা হয়েছে। আসুন বিএসআর মূল বিধিতে প্রসূতিকালীন ছুটি সম্পর্কে কি বিধান রয়েছে তা জেনে নিই।

মূল বিধি Rule-197.-(1) Where a female Government servant applies for maternity leave, the authority mentioned in rule 149 or, as the case may be, rule 150 shall grant such leave for a period of four months from the date of commencement of the leave or her confinement for the purpose of delivery, whichever is carliar.

(1A) Maternity leave under this rule shall not be admissible more than twice during the tenure of service of a female Government servant.

(IB) The maternity leave granted under this rule shall not be debited against the leave account of the female Government servant and she shall be entitled to receive full pay for the leave period at the rate she was drawing at the time of taking such leave.

বঙ্গানুবাদ

বিশ্লেষণঃ (৩) এই প্রকার ছুটি ছুটি হিসাব” এর জমা ছুটি হইতে বাদ যায় না। এবং ছুটির প্রাপ্যতা নির্ণয়ের ক্ষেত্রে এই প্রকার ছুটি কর্মকাল হিসাবে গণ্য হয়।

বিধি-১৯৭। (১) কোন মহিলা কর্মচারী প্রসূতি ছুটির জন্য আবেদন করিলে, প্রযােজ্য ক্ষেত্রে, বিধি ১৪৯ অথবা বিধি-১৫০ তে বর্ণিত কর্তৃপক্ষ ছুটি আরম্ভের তারিখ অথবা সন্তান প্রসবের উদ্দেশ্যে আতুর ঘরে আবদ্ধ হওয়ার তারিখ, ইহার মধ্যে যাহা পূর্বে ঘটিবে, ঐ তারিখ হইতে ৬ (ছয়) মাসের ছুটি মঞ্জুর করিবেন।

(১এ) এই বিধির অধীনে প্রসূতি ছুটি একজন মহিলা কর্মচারী সমগ্র চাকরিজীবনে ২ (দুই) বারের অধিক পাইবেন না।

(১বি) এই বিধির অধীন মহ্রকৃত প্রসূতি ছুটি মহিলা কর্মচারীর “ছুটি হিসাব” এ জমাকৃত ছুটি হইতে বাদ যাইবে না এবং ছুটিতে যাওয়ার প্রাক্কালে উত্তোলিত বেতনের হারে পূর্ণ বেতন পাইবেন।

(২) মেডিকেল সার্টিফিকেট সহকারে আবেদন করা হইলে বিধি ১৮৪ এর (বি) অনুচ্ছেদে বর্ণিত সীমা সাপেক্ষে গড় বেতনে ছুটিসহ অন্য যে কোন প্রকার ছুটি প্রসূতি ছুটির সহিত সংযুক্তভাবে প্রদান করা যাইবে। নােটঃ বিলুপ্ত। (এস, আর, ও নং ৮৪/নথি নং ০৭.০০.০০০০.১৭১.০৮. ০০১,১২/ আইন/২০১২, তারিখঃ ১ এপ্রিল, ২০১২।

কোনো সিকিউরিটি কোম্পানি বেতনসহ কোনো লেডি গার্ডকে মাতৃত্বকালীন ছয় মাসের  ছুটি দিয়েছে এমন কোনো প্রমাণ নেই। দেখা যায় মাতৃত্বকালীন ছুটি নিলে ফিরে এসে দেখে তার চাকরি  নেই।

(৫) চাকরি করতে এসে লেডি গার্ড যৌন হেনস্থার শিকারঃ

সিকিউরিটি কোম্পানিতে যেসব মেয়েরা  চাকরি করতে আসে তাদের অধিকাংশ মেয়েরা স্বামী পরিত্যাক্তা, না হয় বিধাবা, না হয় প্রেমে ছ্যাকা খাওয়া অথবা অর্থনৈতিকভাবে অসহায় গরিব। এইসব মেয়েদের অনেকেই দেখতে খুব সুন্দরী। কিন্তু দেখা যাচ্ছে তাদের অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে কোম্পানির মালিক অথবা কোনো ডাইরেক্টর বা ম্যানেজার তাদের প্রতি কুদৃষ্টি দিয়ে বেশি বেতনের প্রলোভন দেখিয়ে বা ভালো আরও সুযোগ সুবিধথা দেয়ার কথা বলে সতীত্ব নষ্ট করছে। এসব কোম্পানিতে মেয়েরা সম্পূর্ণ অসহায়। একদিকে কোম্পানির ম্যানেজমেন্টকে সন্তুষ্ট রাখতে হয় অন্য দিকে গ্রাহকের চাহিদাও পূরণ করতে হয়। অনেকে নিজের মান সম্মান বজায় রাখতে চাকরি ছেড়ে চলে যায়। কাউকে জোড়পূর্বক ধর্ষণ করলে বা বিশেষ কৌশলে দৈহিক সম্পর্ক গড়ে তুলতে বাধ্য করলে অসহায় মেয়েরা কার নিকট বিচার দিবে সে জায়গা খুজে পায় না। ঢাকাস্থ বিশেষ একটি সিকিউৃরিটি কোম্পানির মালিক যার প্রথম উদ্দেশ্য ছিলো একটি কোম্পানি গড়ে তুলে  মেয়েদেরকে চাকরি দিয়ে তাদেরকে ইচ্ছেমতো ব্যবহার করবে এবং তিনি সেকাজে একশত ভাগ সাকসেসফুল। তিনি প্লান করে সেই রকম একটি অফিস নিয়েছেন যেখানে সেই মালিকের নিকট যেতে পাচটি গেট ডিঙিয়ে যেতে হয়। তার আশেপাশে সব সময় সাত/আট জন সুন্দরী মেয়ে থাকে। যেদিন যাকে টার্গেট করবে তাকে বিকেলে বেশি কাজ দিয়ে ব্যস্ত রাখে। এভাবে অফিস ছুটি হলেও ঐ মেয়ে কাজের চাপে আটকা পড়ে যায়। এরপর নিরব নিস্তব্ধ অফিসে মালিক ইচ্ছেমতো তার চাহিদা পূরণ করে। শুধু তাই না এই অফিস ছাড়াও মেয়েদেরকে  ব্যবহার করার জন্য অন্যত্র আলাদা একটি অফিস নেয়া আছে। যেদিন অফিসে লোক জনের ভীড় থাকে সেদিন যেকোনা একটাকে বাছাই করে অফিসের কাজ করার কথা বলে সেখানে নিয়ে মনের সুখ মিটায়। নতুন কাউকে চাকরি দিলে সে টেকসই হবে কিনা তাকে পরীক্ষা করার জন্য  সাইট ভিজিট করার কথা বলে কখনো কক্সবাজার আবার কখনো কুয়াকাট উড়াল দেয়। হোটেলে ওঠার পর চাহিদা মিটাতে তার উপর ঝাপিয়ে পড়ে, এতে মেয়েটির সম্মতি থাকলে তার প্রমোশন হয় আর জোড়াজুড়ি করে কাজ করতে না দিলে মালিক  রাগান্বিত হয়ে অফিসে ফিরে একটা বাহানা বের করে চাকরিচ্যূত করে  থাকে। এভাবে হাজার হাজার মেয়ের সর্বনাশ করে আসছে সেই সিকিউরিটি কোম্পানির মালিক। এরকম আরও অনেক আছে।

(৬) NOC প্রদান না করাঃ

বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ এর ধারা (৩১) অনুযায়ী সাময়িক ও বদলী শ্রমিক ব্যতীত, অন্য কোন শ্রমিক তাহার ছাঁটাই, ডিসচার্জ, বরখাস্ত, অপসারণ, অবসর গ্রহণ বা চাকুরীর অবসানের সময় মালিকের নিকট হইতে চাকুরী সংক্রান্ত একটি প্রত্যয়নপত্র পাইবার অধিকারী হইবেন৷

বাংলাদেশ শ্রম বিধিমালা ২০১৫ এর ধারা (৩১) মোতাবেক চাকরি অবসান বা সমাপ্তির ক্ষেত্রে শ্রমিকের আবেদনের ১৫(পনের) দিনের মধ্যে তাহাকে ফরম-১৩ অনুযায়ী প্রত্যয়নপত্র প্রদান করিতে হইবে।

কিন্তু দেখা যায়, সিকিউরিটি কোম্পানিতে যেসব গার্ড  চাকরি করে তাদের কাউকে এ পর্যন্ত চাকুরী সংক্রান্ত প্রত্যয়নপত্র দিয়েছে এমন কোনো প্রমান নেই। এমনকি অফিস স্টাফদেরও এই প্রত্যায়নপত্র দিতে চায় না। অনেকে এইচআর এর সাথে ভাইবন্দী করে এই প্রত্যায়ন পত্র নিয়ে থাকে। 

(২৭) ক্ষতিপূরণ না দেয়া: 


সিকিউরিটি কোম্পানিগুলো দেখভালের জন্য নেই কোনো সরকারি মনিটরিং

বাংলাদেশে প্রায় আটশত সিকিউরিটি কোম্পানি সচল আছে। সরেজমিনে দেখা গেছে এইসব কোম্পানির ৯৫% মালিক বা ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি আইন ১৯৯৪, বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ ও বিধিমালা ২০১৫ এবং বেসরকারি নিরাপত্তা সেবা আইন ২০০৬ ও বিধিমালা ২০০৭ সম্পর্কে কিছুই জানে না। বাংলাদেশের প্রথম সারির কয়েকটি কোম্পানি ব্যতীত বেসরকারি নিরাপত্তা সেবা আইন ২০০৬ ও বিধিমালা ২০০৭ নামক এই বই দুইটি অন্য কোনো কোম্পানিতে নেই। অধিকাংশ কোম্পানির মালিক সরকারি কোনো আইনকানুন মানে না, নিজের মনগড়া মতো কোম্পানিগুলো চালাচ্ছে। সিকিউরিটি কোম্পানিগুলোর যেসব সমস্যা তা আলোচনা করা হয়েছে। এইসব কোম্পানি কীভাবে চলছে বা কীভাবে প্রতারণা করছে কিংবা সরকারি ভ্যাট ট্যাক্স সঠিকভাবে দিচ্ছে কিনা তা দেখভালের জন্য সরকারি কোনো লোক নেই। কেউ সমস্যায় পড়ে থানায় গেলে সেই সময় কোনো পুলিশ এলে তার পকেট ভারি করলেই সব ঠান্ডা। কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তরের কাউকে কোনোদিন ভিজিট করতে দেখা যায় না। অনেক সময় বড় কোম্পানিগুলোতে রাজস্ব বিভাগ থেকে লোক আসে শুধু তাদের ভ্যাট ট্যাক্স নিয়ে কথা বলতে। শ্রমিকদের বিষয়ে কেউ খোজ খবর রাখে না।

কোম্পানি ভিজিটের সময় ক্লায়েন্টদের করণীয়

মাল্টিন্যাশনাল  বা বড় ধরণের কোনো কোম্পানি গার্ডিং সার্ভিস নেয়ার পূর্বে সেবা প্রদানকারী সিকিউরিটি কোম্পানি ভিজিট করে থাকে। তারা তাদের ফরমেট অনুযায়ী কিছু কিছু বিষয় যাচাই বাছাই করে। কিন্তু কেউই কোম্পানি আইন ১৯৯৪, বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ ও বিধিমালা ২০১৫ এবং বেসরকারি নিরাপত্তা সেবা আইন ২০০৬ ও বিধিমালা ২০০৭ অনুযায়ী সিকিউরিটি কোম্পানিটি চলছে কিনা এবং আইন অনুসারে গার্ডদের সুযোগ সুবিধা বা বেতন ভাতা সঠিক সময়ে সঠিকভাবে দিচ্ছে কিনা তার কোনো খোজ খবর নেয় না। টনক নড়ে তখনই যখন পোস্ট থেকে ব্যাপকহারে গার্ড চলে যায়, সেবার মান খারাপ হতে থাকে। এজন্যে গার্ড নেয়ার পূর্বে যে বিষয়গুলো দেখা প্রয়োজন,

(ক) গার্ড ভর্তি ফরম পূর্বের ও বর্তমানের  চেক করে দেখতে হবে আইন বহির্ভুত কোনো শর্ত জুড়ে দিয়েছে কিনা? জামানত (যা ফেরত যোগ্য ) ব্যতীত  ভর্তিবাবদ অন্য কোনো টাকা নেয় কিনা? ছুটি ও কর্ম ঘন্টা উল্লেখ আছে কিনা? বেতনসহ ছুটি প্রদান করে কিনা? ছুটি রেকর্ড ফাইল চেক করতে হবে। অনগ্রাউন্ডে গার্ডদের চেক করতে হবে।

(খ) ট্রেনিং করানো হয় কিনা? সেটা কতো দিনের? ট্রেনিং প্রোগ্রাম আছে কিনা? ট্রেনিং মডিউল বই আছে কিনা? আপনার ফ্যাক্টরির চাহিদা মোতাবেক ট্রেনিং দেয় কিনা? ট্রেনিং ইনস্ট্রাক্টর আছে কিনা? কতো জন? চেক করতে হবে। ট্রেনিং গ্রাউন্ড আছে কিনা? ট্রেনিং রুম আছে কিনা? সেটা আদৌ ট্রেনিং রুম কিনা? চেক করতে হবে। গার্ডের ব্যারাক আছে কিনা? সেটা স্বাস্থ্য সম্মত কিনা? পাসিং আউট সিস্টেমটা কি? ট্রেনিং এর পর কিভাবে মূল্যায়ণ করা হয় পূর্বের সহ চেক করতে হবে।

(গ) বেতনভাতা সঠিক সময়ে দেয় কিনা? বেতন থেকে টাকা কর্তন করে কিনা?

(ঘ) ভ্যাট ট্যাক্স, আয়কর সহ অন্যান্য ট্যাক্স দেয় কিনা চেক করতে হবে।

(ঙ) কতোগুলো জনবল আছে বেতন রেজিস্টারসহ চেক করতে হবে। কতোগুলো পোস্ট আছে সেগুলোতে সেবার মান কেমন যাচাই করতে হবে।

(চ) সরকারি যেসব ডকুমেন্টস থাকার কথা সেগুলো আপডেট আছে কিনা যাচাই করা।

(ছ) একটা অফিস কাঠামো অনুযায়ী সেকশন অনুসারে পর্যাপ্ত অফিস স্টাফ আছে কিনা যাচাই করা।

(জ) অফিস স্টাফদের সিকিউরিটি সম্পর্কে পর্যাপ্ত জ্ঞান, দক্ষতা, অভিজ্ঞতা ও শিক্ষাগত যোগ্যতা আছে কিনা তা যাচাই করা।

(ঝ) এছাড়া ক্লায়েন্ট এর অন্যান্য পয়েন্ট অনুসারে যেসব যাচাই করার কথা তা পূংখানুরুপে যাচাই করা।

অধিকাংশ ক্লায়েন্ট উৎকোচ গ্রহণের মাধ্যমে চুক্তি বদ্ধ হওয়া

গ্রাহক ও সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান চুক্তিবদ্ধ হওয়ার পূর্বে ক্লায়েন্ট সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান ভিজিট করে সব কিছূ যাচাই করে দেখার কথা কিন্তু অধিকাংশ গ্রাহক সেই ভিজিট করে না। বর্তমান সময়ে পোস্ট কেনা বেচা করা হয়। গ্রাহকের এডমিন বা এইচআর কোনো কোম্পানিকে ডেকে নিয়ে তার সাথে এককালীন বা মাসিক উৎকোচ গ্রহনের চুক্তিতে আবদ্ধ হয়। যার ফলে গ্রাহকের পক্ষ থেকে সিকিউরিটি কোম্পানির অফিস ভিজিট করার প্রয়োজন হয় না। উৎকোচ দিয়ে পোস্ট নেয়ার প্রবনতা এখন প্রায় ছোট বড় সকল সিকিউরিটি কোম্পানিই জড়িত। উৎকোচ প্রদানের কারণে গার্ডিং সার্ভিস ভালো হয় না।

অধিকাংশ সিকিউরিটি কোম্পানিগুলোর প্রতারণা ও তাদের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ

ব্যাঙয়ের ছাতার মতো গড়ে ওঠা নামসর্বস্ব অধিকাংশ সিকিউরিটি কোম্পানিগুলো চাকরি দেয়ার নাম করে মোটা অংকের টাকা নিয়ে প্রতারণা করে আসছে। এইসব সিকিউরিটি কোম্পানিগুলোর নিজেস্ব কোনো পোস্ট নেই। এরা বিভিন্ন চাটকদার বিজ্ঞাপন দিয়ে বেশি বেতন দেয়ার কথা বলে গ্রামাঞ্চলের সহজ সরল ছেলেদেরকে ডেকে এনে মোটা অংকের টাকা নিয়ে অন্য কোম্পানিতে বিক্রি করে দয়। এইসব দালাল কোম্পানিগুলো থেকে গার্ড নেয়ার জন্য পূর্ব থেকেই বড় কোম্পানিগুলো যোগাযোগ রাখে। দালাল কোম্পানিগুলোর  আবার জেলা বা বিভাগ ভিত্তিক এজেন্ট আছে যারা লোক সংগ্রহ করে ঢাকায় প্রেরণ করে থাকে। অথচ বেসরকারী নিরাপত্তা সেবা আইন, ২০০৬, ৮(১) অনুযায়ী কোনো ব্যক্তি তাহার লাইসেন্সের অধীন প্রদেয় নিরাপত্তা সেবা প্রদানের জন্য অন্য কোন ব্যক্তিকে এজন্টে হিসেবে নিয়োগ করিতে পারিবে না।

বাংলাদেশে এরকম কয়েকশত দালাল কোম্পানি আছে। যারা সরাসরি প্রতারণার সাথে জড়িত।

বিগত ৫ নভেম্বর ২০২০ বৃহস্পতিবার রাতে র‌্যাব-১১ এর একটি দল গুলশান থানাধীন শাহাজাদপুর এলাকায় ‘সূর্যবিডি সিকিউরিটি সার্ভিস লিমিটেড” অফিসে অভিযান চালিয়ে চাকরি দেওয়ার নামে প্রতারণার অভিযোগে ‘প্রতারক চক্রের” দুই সক্রিয় সদস্যকে আটক করেছে।

এই সংঘবদ্ধ ‘প্রতারক চক্র’ দীর্ঘদিন ধরে পত্রিকা, লিফলেট ও অনলাইনে লোভনীয় বেতনে চাকরির বিজ্ঞাপন দিয়ে প্রতারণা করে আসছে।

আটকদের জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে আরও বলা হয়, প্রতারক চক্রের হোতা হলেন নিরঞ্জন সরকার এবং তিনি কথিত সূর্যবিডি সিকিউরিটি সার্ভিস লি. কোম্পানির এমডি। তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চাকরির বিজ্ঞাপন দিয়ে বেকার তরুণ-তরুণীদের আকৃষ্ট করেন।

এখানে উদাহরণ স্বরুপ একটি মাত্র ঘটনা উল্লেখ করা হলো। এরকম শত শত ঘটনা আছে।                      সিকিউরিটি গার্ডদের কোনো সমিতি বা সংগঠন না থাকা

বাংলাদেশের  প্রতিটি সেক্টরে কর্মকর্তা কর্মচারী ও শ্রমিকদের সংগঠন বা সমিতি থাকলেও এই একটি মাত্র সম্ভাবনাময় খাত যেখানে সিকিউরিটি গার্ডদের কোনো সংগঠন বা সমিতি নেই। সিকিউরিটি গার্ডদের সংগঠন বা সমিতি না থাকায় মালিক পক্ষ তাদের সুবিধার্তে যখন তখন মৌখিকভাবে আইন বানায় আর বদলায়। দুই তিনটি কোম্পানি ব্যতীত অন্য কোনো কোম্পানিতে আপডেট সার্ভিস রুলস প্রনয়ণ নেই। আবার থাকলেও সেই অনুসারে কেউ চলে না। যেহেতু এইসব কোম্পানি সরকারিভাবে দেখভালের কেউ নেই তাই অসহায় গরিব লোকদের যে  যেভাবে পারে সেভাবেই মালিক পক্ষ রক্ত চুষে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়ে যাচ্ছে। আবার এইসব কোম্পানিতে যে বেশি চালাক তাকে মিথ্যে অযুহাতে চাকরি থেকে বাদ দিয়ে থাকে। মালিক পক্ষের চোখ রাঙানী দেখে কোনো গার্ডের সাহস হয় না তারা একত্রিত হয়ে প্রতিবাদ করবে বা কোনো একটি সংগঠন করবে। শ্রম আইন অনুসারে সিকিউরিটি গার্ডদের একটা সংগঠন থাকা আবশ্যক।  সিকিউরেক্স প্রাঃ লিঃ এ এরকম একটা সংগঠন ছিলো । সেই সংগঠনের সভাপতি ও সেক্রেটারী চাকরি ছেড়ে চলে গেলে পরবর্তীতে সেই সংগঠনের হাল ধরার মতো কেউ না থাকায় সংগঠনটি  নষ্ট হয়ে যায়।

বর্তমানে গার্ড সংকটে ভুগছে কোম্পানিগুলো

উনিশশত আটাশি সালে সিকিউরেক্স প্রাঃ লিঃ প্রথম প্রতিষ্ঠিত হয়। এই কোম্পানিটি এক সময় বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় ক্যাম্পেইন করে গার্ড সংগ্রহ করতো। উপস্থিত হাজার হাজার লোকদের মধ্য থেকে তারা যোগ্যতা সম্পন্ন লোক সংগ্রহ করে ঢাকায় নিয়ে আসতো। এখন সেই দিন আর নেই। ব্যাঙয়ের ছাতার মতো হাজার হাজার সিকিউরিটি কোম্পানি গড়ে ওঠায় আর সেই সব কোম্পানিতে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের সহজ সরল লোকগুলো চাকরি করতে এসে প্রতারিত হওয়ায় আর এই খবর প্রতিটি গ্রামে ছড়িয়ে পড়ায় লোকজন সিকিউরিটি কোম্পানিকে আর কেউ বিশ্বাস করতে পারছে না। একদিকে দ্রব্য মূল্যের উর্দ্ধগতি অন্য দিকে স্বল্প বেতনে কেউ চাকরি করতে চায় না। অধিকাংশ কোম্পানি পনেরো তারিখের পর আবার অনেকে বিশ তারিখেরে পর বেতন দেয়া শুরু করে । অনেক কোম্পানি এক মাসের বেতন হাতে রেখে পরের মাসে বেতন দেয়্। এদিকে বাসা ভাড়া, বাকির দোকান ও বাড়ির সমস্য সমাধান করতে না পারায় বেশিরভাগ গার্ড বেতন পেয়েই চলে যায়। বাকি দিনগুলোর বেতন সেইসব কোম্পানিগুলো আর  পরিশোধ করে না। তবে এটা আবার সেইসব কোম্পানিগুলোর আয়ের একটা উৎস। দেখা যায়, রাগান্বিত হয়ে যেসব গার্ড চলে যায় তাদেরই কয়েক লক্ষ টাকা কোম্পানির থেকে যায়। এছাড়া ফ্যাক্টরিগুলোতে শ্রমিকদের বেতন ভাতা বাড়ানোর কারণে সবাই ফ্যাক্টরির দিকে ঝুকে পড়ছে। প্রতারিত হওয়া ও দ্রব্য মূল্যের উর্দ্ধগতির সাথে সামঞ্জস্য রেখে সিকিউরিটি কোম্পানিগুলো বেতন প্রদান না করায় বর্তমানে গার্ড সংকটে ভুগছে সিকিউরিটি কোম্পানিগুলো।  তবে প্রথম সারির কিছু কোম্পানি সরকারি নিয়ম নীতির মাধ্যমে গার্ডদের মূল্যায়ণ করছে বলে সেগুলো এখনো মাথা উচু করে দাড়িয়ে আছে। বর্তমানে দালাল আর টাকার বিনিময়ে অনেক কোম্পানি গার্ড সংগ্রহ করে থাকে। কিন্তু টাকায় কেনা এই গার্ডগুলো বেশি দিন চাকরি করে না।

সিকিউরিটি কোম্পানিগুলো বেকারত্ব দূরীকরণে সম্ভাবনাময় একটি প্লাট ফরম

বিগত ০৬ মে ২০২৪ তারিখে প্রথম আলো পত্রিকায় প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী দেশে বেকারের সংখ্যা ২৫ লাখ ৯০ হাজার, বেড়েছে পুরুষ বেকার। ২০২৩ সাল শেষে গড় বেকারের সংখ্যা ছিল ২৪ লাখ ৭০ হাজার। এর মানে গত বছরের তুলনায় এখন দেশে বেকারের সংখ্যা বেশি।

বিবিএসের হিসাব অনুসারে, ২০২৩ সালের প্রথম প্রান্তিকেও ২৫ লাখ ৯০ হাজার বেকার ছিল। সেই হিসাবে চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে বেকারের সংখ্যা বাড়েনি। বর্তমানে বেকারের হার ৩ দশমিক ৫১ শতাংশ, যা ২০২৩ সালের গড় বেকারের হারের চেয়ে কিছুটা বেশি। ২০২৩ সালের গড় বেকারের হার ছিল ৩ দশমিক ৩৬ শতাংশ।

এদিকে পুরুষ বেকারের সংখ্যা বেড়েছে, নারী বেকার কমেছে। বিবিএস হিসাব অনুসারে, গত মার্চ মাস শেষে পুরুষ বেকারের সংখ্যা ছিল ১৭ লাখ ৪০ হাজার। ২০২৩ সালের প্রথম প্রান্তিকে (মার্চ-জানুয়ারি) সময়ে এই সংখ্যা ছিল ১৭ লাখ ১০ হাজার। অন্যদিকে গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৩০ হাজার নারী বেকার কমেছে। এখন নারী বেকারের সংখ্যা ৮ লাখ ৫০ হাজার।

বিবিএস বলছে, শ্রমশক্তিতে এখন ৭ কোটি ৩৭ লাখ ৫০ হাজার নারী-পুরুষ আছেন। তাঁদের মধ্যে ৭ কোটি ১১ লাখ ৬০ হাজার লোক কর্মে নিয়োজিত। বাকিরা বেকার।

এ ছাড়া শ্রমশক্তির বাইরে বিশাল জনগোষ্ঠী আছে। তারা কর্মে নিয়োজিত নয়, আবার বেকার হিসেবেও বিবেচিত নয়। এমন জনগোষ্ঠীর সংখ্যা প্রায় ৪ কোটি ৮২ লাখ ৬০ হাজার। তাঁরা মূলত সাধারণ ছাত্র, অসুস্থ ব্যক্তি, বয়স্ক নারী-পুরুষ, কাজ করতে অক্ষম ব্যক্তি, অবসরপ্রাপ্ত ব্যক্তি এবং কর্মে নিয়োজিত নন বা নিয়োজিত হতে অনিচ্ছুক গৃহিণী।

আরেক হিসেব মতে প্রতি বছর ছয় লক্ষ শিক্ষিত বেকার বের হয়। এতো বিশাল সংখ্যক বেকারের বেকারত্ব দূরীকরণে সরকারের তেমন কোনো খাত নেই। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো ‍যদি না থাকতো তাহলে কী হতো একবার ভেবে দেখুন।

বাংলাদেশে আটশত এর অধিক সিকিউরিটি কোম্পানি আছে যেখানে প্রায় তিন লক্ষ লোক চাকরি করে তারা জীবিকা নির্বাহ করছে। অধিকাংশ কোম্পানিগুলো আইন কানুন মেনে না চললেও এইসব কোম্পানি বেকারত্ব দূরীকরণে বিশেষ ভূমিকা পালন করছে। এখানে চাকরি করতে তেমন শিক্ষাগত যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা লাগে না। একটা ভোটার আইডি কার্ড, একটা শিক্ষাগত যোগ্যতার সার্টফিকেট  (যদিও বেসরকারি নিরাপত্তা সেবা বিধিমালা  দুই হাজার সাত  এর আট/এক এ বলা হয়েছে , বেসরকারি সেবা প্রতিষ্ঠানে নিরাপত্তা প্রহরী নিয়োগের ক্ষেত্রে আবেদনকারীর শিক্ষাগত যোগ্যতা  ন্যূনতম নবম শ্রেণি – শিক্ষা বোর্ডের রেজিস্ট্রেশন সনদসহ  হতে হবে। কিন্তু এই বিধি কেউ মেনে চলছে না। দেখা যায়, সর্বত্র ইট পাশ আবার কেউ পঞ্চম শ্রেণি পাশও নেয়, ক্ষেত্র বিশেষে এসএসসি পাশ নেয়।), আর একটা নাগরিকত্ব সনদ হলেই তার চাকরি হয়ে যায়। ক্লায়েন্টের চাহিদা মোতাবেক বয়স ও উচ্চতা একটা ফ্যাক্ট থেকে যায়। এছাড়া কম উচচতা ও বয়স্ক সবই চলে। এক কথায় বলতে গেলে যেমন তেমন লোক হলেই এসব কোম্পানিতে চাকরি হয়ে যায়।

যেহেতু সিকিউরিটি কোম্পানিগুলো বেকারত্ব দূরীকরণে একটা মূখ্য ভূমিকা পালন করছে তাই সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলছি, সম্ভাবনাময় এই খাতের দিকে একটু নজর দিন। সরকারি আইনগুলো মেনে চলতে বাধ্য করার মধ্য দিয়ে কোম্পানিগুলোকে সচল রাখা সম্ভব। এজন্যে চাই নিয়মিত সরকারি মনিটরিং ব্যবস্থা। যারা আইন কানুন মেনে চলে না, প্রতারণা করা যাদের স্বভাব তাদেরকে শাস্তি ও লাইসেন্স বাতিল করার মাধ্যমে অন্যদেরকে স্বচ্ছতায় আনতে পারলে এই খাতটি বেকারত্ব দূরীকরণে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ ভুমিকা রাখবে বলে আশা করা যায়।

বাংলাদেশে যতগুলো সিকিউরিটি কোম্পানি আছে তার মধ্যে, Securex Private Ltd. AB Securitas Bangladesh Limited, G4s, Elite Force, Aiegis, Millenium Certis অন্যতম। 


Written By

Md. Izabul Alam

Consultant & Specialist (Security, Training & Investigation)

And

Editor 

BDC CRIME NEWS24

01716508708

izabulalam@gmail.com

No comments:

Post a Comment

বেআইনীভাবে চলছে সিকিউরিটি কোম্পানিগুলো-দেখার কেউ নেই। (BDC CRIME NEWS24)

BDC CRIME NEWS24 বেআইনীভাবে চলছে সিকিউরিটি কোম্পানিগুলো-দেখার কেউ নেই বাংলাদেশে ট্রেড লাইসেন্সধারী সিকিউরিটি কোম্পানির সংখ্যা প্রায় ১০ হা...