অগ্নি নিরাপত্তা প্রশিক্ষণ গাইড
(FIRE
SAFETY TRAINING GUIDE)
অগ্নি ও অগ্নি নিরাপত্তা এবং অগ্নি নির্বাপন যন্ত্রের ব্যবহার
(অগ্নি সম্পর্কে সচেতন হলে কখনই আগুন লাগবে না)
ভুমিকাঃ
অগ্নি যে কোন ধরনের স্থাপনা বা বাসা-বাড়ি,
অফিস-আদালত কিংবা যেকোনো ধরনের প্রতিষ্ঠানের জন্য হুমকি স্বরুপ। এর কারনে সম্পত্তি
এবং মানব জীবনের প্রচুর ক্ষতি সাধন হয়। অগ্নির আরেক নাম সর্বভুক। তাই এর হাত থেকে রক্ষা
পেতে প্রত্যেকের আলাদাভাবে অগ্নি প্রতিরোধ এবং অগ্নি নিয়ন্ত্রনের উপর পর্যাপ্ত জ্ঞান
থাকা প্রয়োজন। প্রত্যেকের উচিত অগ্নি সম্পর্কে জানা এবং অগ্নির উপর প্রশিক্ষন প্রাপ্ত
হওয়া, যাতে অগ্নি লাগলে কোন রকম দুশ্চিন্তা ছাড়াই প্রত্যেকে অগ্নি নির্বাপন উপকরনসমুহ
ব্যবহার করে আগুন নিয়ন্ত্রন করতে পারে। গতানুগতিক পদ্ধতিতে অগ্নি নির্বাপনের উপর যে
প্রশিক্ষণ দেয়া হয়, তা বর্তমান যুগের বিভিন্ন পরিস্থিতির কারনে পর্যাপ্ত নয়। তাছাড়া
বাংলাদেশে আধুনিক প্রযুক্তি সংবলিত অগ্নি নির্বাপন যন্ত্র ও প্রশিক্ষণ উপকরণ এর সরবরাহ
পর্যাপ্ত নেই।
বর্তমানে তথ্য প্রযুক্তির যুগে অগ্নি প্রশিক্ষণের
মূল কথা হচ্ছে, অগ্নি সম্পর্কে সচেতন হওয়া। কারণ আগুন লাগলে তা আকারে ছোট হোক আর বড়
হোক আগুন নিভাতে নিভাতেই আমরা অনেক ক্ষতি গ্রস্ত হয়ে যাই। তাই আগুন যাতে না লাগে সে
জন্যে আমাদেরকে সর্বদা সতর্ক ও সচেতন থাকতে হবে। অগ্নি নির্বাপন যন্ত্রের উপর প্রশিক্ষন
গ্রহণের চেয়ে আগুন যাতে না লাগে সে সম্পর্কে সচেতন থাকা্টাই এখন মুখ্য বিষয়। এরপরেও
অসাবধনতা বশতঃ যদি আগুন লেগেই যায় তখন প্রশিক্ষণে শেখানো পদ্ধতি প্রয়োগ করে আগুন নেভানোর
চেষ্টা চালাতে হবে। সে জন্যে অগ্নি সম্পর্কে সচেতন হওয়ার পাশাপাশি অগ্নি নিয়ন্ত্রনের
কৌশলগুলোও আমরা শিখবো।
উদ্দেশ্য
অগ্নি ও অগ্নি নিরাপত্তা, অগ্নি প্রতিরোধ এবং অগ্নি নিয়ন্ত্রনের জন্য গুরুত্বপূর্ন বিষয় আলোচনা।
অগ্নি ও অগ্নি নিরাপত্তা
কয়েক বছর আগে চোখের সামনে এনটিভি, আরটিভি,
বসুন্ধরা সিটি জ্বলতে দেখা যায়। সম্প্রতি রাজধানীর পুরান ঢাকার চকবাজার থানার শাহী
মসজিদের পাশে একটি বহুতল ভবন, বিগত ৩১ মার্চ ২০১৯ তারীখে বনানীর এফ আর টাওয়ার,
এরপর ডিএনসিসি সুপার মার্কেট, গুলশান-১ এ ভয়াবহ
আগুন জ্বলতে দেখা যায়। এভাবে কিছুদিন পর পরই কোথাও না কোথাও আগুন লাগার ঘটনা
ঘটছে। কিন্ত আমাদের সচেতনতা এখনও সেই আগের পর্যায়েই আছে।
পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, ঢাকা শহরের অধিকাংশ
বহুতল ভবন, মার্কেট ও বিভিন্ন অফিস আদালতে-এ অগ্নি নির্বাপনের কোন ব্যবস্থা নেই। সবচেয়ে
আশ্চর্যজনক বিষয় হচ্ছে সরকারের নীতি নির্ধারকরা যেখানে বসেন সেই সচিবালয়ে পর্যন্ত অগ্নি
নির্বাপনের সুব্যবস্থা নেই। নেই কোন ফায়ার ড্রিল-এর ব্যবস্থা। অত্যাধুনিক অগ্নি নির্বাপন
ব্যবস্থা থাকা সত্বেও বসুন্ধরা পুড়েছে কেবল নিয়মিত ফায়ার ড্রিল না হওয়ায়। কোন যন্ত্র
কিভাবে ব্যবহার করতে হয় তা না জানা থাকলে অগ্নি নির্বাপন ব্যবস্থা থাকলেও তা কাজে আসেনা।
বসুন্ধরা পুড়ে যাওয়ার পর পত্রিকায় অনেক লেখালেখি
হওয়ায় কিছুদিন আগে সচিবালয়ে ফায়ার ড্রিল হয়েছে। অনেক গার্মেন্টস ফ্যাক্টরীতেও এমন ড্রিল
হওয়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু এটা কি যথেষ্ঠ? এ বিষয়ে সবার পরিষ্কার জ্ঞান থাকা জরুরী,
বিশেষ করে আগুন কোন কোন কারনে লাগতে পারে, আগুন যদি লেগেই যায় তাহলে কি করতে হবে এবং
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন যে বিষয়টা তা হল আগুনের প্রকার ভেদে ভিন্ন ভিন্ন ব্যবস্থা নেয়া,
তানাহলে আগুন নেভাতে গিয়ে আগুন আরও বাড়িয়ে তোলার সম্ভাবনা থাকে, যার পরিনাম ভয়াবহ হতে
পারে। এসব নানা বিষয় নিয়ে এখানে কিছু আলোচনা করা হয়েছে।
অগ্নি দুর্ঘটনায় পৃথিবীর শীর্ষে ঢাকা
শুধু দেশেই নয়, এবার সারা পৃথিবীতে অগ্নি দুর্ঘটনায়
শীর্ষে আছে ঢাকা। যান্ত্রিক এই শহরের আনাচে-কানেচে প্রতিটি অংশই যেন মৃত্যুপুরি হিসেবেই
পরিচিত সবার কাছে। কোন অংশেই যেন ঝুঁকির বাইরে নয়। ইট-সিমেন্টের গড়া রাজধানীর প্রতিটি
ভবন হয়ে উঠতে পারে প্রাণহানির কারণ।
২০১৮ সালে সারাদেশে ৮ হাজার ৪৬১ টি আবাসিক
ভবনে আগুন লাগে। এর মধ্যে ২ হাজার ৮৮টি দুর্ঘটনাই ছিল ঢাকায়। শিল্প কারখানায় ১ হাজার
১৩১টি অগ্নিকাণ্ডের ৫২৬টিই ঢাকায়।
পরিবেশ সংরক্ষণে আইনী সহায়তার সঙ্গে লড়ে যাওয়া
‘বেলা’র এক পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে, গত এক দশকে ১৬ হাজার অগ্নিকাণ্ডে সারাদেশে মৃতের
সংখ্যা প্রতি বছর গড়ে ১৫৯ জন। অথচ ২০১৮তেই ঢাকায় মৃতের সংখ্যা ১২১ জন। এ বছর ইতোমধ্যে
প্রায় প্রায় শত প্রাণ আগুনের বলি হয়েছে।
তবে বিশেষজ্ঞরা বলেন, ভবনের অনুমোদিত নকশার
দাগ পাল্টায় মালিকের ইচ্ছায়, সাথে ব্যবহারবিধিও। মালিকের সঙ্গে এখানেও রয়েছে উপর মহলের
তদারকি। তাছাড়া অনুমতির বাইরে গড়ে উঠা বহুতল ভবনগুলো দাঁড়িয়ে যাচ্ছে তখন আর সেগুলোর
প্রতি কোন তদন্ত করাও হয় না বলে অভিযোগ আছে।
এদিকে ফায়ার সার্ভিসের সাবেক ডিজি ব্রি.জে.আবু
নাঈম শহীদুল্লাহ বলেন, নকশা পাস করে নিয়ে গেল, তারপর ভবন নির্মাণ করতে ৭-১০ বছর টাইম
লাগে। তখন এই পক্ষের দিকে তারা আর ফিরে তাকাবে না। অকোফেশনাল সার্টিফিকেটটা খুব বেশি
প্রয়োজন, এবং পরবর্তীতে এটা দেখা হবে যে আমি যেটা বলেছি, সেটা করেছি।
যান্ত্রিক এই রাজধানীতে গড়ে উঠা বহুতল ভবনগুলোর
অধিকাংশই অগ্নিকাণ্ড প্রতিরোধ ক্ষমতার বাহিরে। এমনকি প্রাথমিক প্রতিরোধ করারও নিজস্ব
কোনো সক্ষমতা নেই। নেই ধোঁয়া এড়িয়ে বেরিয়ে আসার মতো প্রশস্ত সিড়ি বা পানির ব্যবস্থাপনা
রাখার জায়গা। তবে এ বিষয়টিও সরকারের তদন্তের বাইরে। ফলে গত দশ বছরে ফায়ার সার্ভিসের
সক্ষমতা বাড়লেও ভবনের সংখ্যার অনুপাতে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বেড়েছে বহুগুণে।
বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. মাকসুদ
হেলালী বলেন, একটা সেফ এক্সিট রুট লাগবে, আগুন লাগলে মানুষ যাতে নেমে আসতে পারে। এবং
এখানে কোন ধোঁয়া, বা আগুন কিছুই থাকবে না। আরেকটা হচ্ছে, ফায়ার লিফট থাকতে হবে, আগুন
লাগলে ফায়ার সার্ভিসের লোকরা যেনো সেই লিফটটা আগুন নিভানোর কাজে ব্যবহার করতে পারে।
সব ভবনের জন্য এই দুইটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে যে কোন ভবনের ক্ষেত্রে নতুন করে
মোডিফাই করা সম্ভব।
বিশেষজ্ঞরা আরও বলেছেন, শহরের সব ভবন দ্রুত
যাচাই করে নকশা অনুযায়ী যথাযথ ফায়ার এক্সিট এবং প্রয়োজনীয় পানি ও অগ্নি নিরোধের ব্যবস্থাপনা
নিশ্চিতে বাধ্য করতে হবে মালিকদের। নতুবা, চিহ্ণিত করতে হবে ঝুঁকিপূর্ণ ভবন হিসেবে।
ফায়ার সার্ভিসের তথ্যমতে, ঢাকা শহরের ৪২৩টি
হাসপাতালের মধ্যে ৪১৬টিই ভয়াবহ আগুনের ঝুঁকিতে আছে৷ ঢাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ব্যাংক,
মার্কেট, আবাসিক হোটেলসহ তিন হাজারেরও বেশি প্রতিষ্ঠান ভয়াবহ আগুনের ঝুঁকিতে রয়েছে।
ঢাকার মাত্র ৫টি মার্কেট ও শপিং মলের আগুন ব্যবস্থাপনা সন্তোষজনক।
২০১২ সালে ফায়ার সার্ভিস, ডেসা, ওয়াসা, পরিবেশ
অধিদপ্তরের অনুমোদন দেয়া ১১২টি ভবনে বুয়েটের করা গবেষণায় দেখা যায়, মাত্র দুটি ভবন
তাদের সব নির্মাণ নীতিমালা মেনেছেন। বাকিরা কোনো না কোনো নিয়ম এড়িয়েছেন, অথবা মানলেও
তা অকার্যকর।
২০১৬ সালে ড্যাপ-এর করা জরিপে দেখা যায়, ঢাকা
শহরে সাততলা বা তার চেয়ে উঁচু ভবন আছে ১৬ হাজার ৯৩০ট। স্বাভাবিক নগরায়ন ও উন্নয়নের
কারণে গত দুই বছরে এর সংখ্যা আরো ১০-১৫ ভাগ বেড়েছে৷ আইন অনুযায়ী এসব ভবন নির্মাণের
ক্ষেত্রে ফায়ার সার্ভিসের ছাড়পত্র থাকা বাধ্যতামূলক৷ কিন্তু ফায়ার সার্ভিস থেকে পাওয়া
তথ্য অনুযায়ী, সারা দেশে ২০০০ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত মাত্র ৫ হাজার ২৪টি ভবন নির্মাণের
ক্ষেত্রে ছাড়পত্র নেয়া হয়েছে। তাহলে এটা স্পষ্ট যে দুই তৃতীয়াংশের বেশি বহুতল ভবনের
ফায়ার সার্ভিসের ছাড়পত্র নেই। আর ৮০ ভাগ ভবনই কোনো না কোনোভাবে নিয়ম ও আইনের লঙ্ঘন
করে নির্মাণ করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম নগরী আগুনের ঝুঁকিতে
চট্টগ্রাম নগরীতে আবাসিক ও বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহৃত
বহুতল ভবনগুলোর ৯৭ শতাংশ আগুনের ঝুঁকিতে আছে। ৯৩ শতাংশ বহুতল ভবনের কোন রকম অগ্নি নির্বাপণ
ব্যবস্থা নেই। আইন থাকা সত্ত্বেও ৯৭ শতাংশ ভবন ফায়ার সার্ভিসের বসবাসের উপযোগী ছাড়পত্র
নেয়নি। শতভাগ বিল্ডিং কোড মেনে নির্মাণ করা হয়েছে এমন ভবন একটিও নেই বন্দরনগরী চট্টগ্রামে।
ভূমিকম্পসহ বিভিন্ন দুর্যোগের ঝুঁকিতে রয়েছে সবক’টি ভবন। এমন তথ্য দিয়েছে ফায়ার সার্ভিস।
অগ্নি প্রতিরোধ ও নির্বাপণ আইন-২০০৩ অনুযায়ী
ছয় তলার বেশি উচ্চতার ভবন নির্মাণ করতে হলে তিন স্তরের অগ্নিনিরাপত্তা পদ্ধতি অনুসরণ
করতে হবে। এর নিচে হলে দুই স্তরের অগ্নিনিরাপত্তা পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে। তবে এর
আগে ফায়ার ফাইটিং ফোর পরিকল্পনা অনুযায়ী ভবনের স্থায়ী অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা, জরুরি
নির্গমন সিঁড়ি, ফায়ার লিফট, ফায়ার কমান্ড স্টেশন স্থাপনের বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।
এরপর ফায়ার সার্ভিস সেখানে বসবাসের জন্য ছাড়পত্র দেবে।
বিদ্যমান আইন অনুযায়ী, ছাড়পত্র পাওয়ার অনধিক
তিন মাসের মধ্যে প্রত্যেক বহুতল ভবনে অগ্নিনির্বাপণ ও উদ্ধার সংক্রান্ত ব্যবস্থাপনা
কমিটি গঠন করতে হবে। কমিটির তত্ত্বাবধানে ২০ শতাংশ বসবাসকারীকে ফায়ার সার্ভিসের কাছ
থেকে অগ্নিনির্বাপণ ও উদ্ধার এবং প্রাথমিক চিকিৎসা বিষয়ে মৌলিক সাধারণ প্রশিক্ষণ গ্রহণ
করতে হবে। দুই বছর পর্যন্ত প্রতি তিন মাস পরপর এবং এরপর থেকে ছয় মাস পরপর ভবনে ফায়ার
মহড়ার আয়োজন করতে হবে। দেখা যায় আইন শুধু আইনের মধ্যেই আছে কিন্তু এর কোনো বাস্তবতা
নেই।
সবার আগে জানতে হবে- আগুন কি? কয়টি জিনিসের
সমন্বয়ে আগুন জ্বলে?
আগুন কি ও কয়টি জিনিসের সমন্বয়ে আগুন জ্বলে?
আগুন হলো ‘দহন’ (Combustion) বিক্রিয়ার দৃশ্যমান
রূপ। বইয়ের ভাষায়- কোনো মৌল বা যৌগকে বায়ুর অক্সিজেনের উপস্থিতিতে পুড়িয়ে তার উপাদান
মৌলের অক্সাইডে পরিনত করার প্রক্রিয়াকে দহন বিক্রিয়া বলে। অর্থাৎ তাপের উপস্থিতিতে
কোন কিছুর সাথে অক্সিজেন এর বিক্রিয়া কে আগুন বলে। এই বিক্রিয়ার সময় উৎপন্ন শক্তি
বিক্রিয়ার আশে পাশের গ্যাসকে উত্তপ্ত করে তোলে, ফলে আমরা সেখানে কিছু ঘটনা দেখতে পাই
যাকে আমরা আগুন বলি।
দহন বিক্রিয়ায় তিনটি জিনিস লাগে- অক্সিজেন,
জ্বালানি এবং পর্যাপ্ত তাপ। এই তিনটি জিনিস যতোক্ষণ থাকে ততোক্ষণ আগুন জ্বলতে থাকে।
অগ্নি প্রজ্বলনে সহায়ক চিত্র
তাহলে দেখা যাচ্ছে আগুন জ্বলার জন্য তিনটা জিনিস দরকার
(১) প্রচুর তাপ
(২) অক্সিজেন
(৩) জ্বালানী
এজন্য অগ্নিনির্বাপন যন্ত্রের কাজই হল এখান থেকে অন্ততঃ একটা উপাদান সরিয়ে দেয়া যাতে করে আগুন জ্বলতে না পারে।
নির্বাপন
আগুনের থেকে এর অত্যাবশ্যকীয় তিন উপাদানের
যে কোন একটা উপাদান সরিয়ে দিতে পারলেই আগুন নিভে যাবে। আর এ কাজ করার জন্য বিভিন্ন
উপায় আছে।
ক) তাপ অপসারনঃ
তাপ অপসারনের সবচে’ ভাল পদ্ধতি হচ্ছে আগুনে
পানি ঢেলে দেয়া। এতে করে জ্বালানীর তাপমাত্রা প্রজ্বলন তাপমাত্রার অনেক নিচে নেমে আসে।
ফলে তা জ্বলন প্রক্রিয়াকে থামিয়ে দেয়।
খ) অক্সিজেন অপসারনঃ
আগুন থেকে অক্সিজেন অপসারন করতে হলে আগুনকে
আবদ্ধ করে ফেলতে হবে যাতে এটা মুক্ত বাতাসের সংস্পর্ষ না পায়। এতে করে আগুনের আশপাশের
অক্সিজেন জ্বলে শেষ হয়ে যাবে এবং অক্সিজেনের অভাবে আগুনের মৃত্যু ঘটবে। আর এটা করার
উপায় হচ্ছে মোটা কম্বল দিয়ে আগুনকে ঢেকে দেয়া। তাছাড়া অদাহ্য পদার্থ যেমনঃ বালি বা
বেকিং সোডা ইত্যাদি আগুনের উপর ঢেলে দেয়া।
গ) জ্বালানী অপসারনঃ
অগ্নিনির্বাপনের সবচেয়ে কঠিন কাজ এটি। উদাহরন স্বরূপ কোন কাঠের তৈরি ঘরে লাগা আগুনের ক্ষেত্রে পুরো ঘরটাই জ্বালানী এবং এটা অপসারিত হবে কেবল তখন যখন সবটা পুড়ে যাবে।
আগুন লাগার কারণসমূহ
ক. ত্রুটিপূর্ন বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম।
খ. অতিরিক্ত বৈদ্যুতিক সংযোগ।
গ. খামখেয়ালী ধুমপানের বহি:প্রকাশ।
ঘ. তাপীয় যন্ত্রপাতির অসদ্ব্যবহার।
ঙ. অতিরিক্ত তাপীয় যন্ত্রপাতি।
চ. সংরক্ষন নিয়ম অমান্য করা।
ছ. আরশন। ইত্যাদি।
আগুন নিরাপত্তা চেকলিষ্ট
ক. এলাকা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা।
খ. সঠিক সংরক্ষন নিয়মাবলী অনুসরন।
গ. সুইচ বোর্ডের নিকট কোন জ্বালানী না থাকা।
ঘ. সঠিক সার্কিট ব্রেকার এর ব্যবহার।
ঙ. ধুমপান নিষেধ/ধুমপান এলাকা এবং সময় চিহ্নিত
করা।
চ. তাপ/আলোক ব্যবহারের নিয়মাবলী মেনে চলা।
ছ. সঠিকভাবে জ্বালানী সংরক্ষন করা।
জ. কাজের সময়ে আগুন সংক্রান্ত সঠিক পদ্ধতি
অনুসরন করা।
ঝ. আগুন লাগতে পারে এমন দাহ্যবস্তু সনাক্ত
করন।
ঞ. নির্গমন হওয়ার পথ এবং সঠিক নির্গমন পয়েন্ট
চিহ্নিত করা।
ট. নির্গমন পথ আটকানো না থাকা।
ঠ. নির্গমন পথ খোলা রাখা।(বাহির থেকে)
ড. ফায়ার এক্সটিংগুইসার এর অবস্থান এবং ব্যবহার।
ঢ. সময়মত দক্ষ ফায়ার ফাইটার দ্বারা ফায়ার এক্সটিংগুইসার
চেক এবং নিরীক্ষা করা।
ফায়ার এলার্ম বাজলে বা অগ্নি দূর্ঘটনার সময়ে আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য
১। আগুন লেগেছে দেখা মাত্র যে কেউ ফায়ার এলার্ম
সুইচ টিপে এলার্ম বাজাবে।
২। ফায়ার এলার্ম বা হুইসেল শোনা মাত্র ফায়ার
ফাইটার ব্যতীরেকে অফিস বা প্রতিষ্ঠানের সমস্ত লোকজন হাতের কাজ ফেলে ইভাকুয়েশন প্লান
অনুযায়ী প্রত্যেকে সিঁড়ি দিয়ে নেমে যাবে।
৩। ফায়ার এলার্ম বা হুইসেল শোনা মাত্র ইলেকট্রিশিয়ান
বা ফায়ার ফাইটিং দলের সদস্য ইলেকট্রিক মেইন সুইচ অফ করবে এবং সাবস্টেশন থেকেও যতো তাড়াতাড়ি
সম্ভব প্রতিষ্ঠানের মেইন সুইচ অফ করবে।
৪। বড় ধরনের আগুন লাগলে ফায়ার সার্ভিস এ ফোন
করতে হবে। অথবা ৯৯৯ এ ফোন করে জানাতে হবে।
৫। আগুন সংগঠনের স্থান থেকে তৎক্ষনাত মানুষ/যানবাহন
সরিয়ে ফেলতে হবে।
৬। আগুন নিয়ন্ত্রনের জন্য ফায়ার ফাইটিং দলকে
সক্রিয় হতে হবে ।
৭। ইভাকুয়েশন/খালি করা/স্থান ত্যাগের সময় চুরির
ব্যাপারে সতর্ক হতে হবে।
৮। লোকজন সিঁড়ি দিয়ে দ্রুত নামার সময় কোনভাবেই
ধাক্কাধাক্কি এবং বিশৃংখলার সৃষ্টি করা যাবে না।
৯। দ্রুত নামার সময়ে কেউ আতংক সৃষ্টি এবং হৈ-চৈ
বা কান্নাকাটি করা যাবে না।
১০। দ্রুত নামার সুবিধার্থে নিজের জুতা বা
টিফিন ক্যারিয়ার বা অন্য কিছু সঙ্গে নেয়ার চেষ্টা করা যাবে না।
১১। প্রতিষ্ঠান থেকে বের হয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে
গাড়ী চলাচলে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করা যাবে না।
১২। কারো গায়ের কাপড়ে আগুন ধরে গেলে তৎক্ষনাত
ফ্লোরে শুয়ে গড়াগড়ি দিতে হবে। কোনক্রমেই দৌড়ানো যাবে না।
১৩। ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে গেলে দ্রুত ফ্লোরে
বসে হামাগুড়ি দিয়ে বাহির হয়ে আসতে হবে।
১৪। এছাড়া ফায়ার ফাইটিং দল, রেসকিউ বা উদ্ধারকারী
দল, ফাস্ট এইড টিম, কর্ডন পার্টি এবং অন্যান্য সকলে তাদের নিজ নিজ দায়িত্ব ও কতর্ব্য
বিশ্বস্ততা এবং সাহসিকতার সাথে অবশ্যই পালন করবে।
অগ্নি নির্বাপনের জন্য দলসমুহের সংগঠন
১। ফায়ার ফাইটিং দল বা অগ্নি নির্বাপক দল।
২। কর্ডন পার্টি ।
৩। উদ্ধারকারীদল ।
৪। সংরক্ষিত দল।
৫। ফার্স্ট এইড টিম।
বিভিন্ন দলের দায়িত্ব ও কর্তব্যসমূহ
ফায়ার ফাইটিং দল বা অগ্নি নির্বাপক দল:
আগুন লাগলে যারা আগুন নির্বাপন যন্ত্র/আগুন
নিভানোর জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি নিয়ে আগুন প্রতিহত করার চেষ্টা করে তারাই ফায়ার
ফাইটিং দল।
ফায়ার ফাইটিং দল বা অগ্নি নির্বাপক দলের দায়িত্ব ও কতর্ব্যসমূহ
১। আগুন লাগার সাইরেন শুনার সঙ্গে সঙ্গে ইলেকট্রিশিয়ান/ফায়ার
ফাইটিং সদস্য ফ্লোরে বিদ্যুতের মেইন সুইচ বন্ধ করবে।
২। আগুন লাগার সাইরেন শুনার সঙ্গে সঙ্গে অগ্নি
নির্বাপক দলের প্রত্যেকে দ্রুত নিদির্ষ্ট অগ্নি নির্বাপনীর কাছে চলে যাবে ও যন্ত্র
নামিয়ে নিবে এবং আগুন কোথায় লেগেছে তা জানার চেষ্টা করবে এবং দ্রুত আগুনের কাছে গিয়ে
আগুনের ধরন অনুযায়ী অগ্নি নির্বাপনী যন্ত্র ব্যবহার করবে।
৩। অগ্নি নির্বাপকগণ রক্ষিত ড্রামের অথবা ফায়ার
হোস পাইপের পানি দ্বারা আগুন নেভাতে চেষ্টা করবে।
৪। বৈদ্যুতিক আগুন নিভাতে শুধু মাত্র কার্বনডাই
অক্সাইড অগ্নি নির্বাপনী যন্ত্র ব্যবহার করবে। কোনো অবস্থাতেই পানি ব্যবহার করা যাবে
না।
৫। অন্যান্য আগুনের ক্ষেত্রে এবিসি ও পানি
ব্যবহার এবং কেমিক্যাল আগুনের ক্ষেত্রে ফোম ব্যবহার করতে হবে।
৬। ফায়ার ব্রিগেড দল এসে পৌঁছালে তাদেরকে সর্বাত্মকভাবে
সহযোগীতা করতে হবে।
৭। সবাইকে মিলে মিশে এক সাথে কাজ করতে হবে।
৮। আহত ব্যক্তি প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদানের
পর সুস্থ্য না হলে উদ্ধারকারী দলের সদস্যকে দিয়ে দ্রুত হাসপাতালে প্রেরণ করতে হবে।
৯। নিজের ফ্লোরে আগুন লাগলে কর্তৃপক্ষের অনুমতি
ব্যতীত স্থান ত্যাগ করা যাবে না।
কর্ডন পার্টি
অবস্থান–ফ্যাক্টরীর মেইন গেট ও রাস্তার উপরের মেইন
গেট।
কর্ডন পার্টির কাজ
১। অগ্নিনির্বাপনের জন্য ফায়ার সার্ভিস টীম
যাতে অফিস বা প্রতিষ্ঠানের ভিতরে সহজে প্রবেশ করতে পারে এবং অগ্নি নির্বাপনের যাবতীয়
কার্যক্রম পরিচালনায় কোন প্রকার ব্যাঘাত না ঘটে সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।
২। আগুন লাগলে বা ঐ রকম কোন দূর্ঘটনা ঘটলে
দ্রুত প্রতিষ্ঠানের মূল ফটক সমুহ খুলে দিবে।
৩। প্রতিষ্ঠনের সকলকে এবং পার্ক করা গাড়ীকে
দ্রুত বাহির হতে সাহায্য করবে।
৪। প্রতিষ্ঠানের ভিতরে যেন বাহিরের লোক বা
কোন গাড়ী অবৈধভাবে প্রবেশ করতে না পারে তা নিশ্চিত করবে এবং অবৈধ অনুপ্রবেশের সম্ভাবনা
থাকলে তা প্রতিহত করবে।
৫। প্রতিষ্ঠানের সামনের রাস্তা সর্বদা উম্মুক্ত
রাখবে যেনো প্রয়োজনে ফায়ার ব্রিগেড, পুলিশের গাড়ী ও এ্যাম্বুলেন্স দ্রুত চলাচল করতে
পারে।
৬। আগুন লাগলে বা ঐ রকম কোন দূর্ঘটনা ঘটলে
আনুষঙ্গিক সাহায্য সহযোগীতা প্রদান এবং কর্তৃপক্ষের যে কোন নির্দেশ পালনের জন্য প্রস্তুত
থাকবে।
৭। আগুন লাগার সাইরেন বাজার সঙ্গে সঙ্গে নিকটতম
ফায়ার সার্ভিস অফিস, শাখা অফিস, প্রধান অফিসকে অবহিত করতে থাকবে।
৮। অগ্নি দুর্ঘটনা বা আপদকালীন সময় ইউনিট/সেকশনের
প্রধান প্রবেশ পথ সমুহকে বেষ্টনী করে রাখতে হবে, যাতে প্রতিষ্ঠানের বাহিরের কোন অপরিচিত
কোন ব্যক্তিবর্গ ভিতরে প্রবেশ করতে না পারে।
৯। নিকটতম পানির উৎস কোথায় তা ফায়ার সার্ভিস
কর্মীদের অবহিত করবে এবং যাবতীয় সাহায্য সহযোগীতা করবে।
উদ্ধারকারীদল
এ দলের প্রধান
কাজ হলো:
১। প্রথমে মানুষ এবং পরে মালামাল উদ্ধার করবে।
২। প্রতিষ্ঠানের লোকজনদেরকে দ্রুত স্থান ত্যাগ
করতে সাহায্য করবে।
৩। কেউ যদি আহত হয় তাকে দ্রুত নিরাপদ স্থানে
নিয়ে যাবে।
৪। মালামাল রক্ষা করবে।
সংরক্ষিত দল
সংরক্ষিত দল হিসাবে ঘটনা স্থলে উপস্থিত থাকা
এবং প্রয়োজনে অন্যান্য দল সমূহকে যে কোন ধরনের সাহায্য করা।
ফার্ষ্ট এইড টিম
ফার্ষ্ট এইড টিম এর দায়িত্ব ও কর্তব্য
১। আগুন লাগার সাইরেন শোনামাত্র দ্রুত ফার্ষ্ট
এইড বক্সের কাছে গিয়ে নিরাপদ অবস্থান নিবে।
২। আহত বা অসুস্থ রোগীকে দ্রুততার সাথে প্রাথমিক
চিকিৎসা প্রদান করবে।
৩। প্রাথমিক চিকিৎসায় সুস্থ না হওয়ার মত অবস্থা
হলে উদ্ধারকারী দলের সদস্যদেরকে দিয়ে দ্রুত নিকটতম হাসপাতাল বা ক্লিনিকে নিয়ে যাওয়ার
ব্যবস্থা করবে।
৪। কেবলমাত্র জরুরী অবস্থা ছাড়া, কর্তৃপক্ষের
নির্দেশ ব্যতিরেকে স্থান ত্যাগ করবে না।
আগুন লাগলে চালকদের কর্তব্য
১. ফায়ার সাইরেন বা সংকেত শোনার সাথে সাথে
নিজ নিজ গাড়ী অতি দ্রুত মেইন গেটের বাইরে নিয়ে যাবে। তবে রাস্তার উপরে কোনক্রমেই গাড়ী
দাঁড় করে রাখা যাবে না যাতে ফায়ার ব্রিগেডের
গাড়ীসহ অন্য গাড়ী চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি না হয়।
২.
প্রতিষ্ঠানের ভিতরে গাড়ী পার্কিং-এর সময় খেয়াল রাখতে হবে যেনো গাড়ীর মুখ সামনের
দিকে বা বাহির মুখী হয়ে থাকে।
৩. গাড়ী পার্কিংএর সময় খুব প্রয়োজস না হলে
হ্যান্ড ব্রেক লাগাবে না। যাতে প্রয়োজনে ঠেলে
গাড়িটি সরানো যায়।
৪. অকেজো/মেরামতাধীন গাড়ী এমনভাবে পাকিং করতে
হবে যেনো সম্ভাব্য অগ্নি ঝুঁকি থেকে দুরে থাকে এবং পথের মাঝখানে গাড়ী দাঁড় করে রাখা
যাবে না।
অগ্নি দূঘটনা থেকে বাঁচার জন্য কিছু নির্দেশিকা
১. অসাবধানতাই অগ্নিকান্ডের প্রধান কারণ। তাই
অগ্নি প্রতিরোধে সচেতন হতে হবে।
২. রান্নার পর চুলার আগুন সম্পূর্ণ নিভিয়ে
ফেলতে হবে।
৩. বিড়ি-সিগারেটের জলন্ত অংশ নিভিয়ে নিরাপদ
স্থানে ফেলতে হবে।
৪. ছোট ছেলেমেয়েদের আগুন নিয়ে খেলা থেকে বিরত
রাখতে হবে।
৫. খোলা বাতির ব্যবহার কমিয়ে দিতে হবে।
৬. ক্রটিযুক্ত বা নিন্মমানের বৈদ্যুতিক তার,
ফিটিংস ও সরঞ্জাম ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে হবে।
৭. বাসায়, অফিসে বৈদুতিক তার ও ওয়ারিং মাঝে
মাঝে অভিজ্ঞ ইলেকট্রিশিয়ান দ্বারা পরীক্ষা করাতে হবে।
৮. সম্ভাব্য অগ্নিকান্ড মোকাবেলায় হাতের কাছে
সব সময় দু’বালতি পানি বা বালু মজুদ রাখতে হবে।
৯. বাসগৃহ, কলকারখানা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে
অগ্নি নির্বাপনী যন্ত্রপাতি স্থাপন করুন এবং মাঝে মাঝে সেগুলির কার্যকারিতা পরীক্ষা
করতে হতে।
১০. প্রতিটি শিল্পকারখানা, সরকারী ও বেসরকারী
ভবন বা প্রতিষ্ঠানে অগ্নি প্রতিরোধ ও নির্বাপন আইন ও বিধি অনুযায়ী অগ্নি প্রতিরোধ ব্যবস্থা
বাস্তবায়ন করতে হবে।
১১. কলকারখানায় অগ্নি নির্বাপণের জন্য পর্যাপ্ত
পানির ব্যবস্থা রাখতে হবে।
১২. গুদাম বা কারখানায় ধুমপান নিষিদ্ধ করুন
ও দৃশ্যমান স্থানে সতর্কীকরণ পোষ্টার প্রদর্শনের ব্যবস্থা নিতে হবে।
১৩. ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স হতে অগ্নি
প্রতিরোধ ও নির্বাপন বিষয়ক মৌলিক প্রশিক্ষণ গ্রহন করতে হবে।
১৪. স্থানীয় ফায়ার স্টেশনের ফোন নম্বর সংরক্ষণ
করতে হবে এবং যেকোনো অগ্নি দূর্ঘটনায় দ্রুত সংবাদ দিতে হবে।
১৫. স্থানীয়ভাবে অগ্নি প্রতিরোধ ও নির্বাপনের
লক্ষ্যে স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী গড়ে তুলতে হবে।
১৫. মূলত: যে সকল কারণে অগ্নিকান্ডের সৃষ্টি
হয় সেগুলো চিহ্নিত করে সাবধানতা অবলস্বন করতে হবে এবং সেগুলোর বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে।
গ্যাসীয় রান্না ঘরের সাবধনতা
১। ভেজা জামা কাপড় চুলার উপর শুকাতে দেয়া যাবে
না।
২। গ্যাসের চুলা জ্বালানোর কমপক্ষে ১৫ মিনিট
পূর্বে রান্না ঘরের সকল জানালা / দরজা খুলে বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা করতে হবে।
৩। গ্যাসের চাবি অন করার পূর্বে ম্যাচের কাঠি
ধরাতে হবে।
৪। গ্যাসের চুলার হোজপাইপটি ফাটা / ক্ষতিগ্রস্থ
হলে পরিবর্তন করতে হবে।
গ্যাস সিলিন্ডারে আগুন লাগলে করণীয়
যদি সিলিন্ডারে আগুন লাগে, আতঙ্কিত না হয়ে
আগুন নেভানোর জন্য চেষ্টা করতে হবে।
(১) প্রথমে দ্রুত একটি সুতি কাপড় (লুঙ্গি জাতীয়
কাপড়)বা পাটের বস্তা পানিতে ভিজিয়ে পুরো সিলিন্ডারটিকে ঢেকে দিতে হবে। এতে আগুন হাতে
কিংবা শরীরে লাগবে না। তারপর দ্রুত রেগুলেটর ঘুরিয়ে সিলিন্ডারটি বন্ধ করতে হবে। দেখবেন
আগুন নিভে যাবে।
(২) বালতি দিয়ে গ্যাস সিলিন্ডারের মুখটি ঢেকে ধরলেও আগুন
নিভে যাবে।
(৩) হাতে ভিজে সুতি কাপড় পেঁচিয়ে দ্রুত গ্যাস সিলিন্ডারের
মুখ চেপে ধরলে আগুন নিভে যাবে।
(৪) ফায়ার এক্সটিংগুইশার
ব্যবহারের মাধ্যমেও গ্যাস সিলিন্ডারের আগুন নিভানো যায়।
অগ্নিকান্ডের সময় আটকা পড়া লোকদের যেসব বিষয়ে সাবধান থাকতে হবে
১। অগ্নিকান্ডের সময় আটকা পড়া লোকদের বেশীরভাগ
লোকই মারা যায় কালো ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে। সেজন্য এসময় রুমাল বা গামছা বা অন্য কোনো
কাপড় দিয়ে নাক ও মুখ চেপে ধরতে হবে। ধোয়াঁ শ্বাস-প্রশ্বাসের সংগে ভিতরে নেয়া যাবে না।
২। কালো ধোঁয়ায় অন্ধকার হওয়ায় কোনো কিছু দেখা
যায় না। তাই হামা গুড়ি দিয়ে দেয়াল ধরে ধরে বের হয়ে আসতে হবে।
৩। ভয়ে আতংকিত হয়ে উপর থেকে নিচে কখনই ঝাঁপ
দেয়া যাবে না।
৪। বিল্ডিং থেকে বের হতে না পারলে কোনো নিরাপদ
স্থানে দাঁড়িয়ে সাহায্যের জন্যে অপেক্ষা করতে হবে।
৫। যদি কাবর্ন ডাই অক্সাইড (সিওটু) ব্যবহার
করা হয় তবে নাকে বা গলায় ধোঁয়া প্রবেশের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে।
৬। সকল দরজা জানালা খুলে দিতে হবে যাতে সব
ধোয়াঁ বেরিয়ে যায়।
৭। সবাই এক সংগে বের হওয়ার জন্য দরজার দিকে
যেতে তাড়াহুড়া করা যাবে না।
৮। লাইন ধরে শৃংখলার সহিত বের হতে হবে।
৯। জরুরী নির্গমন পথ অথবা সহজে যাওয়া যায় এমন
পথ দিয়ে বের হতে হবে।
১০। দামী জিনিস পত্র নেয়ার আশায় রুমের মধ্যে
দেরী করা যাবে না।
অগ্নি নিরাপত্তায় নিরাপত্তা কর্মীদের করণীয়
একটি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত সিকিউরিটি ইনচার্জ/সিকিউরিটি
সুপারভাইজার ও সিকিউরিটি গার্ডের যান, মাল ও তথ্যের নিরাপত্তা প্রদানের পাশাপাশি জরুরী
পরিস্থিতিতে যেমন, অগ্নিকান্ড, ভূমিকম্প, চুরি, ছিনতাই, অপহরণ কিংবা ডাকাতীকালে কী
করণীয় তা জানা থাকা আবশ্যক।
অগ্নি নিরাপত্তায় সিকিউরিটি ইনচার্জ
/ সিকিউরিটি সুপারভাইজারের করনীয়
অগ্নিকান্ডের পূর্বে করণীয়
১। সিকিউরিটি ইনচার্জ/সিকিউরিটি সুপারভাইজার
যে প্রতিষ্ঠানে বা যে পোস্টে ডিউটি করবে সেই এলাকার স্থানীয় ফায়ার সার্ভিস স্টেশন,
স্থানীয় থানা ও হাসপাতাল বা ক্লিনিকের জরুরী
টেলিফোন বা মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করে রেজিস্টারে লিপিবদ্ধ করে রাখতে হবে। উক্ত নম্বরগুলো
নিজেদের মোবাইল ফোনেও সেইভ করে রাখতে হবে। এ ছাড়া জরুরী পরিস্থিতিতে ৯৯৯ এ ফোন করেও
জানানো যায় তা সকলকে অবগত করতে হবে।
২। ডিউটি পোস্টে এসে দায়িত্ব গ্রহণের পরেই
নিজ নিজ দায়িত্বপূর্ণ এলাকা ঘুরে দেখতে হবে যে, আগুন লাগার তিনটি জিনিসের সমন্বয় কোথাও
আছে কি না।
৩। নিজ নিজ দায়িত্বপূর্ণ এলাকা পরিস্কার পরিচ্ছন্ন
আছে কিনা।
৪। তরল জাতীয় কোনো পদার্থ যেমনঃ পেট্রোল, ডিজেল,
মবিল/গ্রিজ ইত্যাদির ড্রাম বা জারকিন যত্রতত্র পড়ে আছে কিনা। এগুলোর আশে পাশে কেহ বিড়ি/সিগারেট
টানে কিনা।
৫। বাহ্যিক বৈদ্যুতিক সরঞ্জামাদি ও সুইস বোর্ড
ঠিক আছে কিনা।
৬। বৈদ্যুতিক কোনো তার থেকে আগুন স্পার্ক হচ্ছে
কিনা।
৭। রান্না ঘরে গ্যাসের চুলার আশে পাশে অন্য
কোনো জ্বালানী আছে কিনা।
ডিউটি পোস্টে পেট্রোলিং ডিউটি করার সময় যে
যে জিনিসগুলোর সমন্বয়ে আগুন লাগার সম্ভাবনা আছে সেগুলোর চেক লিস্ট তৈরী করতে হবে এবং
যথাযথ কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানাতে হবে।
অগ্নিকান্ডের সময় করণীয়
১। আগুন লাগার বিষয়টি দেখার সাথে সাথে ফায়ার
সার্ভিস ও পুলিশ স্টেশনে ফোন করে জানাতে হবে। এছাড়া প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা
ও নিজ কোম্পানির কন্ট্রোল রুমসহ দায়িত্ব প্রাপ্ত কর্মকর্তাকে ফোন করে জানাতে হবে।
২। দমকল বাহিনী আসা পর্যন্ত যদি প্রতিষ্ঠানে
ফায়ার ফাইটিং দল না থাকে বা প্রতিষ্ঠান ছুটির পরে বা বন্ধের দিনে অগ্নি দূর্ঘটনা ঘটলে
ইনচার্জ বা সুপারভাইজার অধীনস্থ গার্ডদের সাথে নিয়ে প্রশিক্ষণে শিখানো কৌশল প্রয়োগ
করে তথা পানি, বালি ও ফায়ার এক্সটিংগুইশার দিয়ে আগুন নিভানোর চেষ্টা করতে হবে।
৩। অধীন্থ গার্ডদেরকে সর্বোচ্চ সতর্কতা ও সাবধনতা
অবলম্বন করে নিজ নিজ দায়িত্ব সঠিকভাবে পালনের নির্দেশ দিতে হবে।
৪। প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে নিয়োজিত নিরাপত্তা
কর্মকর্তাকে স্থানান্তরসহ অন্যান্য কাজে সহায়তা করতে হবে।
৫। কর্ডন পাটিকে সহায়তা করতে হবে।
৬। জরুরী বহির্গমন পথ খুলে দিতে হবে।
৭। নিরাপদ এবং নিদিষ্ট স্থান তথা এ্যাসেম্বলী
পয়েন্ট বা মাস্টার পয়েন্টে সমবেত হওয়ার জন্য অনুরোধ জানাতে হবে।
৮। অফিসে যাতে কোন লোক অবশিষ্ট না থাকে এজন্য
সম্ভব হলে অফিস ত্যাগের পূর্বে সালাত ঘর/প্রার্থনা কক্ষ, বাথ রুম ইত্যাদি চেক করে দেখতে
হবে।
অগ্নিকান্ডের পরবর্তী করণীয়
অগ্নিকান্ড ছোট হোক আর রড় হোক অগ্নিকান্ডের
পরে দায়িত্বপূর্ণ এলাকার চতুর্দিকে সর্বদা সতর্ক ও জাগ্রত থেকে দায়িত্ব পালন করতে হবে।
এসময় পোস্ট থেকে মালামাল চুরি হওয়ার সম্ভাবনা বেশী থাকে। তাই অধীনস্থ গার্ডদের সঠিকভাবে
দায়িত্ব পালনের নির্দেশনা দিতে হবে। রাত্রীকালীন টহল ডিউটি বাড়াতে হবে।
সিকিউরিটি গার্ড/নিরাপত্তা প্রহরীর করনীয়
১। সিকিউরিটি গার্ড ইনচার্জ/সুপারভাইজার এর
নির্দেশনা মোতাবেক দায়িত্ব পালন করতে হবে। ইনচার্জ/সুপারভাইজার অনুপস্থিত থাকলে বা
না থাকলে গার্ড নিজেই পুলিশ স্টেশন ও ফায়ার সার্ভিসসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ফোন করে
আগুন লাগার বিষয়টি জানাতে হবে। এছাড়া ৯৯৯ এ ফোন করেও বিষয়টি অবগত করা যেতে পারে।
২। অগ্নি দূর্ঘটনা দেখার সাথে সাথে আগুন আগুন
বলে চিৎকার দিতে হবে এবং ঘন ঘন বাঁশী বাজাতে হবে। হাতের নিকট ফায়ার এলার্ম সুইচ থাকলে
তা টিপে সকলকে ফায়ার সংকেত জানাতে হবে।
৩। অগ্নি দূর্ঘটনা দেখার সাথে সাথে পরিস্থিতি
বুঝে দ্রুত মেইট গেইট খুলে দিতে হবে।
৪। মেইন গেইট খুলে দেয়ার পর বহিরাগত কাউকে
অফিসে প্রবেশ করতে দেয়া যাবে না।
৫। চতুর্দিকে কড়া নজর রাখতে হবে যেনো কোনো
সম্পদ চুরি না হয়।
৬। পুলিশ এবং ফায়ার সার্ভিস এর গাড়ি যাতে সহজেই
ভিতরে প্রবেশ করতে পারে সে জন্যে কর্ডন পার্টিকে সহযোগীতা করতে হবে।
৭। ভিতরের গাড়িগুলো দ্রুত গেইটের বাহিরে নিয়ে
যেতে সহযোগীতা করতে হবে।
৮। গাড়ি পার্কিং এর সময় গাড়ির সম্মুখভাগ বহির্গমন
মুখী করে রাখতে ড্রাইভারকে অনুরোধ করতে হবে।
৯। অগ্নিকান্ডের সময় লিফট ব্যবহার হতে সকলকে
বিরত রাখতে হবে।
১০। সর্বোপরি অগ্নিকান্ড হতে দেখলে প্রশিক্ষণে
শিখানো কৌশলগুলো যথা, পানি, বালি ও ফায়ার এক্সটিংগুইশার ব্যবহার করে আগুন নিভানোর চেষ্টা
করতে হবে।
১১। জরুরী পরিস্থিতিতে ইনচার্জ / সুপারভাইজার
বা উর্দ্ধত্বন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা মোতাবেক সর্বদা সতর্ক ও সাবধনতার সাথে দায়িত্ব
পালন করতে হবে। এসময় নজরদারী বাড়াতে হবে।
১২। বিপদকালীন পোস্ট খালী রেখে কখনই এদিক ওদিক
যাওয়া যাবে না কিংবা পরবর্তী গার্ড না আসা পর্যন্ত পোস্ট খালী রেখে চলে যাওয়া যাবে
না।
আগুনের
প্রকারভেদ
উৎস অনুসারে আগুনের প্রকারভেদ
ভারতীয় স্টান্ডার অনুসারে আগুন সাধারনত চার প্রকার। যেমনঃ-
(১) Class A (Solid)
(২) Class B (Liquid)
(৩) Class C (Gas)
(৪) Class D (Metal)
Class A (Solid)
এই ধরনের আগুন সাধারনত কঠিন দাহ্য বস্তু দ্বারা যে সমস্ত আগুন লেগে থাকে তাকে Class A ফায়ার বলা হয়। দৈনন্দিন ব্যবহৃত যে কোনো দাহ্য কঠিন বস্তু যেমন- কাঠ, কাগজ, প্লাস্টিক, কাপড়ের আগুন এই শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত।
Class B (Liquid)
দাহ্য তরল পদার্থ দ্বারা যে সমস্ত আগুন লেগে থাকে তাকে Class B ফায়ার বলে।
যেমন: পেট্রোল, ডিজেল, থিনার, তেল, পেইন্ট, অলিভ ওয়েল, স্প্রিট, কেমিক্যাল ইত্যাদি।
Class C (Gas)
জ্বলনশীল গ্যাস যেমন, প্রোপেন, বুটেন, মিথেন, আরগন, হিলিয়াম ইত্যাদি গ্যাস দ্বারা যে সমস্ত আগুন লেগে থাকে তাকে Class C ফায়ার বলা হয়। যেমন. এলপিজি, সিএনজি, প্রোপেন, বুটেন, মিথেন, আরগন, হিলিয়াম ইত্যাদি।
ইলেক্ট্রিক ফায়ারও Class C অন্তর্ভুক্ত। যে কোনো ইলেকট্রিক্যাল ইকুইপমেন্ট যেমন-জেনারেটার/মোটর, ট্রান্সফর্মারের আগুন এই শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত।
Class D (Metal)
জ্বলনশীল ধাতু যেমন. ম্যাগনেসিয়াম, টাইটেনিয়াম, এলুমিনিয়াম সোডিয়াম ইত্যাদি দ্বারা যে সমস্ত আগুন লেগে থাকে তাকে Class D ফায়ার বলা হয়।
অগ্নি নির্বাপন উপাদানসমূহ
অগ্নি নির্বাপন যন্ত্রের ব্যবহার বিধি জানার আগে প্রথমে জানতে হবে অগ্নি নিয়ন্ত্রনের উপাদানসমূহ কি কি?
আমরা সাধারণত তিনটি মাধ্যম বা উপাদানের সাহায্যে
অগ্নি নিয়ন্ত্রণ করতে পারি। যেমনঃ-
ক। পানি।
খ। বালি ও
গ। অগ্নি নির্বাপন যন্ত্র।
অগ্নি নির্বাপন যন্ত্রের পরিচিতি, প্রকারভেদ ও তার ব্যবহার
অগ্নি নির্বাপন যন্ত্রের পরিচিতি
অগ্নিনির্বাপন যন্ত্রের বিভিন্ন অংশসমূহ
১। হাই প্রেসার সিলিন্ডার।
২। অপারেটিং লিভার কাম হ্যান্ডেল বা ক্যারিং
হ্যান্ডেল।
৩। সেফটি পিন বা ক্লিপ।
৪। প্রেসার মিটার বা গেজ।
৫। ডিসচার্জ হোস পাইপ।
৬। স্প্রে নজেল।
৭। এ্যালুমিনিয়াম সালফেট কারট্রিজ।(সিলিন্ডার
এর ভিতরের অংশ)।
৮। টেম্পার সিল।
ফায়ার এক্সটিংগুইশার বা
অগ্নি নির্বাপক যন্ত্রের প্রকারভেদ
আগুনকে প্রতিরোধ করার জন্য মূলত চার ধরণের ফায়ার এক্সটিংগুইশার ব্যবহার করা হয়ে থাকে। যা সাধারনত বড় বড় শপিং মলে, স্কুল কলেজে, দোকান ও পেট্রোল পাম্পের দেয়ালে টাঙানো বা নিচে রাখা হয়।
(১) Water
Type Extinguisher.
(২) Foam
Type Extinguisher.
(৩) Gas
Type Extinguisher.
(৪) Powder
Type Extinguisher.
Water Types Fire Extinguisher
প্রথম দিকে এই ধরণের এক্সটিংগুইশার বেশী দেখা যেতো। বর্তমানে এটি খুব কম দেখা যায় কারণ এই ধরণের এক্সটিংগুইশার সব ধরণের ফায়ারের ক্ষেত্রে উপযোগী না। তবে এই ধরণের এক্সটিংগুইশার এর দাম অন্যগুলোর চেয়ে কম। এটি কুলিং পদ্ধতিতে আগুনকে নিভায়। মূলত এটি ক্লাস এ টাইপ আগুন নিভানোর কাজে ব্যবহার করা হয়।
Foam Types Fire
Extinguisher
এই ধরণের এক্সটিংগুইশার সাধারণ তেল বা ক্যামিক্যাল দ্বারা গঠিত যে সমস্ত আগুন লাগে সেগুলো নেভানোর জন্য উপযোগী। এটি ক্লাস বি টাইপ আগুন নেভাতে ব্যবহার করা হয়। পূর্বে যে ফোম টাইপ এক্সটিংগুইশার ছিল তাতে সোডা মিশ্রিত জলে এলুমিনিয়াম সালফেট মিশ্রিত করে ফোম টাইপ এক্সটিংগুইশার তৈরী করা হতো। কিন্তু বর্তমানে ৯৫%-৯৭% জলে ৫% -৩% AFFF (Aqueous Film Foaming Foam) Solution মিশ্রিত করে ফোম টাইপ এক্সটিংগুইশার তৈরী করা হয়। এটি Smothering পদ্ধতিতে আগুনকে নেভায়।
Gas Types Or CO2 Fire Extinguisher
এটি অন্যান্য এক্সটিংগুইশার এর তুলনায় আকারে লম্বা হয়। ডিসচার্জ হর্ন থাকার জন্য এটিকে সহজে চেনা যায়। যেহেতু এটির মধ্যে কার্বন ডাই অক্সাইড থাকে সেহেতু এটিকে CO2 Type Extinguisher বলে। এটি মাল্টিপারপাস এক্সটিংগুইশার। ক্লাস এ, বি, সি, ডি সব ধরণের ফায়ারে এটি ব্যবহার করা হয়। এটি দাহ্য বস্তুকে অক্ষত অবস্থায় নিভিয়ে দেয়। অন্যান্য এক্সটিংগুইশার এর তুলনায় এটি দামী হয়।
Powder Types Fire
Extinguisher (ABC Types Fire Extinguisher or DCP Types Fire Extinguisher)
এখনকার সময়ে সবচেয়ে বেশী ব্যবহৃত হওয়া এই ফায়ার এক্সটিংগুইশার। বেশীরভাগ জায়গায় এই ধরণের এক্সটিংগুইশার দেখা যায়। Powder Types Fire Extinguisher বা DCP
(Dry Chemical Powder) Type Extinguisher বলা হয়। এই ধরণের এক্সটিংগুইশারে সোডিয়াম বাই কার্বনেটের সংমিশ্রণ পাউডার আকারে থাকে। যেহেতু এটি ক্লাস এ, বি, সি আগুন নেভাতে সক্ষম তাই এটিকে এবিসি টাইপ এক্সটিংগুইশারও বলে।
অগ্নিনির্বাপন যন্ত্র ব্যবহারের নিয়মাবলী
প্রথমঃ অগ্নিনির্বাপন যন্ত্রটি হাতে নেয়ার পর প্রথমেই
ঝেঁকে নিতে হবে।
দ্বিতীয়ঃ এরপর আগুন যেখানে লেগেছে সেই জায়গায় বহন করে
নিতে হবে।
তৃতীয়ঃ ফায়ার এক্সটিংগুইসার সব সময় বাতাসের অনুকূলে
থেকে প্রয়োগ করতে হবে। যাতে কেমিক্যাল পাউডার বা গ্যাস বা ফোম উড়ে এসে নিজের গায়ে না
পড়ে।
চতুর্থঃ আগুনের উৎপত্তি স্থলের সর্বোচ্চ ২ মিটার
দূর থেকে ফায়ার এক্সটিংগুইসার প্রয়োগ করতে হবে।
পঞ্চমঃ এরপর অগ্নিনির্বাপন যন্ত্রের হ্যান্ডেল ডান
হাতে ধরে বাম হাত দিয়ে টান দিয়ে সেফটি পিন খুলে ফেলতে হবে।
ষষ্ঠঃ এরপর বাম হাতে হোস পাইপ আগুনের দিকে তাক (যে
বস্তুটি জ্বলে) করে ডান হাত দিয়ে অপারেটিং লিভার নিচের দিকে চাপ দিতে হবে যাতে নজল
দিয়ে গ্যাস অথবা ফোম বেরিয়ে আসে।
নির্গত
গ্যাস আগুনের শিখা লক্ষ্য করে ছাড়লে তা কাজে আসবে না।
সপ্তমঃ গ্যাস বের হওয়ার সাথে সাথে হোস পাইপটি
ডানে-বায়ে নাড়াতে হবে (ঝাড়ু দেয়ার মত করে) যাতে করে চারপাশ থেকে বাষ্প উড়ে চলে যায়।
আর এই কাজটা করতে হবে নিরাপদ দূরত্বে থেকে এবং আস্তে আস্তে সামনে এগিয়ে যেতে হবে যখন
আগুন নিভতে শুরু করবে।
প্রেসার মিটার
কোনো
কোনো অগ্নিনির্বাপন নির্বাপন যন্ত্রের মুখে চাপ নির্দেশক মিটার থাকে। অগ্নিনির্বাপন
যন্ত্রের গায়ে ব্যবহার নির্দেশিকা দেয়া থাকে। এই নির্দেশিকা দুর্ঘটনা ঘটার আগেই ভালভাবে
পড়ে নিতে হবে। কারন কিভাবে ব্যবহার করতে হয় তা জানা না থাকলে প্রয়োজনের সময় সেটা ব্যবহার
করা হয়তো সম্ভব নাও হতে পারে।
সূত্র অনুসারে কাজ করা (PASS)
অগ্নি নির্বাপন যন্ত্র ব্যবহার করার সময় একটা
পর্যায়ক্রম মেনে চলতে হয়। যা আমরা সূত্র হিসেবে লিখতে পারি। যেমনঃ-“PASS”
P-Pull
A-Aim
S-Squeeze
S-Sweep
সতর্কতা
ফায়ার এক্সটিংগুইসার একবার ব্যবহার হয়ে গেলে
একই সাথে পুরোটাই ব্যবহার করে ফেলতে হয়। এটি দ্বিতীয়বার ব্যবহারযোগ্য নয়।কোন কারণে
এক্সটিংগুইসার ব্যবহার করেও আগুনের নিয়ন্ত্রণ আনা না গেলে বা আগুন বেড়ে গেলে ধরে নিতে
হবে আগুনের প্রাথমিক অবস্থা পেরিয়ে গেছে। তখন অবশ্যই নিরাপদ অবস্থানে চলে যেতে হবে
এবং দ্রুত ফায়ারম্যানকে খবর দেয়ার ব্যবস্থা নিতে হবে।
কার্বন-ডাই-অক্সাইড টাইপ এক্সটিংগুইসার প্রয়োগ
করা হলে আগুন নিভুক বা না-নিভুক, ঘটনা স্থলে বেশি সময় অপেক্ষা করা যাবে না। নির্গত
কার্বন-ডাই-অক্সাইড খুব তাড়াতাড়ি আশ পাশে অবস্থানকারী ব্যক্তির শ্বাস-প্রশ্বাসে বিঘ্ন
সৃষ্টি করবে।
উন্মুক্ত স্থানে বা ধাবমান বাতাসযুক্ত স্থানে
কার্বন-ডাই-অক্সাইড টাইপ এক্সটিংগুইসার প্রয়োগ খুব একটা কার্যকর হয় না। এক্ষেত্রে বালি
বা পানি (প্রয়োজন অনুযায়ী) ব্যবহারই উত্তম।
Fire Safety Ball বা AFO (AUTO FIRE OFF) Plastic Fire Extinguisher
Ball
পরিচিতি
Fire Safety Ball এমনি এক ধরনের বল যা আগুনের
সংস্পর্শে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ফেটে গিয়ে আগুন নিভিয়ে দেয়।
Fire Safety Ball বহন করা, ব্যবহার করা খুব সহজ। বলটির ওজন ১.৫ কিলোগ্রাম
এবং বলের ব্যাস ১৪৪ মিমি। এটি ১০০% পরিবেশ বান্ধব এবং ১০০% বায়ো-ডিগ্রোয়েবল। এটির
কোন ওয়্যারিং নেই এবং কোন ড্যাক্টিং নেই, এটি দীর্ঘ ৫ বছর পর্যন্ত ব্যবহার করা যায়।
বলটি ছোট বাচ্চারাও পরিচালনা করতে পারে। এটি যেকোনো জায়গায় ব্যবহার করা যায়। যেমন,
অফিস আদালত, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, গাড়ী, রান্না ঘর, কারখানা, গুদাম, বৈদ্যুতিক ক্যাবিনেটসহ
সব জায়গা।
ব্যবহার
Fire Safety Ball বা AFO (AUTO FIRE OFF) Plastic Fire Extinguisher Ball ব্যবহার করা খুব সহজ। ইতোপূর্বে Fire Extinguisher যেসব জায়গায় রাখা হতো অথবা আগুনের উৎস স্থল সংলগ্ন স্থানে Fire Safety Ball রাখতে হবে। কোনো কারণে উক্ত স্থানে আগুন ধরে গেলে আগুনের একটা নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় পৌঁছার সাথে সাথে বলটি ফেটে যাবে এবং আগুন নিভিয়ে দেবে। অন্য কোথাও আগুন লাগলে বলটি দূর থেকে নিক্ষেপ করেও আগুন নিভানো যায়।
ব্যবহার
Fire Safety Ball তিন শ্রেণির আগুন নিভাতে
সাহায্য করে। যথাঃ
(ক) কঠিন
(খ) তরল ও
(গ) ইলেকট্রিক্যাল
বলটি যখন বিস্ফোরিত হয় তখন ৩৬০ ডিগ্রি কোণে
৭০ থেকে ৮০ বর্গ ফুট এলাকা জুড়ে আগুন নিভাতে
সক্ষম।
সবশেষেঃ
আগুন আমাদের নিত্য নৈমিত্তিক জীবনের সাথে ওতোপ্রতো
ভাবে জড়িত। আগুন ছাড়া আমাদের চলে না। আবার এক মুহুর্তের অসতর্কতা নষ্ট করতে পারে মূল্যবান
সম্পদ ও কেড়ে নিতে পারে অনেক অমূল্য প্রাণ। তাই আগুন ব্যবহারে যেমন সতর্ক হতে হবে তেমনি
আগুন যদি লেগেই যায় তাহলে কি করতে হবে তাও আমাদের ভাল ভাবে জানতে হবে।
আরটিভিতে আগুন লাগার পর সেনাবাহিনী হেলিকপ্টার
দিয়ে মানুষ উদ্ধার করতে গিয়েছিল কিন্তু হেলিকপ্টারের বাতাস সেই আগুনকে আরও বাড়াতে সাহায্য
করেছিল।
এখনও উঁচু ভবনে আগুন লাগলে আমরা ফায়ার সার্ভিসকে
দেখি জানালার গ্লাস ভাঙ্গতে। এতে করে আগুন আর আবদ্ধ থাকে না, প্রচুর অক্সিজেন সরবরাহ
আগুনকে আরও বহু গুনে বাড়িয়ে তোলে। কাজেই এ ধরনের সচেতনতা প্রফেশনালদের ক্ষেত্রেও জরুরী।
আগুন বিষয়ে গনমাধ্যমের উচিত ব্যাপক জন সচেতনতামূলক
পদক্ষেপ নেয়া। আর আমাদেরও ব্যক্তি উদ্যোগে কিছু পদক্ষেপ নেয়া দরকার। আমরা যারা এ বিষয়ে
জানি তারা আমাদের আশ পাশের জনগনকে সচেতন করে তুলতে পারি। আর প্রত্যেকের বাড়ি, দোকান
বা অফিসে অন্ততঃ একটা অগ্নিনির্বাপন যন্ত্র রাখা উচিত। প্রাথমিক খরচটা হয়ত একটু বেশি
এবং হয়তবা কখনোই এটা ব্যবহার হবে না, কিন্তু বিপদের সময় এই যন্ত্রটিই আপনার অনেক মূল্যবান
সম্পদ বাচিঁয়ে দেবে এবং রক্ষা করবে অমূল্য জীবন। তাই আসুন আগুন ব্যবহারে নিজে সতর্ক
হই এবং অন্যকেও সচেতন করে তুলি।
FIRE
FIRE এর মধ্যে চারটি অক্ষর আছে। চারটি অক্ষর দিয়ে
চারটি শব্দ হয়। যেমনঃ
F-Fast
I-Information
R-Rescue
E-Evacuation
অর্থাৎ আগুন লাগলে দ্রুত তথ্য পাচার করতে হবে।
লোকজনকে উদ্ধার করতে হবে এবং অগ্নিকান্ড স্থল খালি করতে হবে।
আমাদের সব সময় মনে রাখতে হবে আগুনের অপর নাম সর্বভৃক। অসতর্কতা ও অসাবধনতা বশত: কখনো আগুন লাগলে আর প্রথমেই যদি নিয়ন্ত্রণ করা না যায় তাহলে মূহুর্তেই যান ও মালের প্রচুর ক্ষতি হবে। তাই আগুন নিয়ে কখনো অবহেলা করতে নেই। আগুন নিয়ন্ত্রণের পূর্বে আমাদরেকে সব সময় আগুনের বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে। আমাদেরকে সব সময় খেয়াল রাখতে হবে যে, কোনোভাবেই আগুন লাগতে দেয়া যাবে না। আগুন লাগলেই ক্ষতি।
প্রশ্নোত্তর পর্ব
Written By
Md. Izabul Alam
Consultant & Specialist (Security, Training & Investigation)
01716508708
Gulshan-2, Dhaka.
…...............…............................
BCS সহ সরকারি বেসরকারি যেকোনো চাকরি পরীক্ষায় ১০০% প্রশ্ন কমন পেতে BBC এর উপর ক্লিক করুন
No comments:
Post a Comment