তদন্ত প্রতিবেদন লেখার নিয়ম- মো: ইজাবুল আলম-সাবেক গোয়েন্দা।
তদন্ত
প্রতিবেদন লেখার নিয়ম
প্রতিবেদন:
প্রতিবেদন বলতে কোন নির্দিষ্ট বিষয় সম্পর্কে
প্রয়োজনীয় তথ্যানুসন্ধান ভিত্তিক বিবরণী বোঝায়। কোন ঘটনা,তথ্য বা বক্তব্য সম্পকে সুচিন্তিত
বক্তব্য প্রদানই প্রতিবেদন । প্রতিবেদন কথাটি ইংরেজি রিপোর্ট কথাটির বাংলা পারিভাষিক
শব্দ । তবে প্রতিবেদন কথাটির পাশাপাশি ইংরেজি রিপোর্ট শব্দটি ও বাংলা ভাষায় প্রচলিত
আছে । প্রতিবেদন রচনাকারীকে বলা হয় প্রতিবেদক । সাধারনত প্রতিবেদকের দায়িত্ব হল কোন
বিষয়ের তথ্য উপাত্ত ,সিদ্ধান্ত ,ফলাফল ইত্যাদি খুঁটিনাটি অনুসন্ধানের পর বিবরণী তৈরি
করে কোন ব্যক্তি ,প্রতিষ্ঠান বা কোন কর্তৃপক্ষের বিবেচনার জন্য পেশ করা।
প্রতিবেদন বিশেষ বিষয় বা কাজের বিশ্লেষনী
র্বণনা প্রকাশ পায়। প্রতিবেদনে কাজের নির্দেশ,পরামর্শ ,সিদ্ধান্ত ইত্যাদি সম্পর্কে
ও মন্তব্য করা হয়। প্রতিবেদন বিশেষ কৌশল বা পদ্ধতি অবলম্বনে রচিত বিবৃত বা বিবরণী বোঝায়
। তথ্যগত ও সত্যনিষ্ঠ বিবরনীই প্রতিবেদন। প্রতিবেদন হলো কয়টি সুসংগঠিত তথ্যগত বিবৃতি
যা কোন বক্তব্য সম্বন্ধে সংক্ষিপ্ত অথচ সঠিক বর্ণনা বিশেষ। একে যথেষ্ট সতর্কতা ,পর্যবেক্ষণ,
পর্যালোচনা ,গবেষনা ও বিচার বিশ্লেষণের পর তৈরি করতে হয় । প্রতিবেদনের মাধ্যমে কোন
বিষয়ে পুন:উপস্থাপন করা হয়ে থাকে ।
প্রতিবেদনের উদ্দেশ্য:
প্রতিবেদনের উদ্দেশ্য হল নির্দিষ্ট কোন
বিষয়বস্তু সর্ম্পকে কর্তৃপক্ষকে সুস্পষ্টভাবে অবহিতকরা। এর বক্তব্য হবে নিরপেক্ষতার
বৈশিষ্ট্য অনুসারী।এতে জটিল বিষয়ের ব্যাখ্যা থাকবে । প্রতিবেদনে কোন বিষয় সম্পর্কে
মতামত প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদন কাজের সমন্বয় সাধন ও সিদ্ধন্ত গ্রহনে সহায়তা করে।
প্রতিবেদনের বৈশিষ্ট্য:
প্রতিবেদন হতে হবে নির্দিষ্ট কাঠামো সম্বলিত
এবং নিয়মানুযায়ী তা রচিত হতে হবে। কোন নির্দিষ্ট ঘটনা অবলম্বনে তা লিখতে হয় এবং তার
বক্তব্য হবে যুক্তি যুক্ত প্রতিবেদন নিরপেক্ষভাবে রচনা করতে হয় এবং তাতে লেখকের ব্যক্তিগত
আবেগের স্থান লাভের কোন সুযোগ নেই। প্রতিবেদনের বক্তব্যের সমাপ্তি ঘটবে উপসংহার ও সুপারিশের
মাধ্যমে।
প্রতিবেদন লেখায় অনুসরণীয় বৈশিষ্ট্যগুলো:
১।সুনির্দিষ্ট কাঠামো:
কোন প্রতিবেদন প্রণয়নকালে একটি নির্দিস্ট
কাঠামো অনুসারে করতে হয়। এতে থাকবে একটি শিরোনাম , প্রাপকের নাম-ঠিকানা ,আলোচ্যবিষয়ের
সূচিপত্র , বিষয়বস্তু, তথ্যপঞ্জি, স্বাক্ষর , তারিখ ইত্যাদি।
২।সঠিক তথ্য:
প্রতিবেদন রচিত হবে সঠিক তথ্যের ওপর ভিত্তি
করে । কথ্যানুসন্ধানই হল প্রতিবেদনের প্রধান কাজ। সেজন্য তথ্যের যথার্থতার ওপর বিশেষ
গুরুত্ব প্রদান করতে হবে।
৩।সম্পূর্ণতা:
প্রতিবেদন যেসব তথ্য পরিবেশিত হবে তা হতে
হবে নির্ভুল সম্পূর্ণ ও নির্ভরযোগ্য।
৪।স্পষ্টতা:
প্রতিবেদনের বক্তব্যের মধ্যে স্পষ্টতা
থাকবে যাতে বক্তব্য বিষয় সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারনা লাভ সহজ হয়।
৫।সংক্ষিপ্ততা:
প্রতিবেদন হবে বাহুল্যবর্জিত ।বক্তব্য
হবে সুনির্বাচিত এবং কোন অনাবশ্যক বক্তব্য সংযোজিত হতে পারেনা
৬।সুন্দর উপস্থাপনা:
প্রতিবেদনের উপস্থাপন হবে আকর্র্ষণীয় ।এর
বক্তব্য সহজ সরল ভাষায় প্রকাশ পায়।
৭।সুপারিশ:
প্রতিবেদনে উপসংহারে সুপারিশ সংযোজন করতে
হবে যাতে উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ সমস্যা সম্পর্কে সিদ্ধান্ত গ্রহন করতে পারে ।
প্রতিবেদনের প্রকারভেদ:
প্রতিবেদন নানান প্রকার হয়ে থাকে।বিষয়ের
বৈচিত্র্য অনুযায়ী প্রতিবেদনের ওবৈচিত্র্য অনুযায়ী প্রতিবেদনেরো বৈচিত্র্যের সৃষ্টি
হয়।বিভিন্ন প্রকার প্রতিবেদনের মধ্য উল্লেখযোগ্য হল:রীতিসিদ্ধ বা ফর্মাল প্রতিবেদন
,রিতিবিরুদ্ধ বা িনফর্মাল প্রতিবেদন ,নিয়মিত প্রতিবেদন ,সাময়িক প্রতিবেদন ,বিশেষ প্রতিবেদন
,নির্বাহীপ্রতিবেদন ,প্রার্থিত প্রতিবেদন ,অপ্রার্থিত প্রতিবেদন ,কোম্পানিপ্রতিবেদন
ইত্যাদি ।এছাড়া ও আছে সংগঠনের প্রতিবেদন ,সরকারি প্রতিবেদন ,সংবাদপত্রের প্রতিবেদন
ইত্যাদি।
প্রতিবেদনের প্রয়োজনীয়তা:প্রশাসনিক কার্যক্রম
ব্যবসা -বানিজ্য ,আইন আদালতো অন্যান ক্ষেত্রে প্রতিবেদনের বিশেষ গুরুত্বো প্রয়োজনীয়তা
রয়েছে। আগে সাধারনত বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত বিবরণীকেই প্রতিবেদন বলে অবহিত
কলা হয়েছে বা হত। কিন্তু বর্তমান কালে সমাজ জীবনের বিচিত্র জটিলতার প্রেক্ষিতে নানা
জাতের প্রতিবেদনের গুরুত্ব বেড়েছে ।এর উপযোগিতা মানুষের দৈনিক জীবনে ওব্যাপকভাবে বৃদ্ধি
পেয়েছে।প্রতিবেদন থেকে আলোচিত বিষয় সম্পর্কে খুঁটিনাটি তথ্য অবগত হ ওয়া যায়।প্রতিবেদনের
মাধ্যমে কোন বিষয়ে পরি কল্পনা গ্রহন, সংগঠন ,নির্দেশনা ,নিয়ন্ত্রণ,ফলাফল নিরূপণ,সমন্বয়
সাধন ইত্যাদি কাজে সহায়তা পাওয়া যায়্ ।
প্রতিবেদনের বিভিন্ন অংশ :
প্রতিবেদনের তিনটি অংশ হল :
১।প্রারম্ভিক অংশ
২।প্রধান অংশ
৩।পরিশিষ্ট।
১।প্রারম্ভিক অংশ:
প্রতিবেদনের প্রারম্ভিক অংশে থাকে প্রতিবেদনের
মুল শিরোনাম ।প্রাপকের নাম ঠিকানা ,সূত্র বিষয়ের সংক্ষিপ্ত সার নির্দেশক কথা।
২। প্রতিবেদনের প্রধান অংশ:
প্রতিবেদনের প্রধান অংশে থাকে বিষয় সম্পর্কে
ভূমিকা ,মূল প্রতিবেদন ,উপসংহার ও সুপারিশ।
৩। পরিশিষ্ট অংশ:
প্রতিবেদনের পরিশিষ্টে থাকে তথ্য নির্দেশ,গ্রন্থ
বিবরণী,কমিটির তালিকা ও আনুসঙ্গিক বিষয়াদি। প্রতিবেদন রচনার পদ্ধতি সম্পর্কে অবহিত
থাকলে উত্তম প্রতিবেদন প্রণয়ন করা সম্ভব।এসব পদ্ধতির মধ্যে আছে প্রতিবেদনের আকার ,শ্রেণী,
বৈশিষ্ট্য, রীতিনীতি ও বিন্যাস।
প্রতিবেদনের আকার সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট
কোন সীমাবদ্ধতা নেই। বিষয়ের গুরুত্ব ও পরিধি অনুসারে তা ছোট হতে পারে ,বড়ও হতে পারে
। ছোট আকারের প্রতিবেদনে শিরনাম, বিষয়বস্তু সুপারিশ ও উপসংহার থাকে।বড় প্রতিবেদন পুস্তককারে
হতেপারে এবং তাতে বিভিন্ন প্রকারের সারণি ,চিত্র, নকশা, ছক, পরিশিষ্ট, তথ্যনির্দেশ
ইত্যাদি সহ বর্ণনা ও ব্যাখ্যা সংযুক্ত করা হয়।
তদন্তমূলক কার্যক্রমে একজন
প্রতিবেদকের বৈশিষ্ট্যাবলী
একজন সফল ও স্বার্থক
প্রতিবেদককে নিম্নবর্ণিত বৈশিষ্ট্যের অধিকারী হতে হয়ঃ
·
অপরাধ বা রহস্যজনক কর্মকাণ্ড মনোঃবিশ্লেষণের মাধ্যমে প্রমাণ করবেন।
·
রহস্যমূলক কর্মকাণ্ডে সর্বক্ষণ সম্পৃক্ত থেকে তীক্ষ্ণ ও শাণিত মেধা
প্রয়োগ করবেন।
·
উপস্থিত বিচার-বুদ্ধি যুক্তিসঙ্গতভাবে প্রয়োগের মাধ্যমে কাঙ্খিত ব্যক্তি
বা বস্তুকে জনসমক্ষে উপস্থাপন করবেন।
·
নির্দোষ ব্যক্তি যাতে ক্ষতিগ্রস্ত বা দোষী না হন এবং প্রকৃত দোষীকে
আইনে সোপর্দ করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
·
অপরাধী বা ঘটনার ছোট্ট ক্লু, সঙ্কেত বা চিহ্নের সাহায্যে অপরাধের গতি-প্রকৃতি
ও অবস্থান চিহ্নিত করবেন।
Comments
Post a Comment