পেট্রোলিং ডিউটি ট্রেনিং মডিউল
নিরাপত্তামূলক কাজে নিয়োজিত Security Guard বা নিরাপত্তা কর্মীর উপর
অর্পিত দায়িত্ব পালনে পেট্রোলিং ডিউটি বা টহল
ভূমিকাঃ
পেট্রোলিং বলতে সাধারণত বাংলায় টহলকে বুঝায়।
পোস্ট ইনচার্জ বা পোস্ট সুপারভাইজার বা গার্ড তার ডিউটি সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য
দায়িত্বপূর্ণ এলাকায় পেট্রোলিং বা টহল খুবই জরুরী। কাজেই ডিউটিরত অবস্থায় কিভাবে টহল
দিতে হবে তা জানা আমাদের একান্ত প্রয়োজন। নিম্নে আমরা পেট্রোলিং বা টহল ডিউটির বিভিন্ন
পর্যায় আলোচনা করবোঃ
পেট্রোলিং বা টহল কাকে বলে?
পেট্রোলিং হচ্ছে দায়িত্বপূর্ণ এলাকা বা সমগ্র
পোস্ট সমন্ধে খবর বা সার্বিক পরিস্থিতি জানার প্রধান একটি কার্যকরী উৎস। পোস্টসমন্ধে
সঠিক খবরাখবর না থাকলে পোস্টের জন্য নির্ধারিত অর্পিত দায়-দায়িত্ব অনেক সময় সঠিক ভাবে
পালন করা সম্ভব হয় না।
অতএব আমরা বলতে পারি যে, নিরাপত্তায় নিয়োজিত
ব্যক্তিবর্গের যথা- গার্ড, পোস্ট সুপারভাইজার বা পোস্ট ইনচার্জ পোস্টে অর্পিত দায়িত্ব
সঠিকভাবে পালন করার মূল উদ্দেশ্যকে সহজতর করতে পোস্টের সমগ্র দায়িত্ব পূর্ণ এলাকায়
পর্যায়ক্রমে পায়ে হেঁটে বা গাড়ীতে করে ঘুরে
ঘুরে টহল দান করে নিরাপত্তা ব্যবস্থা পর্যবেক্ষন করে কোথাও কোনো নিরাপত্তা হুমকি আছে
কিনা তা তদারকি করে বিরাজমান নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে আরো অধিক শক্তিশালী ও কার্যকরী করার
প্রচেষ্টাকেই পেট্রোলিং বা টহল ডিউটি বলে।
পেট্রোলিং এর প্রকারভেদঃ
পেট্রোলিংকে প্রধানত চারটি ভাগে ভাগ করা যায়।
যা মূলত সশস্ত্র বাহিনী বা সামরিক বাহিনীতে অনুসরন করা হয়ে থাকে। যদিও এই ধরনের পেট্রোলিং
আমাদের কর্মক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়, তথাপি বিষয়টি সমন্ধে সাধারণ ধারণা থাকার জন্য এখানে
উল্লেখ করা হলো ।
১। পর্যবেক্ষন পেট্রোল।
২। সংঘাত মূলক পেট্রোল।
৩। রক্ষাকারী পেট্রোল।
৪। অবস্থানরত পেট্রোল।
উল্লেখ্য যে, আমরা পূর্বেই বলেছি যে, উল্লেখিত
পেট্রোলিং ডিউটি আমরা সাধারণত অনুসরণ করি না। তথাপি যেহেতু আমরা সামরিক বাহিনীর মতোই
নিরাপত্তা কাজে নিয়োজিত আছি সেহেতু আমাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব পালনের যে অবকাঠামো দেওয়া
হয়েছে তার প্রতি লক্ষ্য রেখে এবং ক্লায়েন্ট কর্তৃক প্রদত্ত দিক নির্দেশাবলী বা পরিবেশ
পরিস্থিতি মূল্যায়নে মূলত আমরা দুই ধরনের পেট্রোলিং ডিউটি কর্তব্যরত অবস্থায় অনুসরণ
করে থাকি।
১। গতিশীল পেট্রোল বা মোবাইল পেট্রোল।
২। স্থিতিশীল পেট্রোল বা স্টাটিক পেট্রোল।
গতিশীল পেট্রোল বা মোবাইল পেট্রোল
এই ধরনের পেট্রোল সাধারণত পায়ে হেঁটে অথবা
গাড়ীতে চড়ে অর্পিত দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে সম্পন্ন করতে হয়। যেমন- পোস্টের চারিদিকে
পায়ে হেঁটে সব কিছু ঠিক আছে কিনা তা পরীক্ষা করা। দায়িত্বপূর্ণ এলাকা অনেক বড় হলে পোস্ট
ইনচার্জ বা পোস্ট সুপারভাইজার সাব-পোস্টগুলোতে গাড়ী বা মোটর সাইকেল ব্যবহারের মাধ্যমে সমগ্র এলাকায় চলমান পেট্রোলিং কাজ সম্পন্ন করে থাকেন।
স্থিতিশীল পেট্রোল বা স্টাটিক পেট্রোল
এক স্থানে দাঁড়িয়ে থেকে দায়িত্বপূর্ণ এলাকা
পর্যবেক্ষন করা । যেমন- পোস্টে প্রধান গেইটে অবস্থান করে চারিপাশি সব সময় খেয়াল রাখার
মাধ্যমে দায়িত্বপালন করা। এই পেট্রোলিং প্রক্রিয়াকে আমরা দন্ডায়মান পেট্রোল বা স্ট্যান্ডিং
পেট্রোল হিসাবে চিহ্নিত করতে পারি। যেমন- অনেক সময় রাস্তার সংযোগ স্থলে গার্ড ডিউটি
দেওয়া হয় বা ব্রিজের সামনে গার্ড ডিউটি দেওয়া হয়। দন্ডায়মান পেট্রোল বা স্ট্যান্ডিং
পেট্রোল অবস্থায় চোখ, নাক ও কান খোলা রেখে দায়িত্ব পালন করতে হয়।
পেট্রোলিং ডিউটির উদ্দেশ্য
১। কর্তব্যরত অবস্থায় দায়িত্বপূর্ণ এলাকায়
চুরি, ডাকাতি বা দুষ্কৃতিকারীর কর্ম প্রচেষ্টা প্রতিহত করা ।
২। যে কোন ধরনের অপরাধ সংঘটিত হতে বাধা দান
করা।
৩। দায়িত্বপূর্ণ এলাকায় সকল বিষয়ের উপর নিজের
কর্তৃত্ব বা আদিপত্য বজায় রাখা।
৪। দায়িত্বপূর্ণ এলাকায় সঠিক চিত্র গার্ড সুপারভাইজারকে
সঠিকভাবে অবগত করা।
৫। নিরাপত্তা ব্যবস্থা কার্যকরী বা শক্তিশালী
করা।
৬। অর্পিত দায়িত্ব সততা, দক্ষতা, নিরপেক্ষতা
ও দৃঢ়তার সাথে পালন করা।
পেট্রোলিং বা টহল ডিউটির জন্য অপরিহার্য লক্ষ্যনীয় বিষয়াদি
১। টহল কাজে নিয়োজিত নিরাপত্তা কর্মীর ধৈর্য্যশীল
হওয়া উচিত, কেননা, টহল কাজ সম্পন্ন
করতে প্রায়ই সময় সাপেক্ষ ও বিরক্তিকর হয়ে থাকে।
২। উপায় উদ্ভাবনে নিপুন, উপস্থিত বুদ্ধি, বহুমুখী
ক্ষমতার অধিকারী এবং সর্তক হতে হবে।
৩। তার পর্যবেক্ষন শক্তি তীক্ষ্ণ ও পরিপক্ক
হতে হবে এবং প্রখর স্মরণশক্তি থাকতে হবে।
৪। শারীরিকভাবে যোগ্য ও তড়িৎ সিদ্ধান্ত নেয়ার
ক্ষমতা থাকতে হবে।
৫। ব্যক্তিগত ডিউটির সরঞ্জাম সঠিক ব্যবহার
জানতে হবে। যেমন-আর্টিসেট, টর্চ লাইট, লাঠি, বাঁশি ইত্যাদি।
৬। যে কোন ধরনের জরুরী অবস্থায় কি করণীয় তা
অবশ্যই জানতে হবে।
৭। সুপারভাইজার এর নিকট যদি টহল সর্ম্পকে বিশেষ
কোন পয়েন্ট বা নির্দেশনা থাকে, তাহলে গার্ড নির্দেশনাগুলো ভালোভাবে বুঝে নিয়ে টহলের
সময় তা নিশ্চিত করা।
৮। গার্ড টহল ডিউটি করার সময় পেশাদার মনোভাব
বজায় রাখবে,প্রথমত তার পোশাক-আশাক বা বাহ্যিক আবরণ এবং আচরণ অবশ্যই প্রশিক্ষনপ্রাপ্ত
নিরাপত্তা কর্মীর ন্যায় বাঞ্চনীয়।
৯। টহল ডিউটির সময় আচার আচরণ বা কর্তব্য পালন
প্রক্রিয়া এমন হওয়া উচিত যা দুষ্কৃতিকারীদের
মনোবলে আঘাত করে এবং কর্মতৎপরতার উপর নীতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
১০।টহলে নিজেদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনায় রাখা
এবং যে কোন আক্রমনে প্রতিরক্ষার প্রক্রিয়া জানা।
১১। রাতে টহল দেয়ার সময় কখনই একা বের হওয়া
যাবে না। কমúক্ষে দুইজন এক সাথে বের হতে হবে।
পায়ে হেঁটে টহল দেওয়ার সময় যে জিনিসগুলি লক্ষ্যনীয়
১। গার্ড টহল দেওয়ার সময় তার কতর্ব্যস্থলের
সকল দরজা, তালা, ভালভাবে পরীক্ষা করবে।
২। গার্ড টহল দেওয়ার সময় নিশ্চিত করবে যে,
নিরাপত্তা ব্যবস্থা শক্তিশালী করার জন্য যে সকল বাঁধা প্রদানকারী জিনিস আছে। যেমন-
গেইট, জানালা, সীমানা প্রাচীর, কাটাতারের বেড়া, ইত্যাদির কোন ক্ষতি সাধিত হয়েছে কিনা
এবং নিশ্চিত করবে সব কিছু অক্ষত অবস্থায় বিরাজমান।
৩। গার্ড টহল দেওয়ার সময় নিশ্চিত করবে যে,
নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার কল্পে পোস্টের চারিপাশে যে সকল নিরাপত্তা সহায়ক সরঞ্জাম
স্থাপন করা হয়েছে তা সঠিক স্থানে আছে এবং কোনোটি চুরি বা হারিয়ে যায়নি যেমন- নিরাপত্তা
বাতি।
৪। টহল দেওয়ার সময় যদি কোন যন্ত্রপাতি না পাওয়া
যায় বা কোন অসামঞ্জস্য পরিলক্ষিত হয় তখন তা গার্ড সুপারভাইজারকে জানাবে।
৫। গার্ড টহল ডিউটির সময় বিশেষত সীমানা প্রাচীরের
চারদিকে কোন গাছ প্রাচীরের কাছে বেড়ে উঠেছে কিনা, যা বেয়ে যে কেহ ভিতরে আসতে পারে এমন
কিছু পর্যবেক্ষন করবে ।
৬। টহল ডিউটির সময় মাঝে মাঝে বাঁিশ বাজাবে
এবং কমপক্ষে দুইজনে মিলে টহল ডিউটি সম্পন্ন করবে। প্রয়োজনে ৩০ মিনিট হইতে ১ ঘন্টা পর
পর দায়িত্বপূর্ণ এলাকায় টহল ডিউটি সম্পন্ন করবে।
৭। যদি অনেক বড় জায়গায় টহল দিতে হয় সেক্ষেত্রে
সমগ্র এলাকাটিকে পৃথক পৃথক জোন হিসাবে ভাগ করে কর্তৃপক্ষের নির্দেশ অনুসারে কার্য সম্পাদন
করতে হবে যা টহল ডিউটির শুরুর পূর্বেই নির্ধারণ করতে হবে।
৮। টহল ডিউটির সময় বিশেষত রাতের বেলায় যে কোন
ধরনের অস্বাভাবিক আওয়াজ সনাক্ত করার চেষ্টা করতে হবে। যেমন- পায়ে চলার শব্দ, তার কাটার
শব্দ, মাটি কাটার শব্দ, টিনের উপর দিয়ে হাটার শব্দ, মানুষের হাঁটার শব্দ ইত্যাদি। অস্বাভাবিক
কোন ঘ্রান বা গন্ধ সনাক্ত করতে হবে।
৯। টহল দেয়ার সময় সীমানা সংলগ্ন কোনো অস্বাভাবিক
বস্তু পরিলক্ষিত হলে সাথে কর্তৃপক্ষকে তা জানাতে হবে। তবে বিচলিত হওয়া কিংবা হৈচৈ করা
যাবে না।
বাসা বা অফিসে পেট্রোলিং ডিউটি করার সময় লক্ষনীয় বিষয়
১। বাসা বাড়িতে পেট্রোল ডিউটি করার সময় সমগ্র
বাসার সীমানা প্রাচীর, কাটাতার, গ্রিল বা ফেন্স এবং আশেপাশের এলাকায় নজর রেখে প্রতি
আধা ঘন্টা পর পর টহল দিতে হবে।
২। বাসা/ অফিসের গার্ড টহল ডিউটি সঠিকভাবে
সম্পন্ন ও গ্রহনযোগ্য করার জন্য সব সময় বাঁশি, লাঠি ও টর্চ লাইট সঙ্গে রাখতে হবে। রাতে
কখনই ঘুমানো যাবে না। গার্ড পোস্টে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় চোখ, কান খোলা রেখে অতি সতর্কতার
সহিত দায়িত্ব পালন করতে হবে।
৩। কোনো শব্দ পাওয়ার সাথে সাথে বাঁশি বাজিয়ে
নিজের অবস্থান জানান দিতে হবে এবং সেদিকে লক্ষ্য করে টর্চ জ্বালাতে হবে।
টহল ডিউটির সহায়ক সরঞ্জামাদি
সাধারণত টহল ডিউটির শুরু করার পূর্বে নিরাপত্তায়
নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গের যথাযথ টহল ডিউটির সহায়ক সরঞ্জামাদি সাথে থাকা বাঞ্চনীয় । নিম্নে
কিছু এই ধরনের সরঞ্জামাদির বিষয়গুলি উল্লেখ করা হলোঃ
১। প্রয়োজনমত ইউনিফর্ম বা শীত বস্ত্র বা রেইনকোর্ট
।
২। সেফটি বুট, সেফটি গ্লাস, হেলমেট, ইত্যাদি।
৩। বাঁশি ।
৪। লাঠি বা বেটন।
৫। আর্টি সেট বা বেতার যন্ত্র / মোবাইল ফোন
।
৬। বাইনোকোলার।
৭। টর্চ লাইট / পর্যাপ্ত লাইটিং ব্যবস্থা।
৮। গাড়ী বা মটর সাইকেল প্রয়োজন অনুসারে।
৯। পানির বোতল।
১০। ওয়াক ওয়ে।
উপসংহারঃ টহল ডিউটির মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে, চলমান বা দন্ডায়মান
অবস্থান থেকে চোখ নাক কান খোলা রেখে দায়িত্বপূর্ণ এলাকার চতুর্দিকে পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে
শত্রুপক্ষকে সনাক্ত করা বা শত্রুর উপর নজরদারী রাখা যাতে সিকিউরিটি গার্ডের চোখ ফাঁকি
দিয়ে মালিক পক্ষের জান মাল ও তথ্যের কোনো ক্ষতি সাধন না করতে পারে।
প্রশ্নোত্তর পর্ব:
?
Written
By
Md.
Izabul Alam
Consultant
& Specialist (Security, Training & Investigation)
Author of
Many Security Books.
সরকারি
বেসরকারি চাকরি এবং যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে
ভর্তি পরীক্ষয় ১০০% প্রশ্নোত্তর কমন পেতে এর উপর ক্লিক করুন।
No comments:
Post a Comment