Wednesday, April 3, 2019

HEALTH & SAFETY AND TRAFFIC LAW & ROAD SAFETY (একটি প্রশিক্ষণ সহায়িকা)


HEALTH & SAFETY

কর্মক্ষেত্রে স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও নিরাপত্তা
CHIEF TRAINING OFFICER: MD. IZABUL ALAM
শিক্ষণ ফলাফলঃ
১। কর্মক্ষেত্রে কি ধরনের স্বাস্থ্য ঝুঁকি রয়েছে সে সম্পর্কে অবগত হতে পারবেন।
২। কর্মক্ষেত্রে স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য কী কী সরঞ্জামাদি ব্যবহার করতে হবে তা জানতে পারবেন।
৩। নিরাপত্তা সম্পর্কে নিরাপত্তা প্রহরী/সুপারভাইজার/শ্রমিক ও ক্লায়েন্ট/মালিকসহ সকল পক্ষের দায়-দায়িত্ব জানতে পারবেন।
৪। জরুরী অবস্থা, দুর্ঘটনা, ভাল হাউজকিপিং, প্রাথমিক চিকিৎসা, নিরাপত্তা চিহ্ন ও এর ব্যবহার এবং ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জামাদির প্রতীক, সরঞ্জামাদি ও এর ব্যবহার সম্পর্কে জানতে পারবেন।
৫। পেশাগত নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্য নীতি সম্পর্কে জানতে পারবেন।
৬। ট্রাফিক আইন ও রোড সেফটি সম্পর্কে জানতে পারবেন।

স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও নিরাপত্তার বিধান, ভূমিকা ও দায়িত্বঃ

যে কোন নির্মাণ কাজ ও নির্মাণ সংশ্লিষ্ট যে কোন কাজের ক্ষেত্রে দূর্ঘটনার সম্ভাবনা থাকে, কাজেই এই ধরনের কর্মক্ষেত্রে স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও নিরাপত্তার বিষয়টি অত্যামত্ম গুরুত্বপূর্ণ। যদি আপনি সতর্ক না হন তবে দূর্ঘটনা ঘটতে পারে অথবা আপনি যে যন্ত্রপাতি বা মালামাল ব্যবহার করছেন তা আপনার স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। নিজেকে সুস্থ্য ও নিরাপদ রাখার মাধ্যমে আপনি সুস্থ্য এবং আঘাত মুক্ত অবস্থায় দীর্ঘদিন কর্মক্ষম থাকতে পারেন।
যদিও আজকাল নির্মাণ সংক্রান্ত কাজ অতীতের তুলনায় অনেক নিরাপদ হয়েছে তথাপি যথাযথ সর্তকতার অভাবে প্রতিবছর ছাদ থেকে পড়ে, রঁশি ছিড়ে বা বিদ্যুৎ পৃষ্ঠ হয়ে দেশের বিভিন্নস্থানে বহুলোক দূর্ঘটনায় মারা যাচ্ছে। মৃত্যু ছাড়া দূর্ঘটনার কারণে অংঙ্গহানি হওয়া, পঙ্গু হয়ে যাওয়া, চর্মরোগে আক্রান্ত হওয়া বা শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত হওয়া লোকের সংখ্যা নিতান্ত কম নয়। উপার্জনের মাধ্যমে পরিবারের ভরণ পোষণের পরিবর্তে এরা পরিবারের বোঝা হয়ে যায়।
স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত আইন
দেশে প্রচলিত শ্রম আইন-২০০৬ এবং বাংলাদেশে শ্রম বিধিমালা ২০১৫ প্রণয়নের মাধ্যমে সরকার কর্মক্ষেত্রে শ্রমিকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিভিন্ন বিধানাবলি জারী করেছেন। এই সমস্ত বিধিবিধান অমান্য করা হলে আহত হওয়া বা চাকুরী হারানোর মত অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে।
শ্রমিকের দায়িত্ব (Obligation of Workers)
কোন প্রতিষ্ঠানের কোন শ্রমিকঃ
(ক) শ্রমিকগণের স্বাস্থ্য নিরাপত্তা ও কল্যাণ নিশ্চিত করার জন্য গৃহিত কোন ব্যবস্থার বা স্থাপিত কোন যন্ত্রপাতি ইচ্ছাকৃতভাবে অপব্যবহার বা উহার ব্যবহারে কোনরূপ হস্তক্ষেপ করতে পারবে না।
(খ) ইচ্ছাকৃত বা যুক্তি সংগত কারণ ব্যতিরেকে এমন কোন কিছু করবেন না যাতে তার বা অন্য কারো বিপদ হতে পারে।
(গ) শ্রমিকগণের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা নিশ্চত করার জন্য স্থাপিত কোন যন্ত্রপাতি বা ব্যবস্থা ইচ্ছাকৃত ভাবে ব্যবহারে গাফিলতি করবেন না।
মালিকের দায়িত্ব (Obligation of Employer)
(ক) যে কোন প্রতিষ্ঠানের মালিক প্রতিষ্ঠানের শ্রমিক কর্মচারীদের সুরক্ষার জন্য স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও নিরাপত্তা নীতিমালা প্রণয়ন করবেন।
(খ) প্রতিষ্ঠানটির কার্যপ্রক্রিয়া, অবস্থান ও পারির্পাশ্বিক অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে প্রতিষ্ঠানের সম্ভাব্য ঝুঁকিসমূহ চিহ্নিত করবেন এবং সে অনুযায়ী ঝুঁকি মোকাবেলা বা হ্রাস করার জন্য প্রয়োজনীয় নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
(গ) একটি নির্দিষ্ট সময় অমত্মর অমত্মর সম্ভাব্য ঝুঁকি নির্ণয়ের বিষয় পর্যালোচনা করবেন এবং সে অনুযায়ী নিয়ন্ত্রণমূলক বব্যস্থা নিবেন।
(ঘ) প্রতিটি কর্মী কাজের ধরন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যক্তিগত নিরাপত্তা যন্ত্রপাতি (PPE) সরবরাহ করবেন ও এর ব্যবহার সম্পর্কিত যাবতীয় বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিবেন এবং কর্মকালীন সময়ে এগুলি পরিধানের বিষয় নিশ্চিত করবেন।
গুরুত্বপূর্ণ শব্দাবলী
ঝুঁকি (Risk): ঝুঁকি এমন একটি বিষয় যার সঃস্পর্শে আসলে একজন ব্যক্তি আঘাত প্রাপ্ত হতে পারে।
বিপদ (Hazard): বিপদ হল এমন একটি সম্ভাব্য উৎস যাতে আঘাত পাওয়া, আহত হওয়া বা স্বাস্থ্যের ক্ষতি হওয়ার সম্ভবনা থাকে।
অল্পের জন্য রক্ষা পাওয়া (Near Miss): যে কোন ঘটনা দুর্ঘটনা বা জরুরী অবস্থা যাতে আঘাতপ্রাপ্ত হওয়ার সম্ভবনা ছিল কিন্তু সৌভাগ্য বশতঃ আঘাত লাগে নাই।
কর্মস্থলে নিরাপত্তা মহড়া
কর্মক্ষেত্রে স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করণের একটি কার্যকর উপায় হল কাজ শুরুর পূর্বে একটু নিরাপত্তার বিষয়ে মহড়া দেয়া । যেমন-
১। কর্মস্থলের স্থানটিতে বিদ্যুৎ ব্যবস্থা আগুন লাগার ঝুঁকি ক্ষতিকারক পদার্থের উপস্থিতি, উচ্চতা বা গভীরতা ইত্যাদি থেকে সম্ভাব্য ঝুঁকি নিরাপত্তা নিরূপণ করা;
২। কোমর বন্ধনী ব্যবহার করার ক্ষেত্রে এটি আটকানোর স্থান চিহ্নিত করা;
৩। উচ্চতায় উঠার ক্ষেত্রে যথাযথ মই ব্যবহার নিশ্চিত করা;
৪। টুল বক্স রাখার নিরাপদ ব্যবস্থা নিশ্চিত করা;
৫। অগ্নি নির্বাপনের যন্ত্রের উপস্থিতি পানি বা বালির উৎস সম্পর্কে হওয়া;
৬। যথাযথ সর্তকর্তা সাইনবোর্ড যথাযথ স্থানে স্থাপন নিশ্চিত করা এবং দুর্ঘটনা ঘটে গেলে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণে কি করা হবে তা ঠিক রাখা ও এ বিষয়ে অন্যদেরকে অবহিত রাখা।
দুর্ঘটনা ও জরুরী অবস্থায় করণীয়
দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে সর্বপ্রথম প্রচেষ্টা থাকতে হবে দুর্ঘটনা কবলিত ব্যক্তিদের উদ্ধার তৎপরতা চালানো এবং সেজন্য কোথায় জড়ো হতে হবে ও কার কাছে উপস্থিত হতে হবে তা জানা থাকা জরুরী। সংশিস্নষ্ট দায়িত্ব প্রাপ্ত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের অনুমতি ব্যতিত দুর্ঘটনাস্থলে পুনঃপ্রবেশ করা যাবে না।
জরুরী অবস্থার প্রকারভেদ
জরুরী অবস্থা এমন একটি ঘটনা যাতে তাৎক্ষণিক কার্যক্রম গ্রহণ করা প্রয়োজন। এগুলি হতে পারে।
১। অগ্নিকান্ড।
২। কোন রাসায়নিক পদার্থ যেমন এসিড, গ্যাস বা অন্য কোন ক্ষতিকর পদার্থ বের হওয়া।
৩। মাঁচা বা মই ভেঙে যাওয়া।
৪। দেয়াল বা ছাদ ধসে পড়া।        CHIEF TRAINING OFFICER: MD. IZABUL ALAM
৫। স্বাস্থ্যগত সমস্যা।
৬। বোমা বা অন্য কোন নিরাপত্তা ঝুঁকি।
৭। বন্যা, জলোচ্ছাস, সিডর, অতি বৃষ্টি।
৮। ভূমিকম্প বা ভূমি ধ্বস।
৯। চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, হরতাল, অবরোধ, ভাংচুর, উত্তেজিত বা অসন্তুষ্ট শ্রমিক ইত্যাদি।
কর্মস্থলে প্রাথমিক চিকিৎসা সরঞ্জামাদি
প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের প্রাথমিক চিকিৎসা সরঞ্জাম রাখা বাধ্যতামূলক। এমনকি আত্মকর্মসংস্থানে নিয়োজিত কর্মীদের ও নূন্যতম প্রাথমিক চিকিৎসা সরঞ্জাম রাখা উচিত। বাংলাদেশ শ্রম আইন-২০০৬ এর ৮৯ ধারা ও বাংলাদেশ শ্রম বিধিমালা-২০১৫ এর ৭৬ বিধিতে প্রাথমিক চিকিৎসা সরঞ্জামাদি রাখার বিষয়টি বর্ণিত হয়েছে।
প্রাথমিক চিকিৎসা বক্সে নূন্যতম যে জিনিসগুলো রাখতে হবে:
১। ৬টি ছোট জীবানুমুক্ত ব্যান্ডেজ,
২। ৩টি মাঝারী আকৃতির জীবানুমুক্ত ব্যান্ডেজ,
৩। ৩টি বড় আকৃতির জীবানুমুক্ত ব্যান্ডেজ,
৪। প্রতিটি ১/২ আউন্স ওজনের ৩ প্যাকেট জীবানুমুক্ত তুলা,
৫। হেক্সাসল বা সমজাতীয় জীবানুনাশক ১ বোতল (১ আউন্স), রেকটিসাইড স্পিরিট ১ বোতল,
৬। এক জোড়া কাঁচি, ৭। প্রাথমিক চিকৎসার একটি প্রচারপত্র,
৮। বেদনানাশক হিসাবে প্যারাসিটামল ও এন্টাসিড জাতীয় টেবল্যাট, পোড়ায় ব্যবহৃত মলম, কাটায় ব্যবহৃত মলম, চোখের জন্য ব্যবহৃত সাধারণ মলম এবং উপযুক্ত এন্টিসেপটিক দ্রবণ,
৯। নুন্যতম তিনটি খাবার স্যালাইন ।
দূর্ঘটনা পরবর্তী করণীয়
যখন একটি দুর্ঘটনা ঘটে তখন ঘটনার সাথে সরাসরি জড়িত ব্যক্তি আহত না হলেও এ থেকে যে ঝুঁকি তেরি হয় তা অন্য যে কোন অসতর্ক লোককে আহত করতে পারে। কাজেই দুর্ঘটনার স্থানটির  নিরাপত্তা নিশ্চিতে প্রাথমিক কার্যক্রম শুরু করতে হবে। যেমন একটি বিদ্যুতের তার ছিড়ে মাটিতে পড়েছে, প্রথম এবং প্রধান দায়িত্ব হল তারটিকে বিদ্যুত প্রবাহ মুক্ত করা।
দুর্ঘটনা ঘটা মাত্র বা ঘটতে দেখা মাত্র যে কাজগুলি করতে হবে
১। প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়ার জন্য উপযুক্ত কাউকে ডেকে আনা;
২। জরুরী সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে ফোন করা;
৩। যতটুকু সম্ভব নিজে বা সহযোগীদের নিয়ে সমস্যার প্রাথমিক সমাধানের চেষ্টা করা;
৪। জরুরী সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান যেমন – ফায়ার বিগ্রেড, রেড ক্রিসেন্ট, পুলিশ সংস্থাকে ঘটনাস্থল, ঘটনার প্রাথমিক বিবরণ, আহত লোকদের অবস্থা সম্পর্কে যতটুকু সম্ভব তথ্য প্রদান করা এবং
জরুরী সেবাদানকারী সংস্থা পৌছার পূর্বে স্থানীয় সামর্থ দ্বারা ঘটনা স্থলের নিরাপত্তা ও প্রাথমিক কার্যাদি সম্পন্ন করা।
ঝুঁকিপূর্ণ বিষয় ও সরঞ্জাম চিহ্নিত করা
টাইলস স্থাপনের কাজে বেশ কয়েকটি ঝুঁকি আছে। যথাযথ ব্যবস্থা না নিলে মালামালের ক্ষতি ও শারীরিক ক্ষতি হতে পারে। এই জন্য পূর্বাহ্নে সম্ভাব্য ঝুঁকি চিহ্নিত করতে হবে এবং যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। বিশেষ করে গ্রামে এ ধরনের কোন কাজ করতে গেলে প্রচুর উৎসাহী শিশু-কিশোর জড় হয়। এরা কেউ কোন যন্ত্রপাতির উপর পড়ে আহত হতে পারে। আবার মাচা থেকে পরে বা তাতে চাপা পরে গিয়ে নিচে থাকা কেউ আহত হতে পারে।
ভাল হাউজ কিপিং
কর্মক্ষেত্রটি সবসময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। যে কর্মক্ষেত্রে মালামাল, যন্ত্রপাতি, তার কাঁটা, ছেড়া তার, লোহা লক্কর ও ঝুঁকিপূর্ণ জিনিস যত্রতত্র ছড়ানো ছিটানো অবস্থায় থাকে সেখানে যে কোন সময় মারাত্মক দূর্ঘটনা ঘটতে পারে। তাই নিম্নের নিয়মাবলী অনুসরণ করতে পারেন-
১। সব সময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্নভাবে কাজ করুন;
২। কখনোই বহিঃগমন পথ আটকিয়ে বা জরুরী নির্গমনের পথ আটকিয়ে কোন কাজ করবেন না;
৩। কখনই তার কাঁটা, স্ক্র, পরিত্যাক্ত লোহা বা ধাতব কোন টুকরা ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখবেন না;
৪। প্রতিদিনের কাজের শেষে কর্মস্থলটি পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করে গুছিয়ে রাখুন;
৫। চলাচলের পথের উপর বা চলাচলের পথ আটকিয়ে কোন কাজ করবেন না;
৬। আর্বজনা ফেলার পত্রটি পরিপূর্ণ হলে তা উপচিয়ে কোন কিছু ফেলবেন না;
৭। খাবারের উচ্ছিষ্ট কর্মস্থলে ফেলে যাবেন না এবং কাজের যন্ত্রপাতিগুলি পরিচ্ছন্ন করে নির্দিষ্ট স্থানে গুছিয়ে রাখবেন।
পেশাগত নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্য নীতি

পেশাগত স্ব্স্থ্যা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনার প্রধান উপাদান হচ্ছে নীতিমালা, পরিকল্পণা প্রণয়ন, সংগঠন ও বাস্তবায়ন, মূল্যায়ন এবং তা উন্নয়নের জন্যেপ্রচেষ্টা বা ক্রিয়াবলী
কোম্পানী এই নীতিতে বিশ্বাস করে যে,একটা নিরাপদ, স্বাস্খ্যসম্মত ও আরামদায়ক কর্ম পরিবেশ সহনীয় উন্নয়ন এবং উচ্চতর উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।কোম্পানীর লক্ষ্য শুধুমাত্র মুনাফা বৃদ্ধি নয় বরং সংশ্লিষ্ট শ্রমিকদের ও সামগ্রিক উন্নয়ন।কর্তৃপক্ষ এ জন্যে কর্মক্ষেত্রে সকল শ্রমিকদের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা বিধানে সংশ্লিষ্ট এবং কর্মক্ষেত্র  থেকে উদ্ভুত সকল ধরনের দুর্ঘটনা ও ঝুঁকি কমাতে সচেষ্ট থাকবে।এভাবে কোম্পানী মানব সম্পদ উন্নয়নের মধ্য দিয়ে দীর্ঘমেয়দে কোম্পানী এর উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে সমর্থ হবে । 

মৌলিক দায়দায়ত্ব ও কর্তৃত্ব:

ব্যবস্থাপনা কারখানা স্তরে পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা বিধানের নেতৃত্ব দেবে । কারখানায় নিরাপত্তা ও স্বাস্থকর কর্ম  পরিবেশ প্রদানের লক্ষ্যেএবং কর্ম সংক্রান্ত ঝুঁকি কমাতে পর্যাপ্ত সংগঠন নিয়ন্ত্রণ কাঠামো প্রদানে কোম্পানী বদ্ধ পরিকর ।
শ্রমিক মালিক পরামর্শ ও সহযোগিতা:

অত্র কোম্পানী কার্যকর মতবিনিময় পদ্ধতির মধ্য দিয়ে সংশ্লিষ্ট সকল শ্রমিক (বা শ্রমিক প্রতিনিধিদের) নিয়ে শ্রমিকদের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্ত্বা সংক্রান্ত সকল ধারণা, নীতিমালা, পরিকল্পণা, বিদ্যমান সমঝোতা, প্রক্রিয়া সমূহ নিয়ে পারস্পরিক মতামত আদান-প্রদান ও পরামর্শ শেয়ার করতে চায় । শ্রমিকদের সক্রিয় অংশগ্রহণ ও সহযোগিতা নিশ্চিত করতে নিুলিখিত পদক্ষেপগুলো বাস্তবায়ন করতে কোম্পানী নিবেদিত ঃ
ক) পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্ত্বা সংশ্লিষ্ট বিষয়াবলী নিয়ে নিয়মিত প্রশিক্ষণ ও সচেতন করণ প্রোগ্রাম শ্রমিকদের বিনা খরচে আয়োজন ও প্রদান করা হবে ।
খ) সংশ্লিষ্ট শ্রমিক (প্রতিনিধি)- দের সাথে নিয়মিত আলোচনা ও পরামর্শ সভার আয়োজন করা হবে ।
গ) স্বাস্খ্য ও নিরাপত্ত্বা সংশ্লিষ্ট সকল ধরনের তথ্য, নির্দেশাবলী, শ্লোগান, পোস্টার অত্র কারখানায় প্রদর্শন ও প্রচার করা হবে ।
ঘ) পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্ত্বা সংক্রান্ত কর্ম-পরিকল্পণা  এবং দায়দায়িত্বে শ্রমিকদের অন্তর্ভূক্ত করণ ও দায়িত্বভার প্রদান করা হবে।
ঙ) পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্ত্বা নীতিমালা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কারখানা ব্যস্থাপনা ও শ্রমিক প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে একটা কমিটি গঠন করা হবে ।
প্রতিরোধ-মূলক দিক সমূহের উপর গুরুত্বারোপ:

কোম্পানী বিশ্বাস করে যে সতর্কতা অবলম্বন হচ্চে নিরাপত্ত্বা বিধানের ভিত্ত্বিমূল । কোম্পানী তাই এজন্যে প্রতিরোধ-মূলক ব্যবস্থাপনার উপর আরো বেশি গুরুত্বারোপ করতে চায় । অত্র কোম্পানী সাধ্যমত চেষ্টা করবে ঃ ক) নিরাপদ মেশিন ও যন্ত্রপাতি ক্রয় করতে  খ) যথাযথ মেশিন গার্ড প্রদান ও নিরাপদ উৎপাদন প্লান্ট নিশ্চিত করতে গ) শ্রমিকদের বিনা খরচে পর্যাপ্ত ব্যক্তিগত রক্ষা সামগ্রী বা (পিপিই) — প্রদান এবং শ্রমিকদের এর ব্যবহার নিশ্চিত করতে । (যেমন ঃ মাস্ক, হাতের গ্লভস, কানের ছিপি বা প্লাগ ইত্যাদি) ঘ) ক্ষতিকারক রাসায়নিক উপাদান সমূহের নিরাপদ পরিবহন, মজুদকরন ও ব্যবহার নিশ্চিত করতে অগ্নি ও বৈদ্যুতিক নিরাপত্ত্বার জন্যে বিশেষ ব্যবস্থা ঃ অগ্নি দুর্ঘটনা প্রতিরোধক ব্যবস্থাদিতে আমরা অত্যন্ত সজাগ ও সতর্ক । অগ্নি ঝুঁকি দূর করতে ও অগ্নি দুর্ঘটনা সামাল দিতে নিম্নলিখিত বিষয়াবলী প্রদান করতে আমাদের কোম্পানী বদ্ধ পরিকর:-
ক) সমগ্র বৈদ্যতিক ব্যবস্থাপনার জন্যে পর্যাপ্ত শক্তিশালী ও যথাযথ বৈদ্যুতিক সংযোগের ব্যবস্থা করা । অভিজ্ঞ ইলেকট্রিশিয়ান দ্বারা কারখানার বৈদ্যিিতক ব্যবস্থার রক্ষণাবেক্ষণ করা ।
খ) পর্যাপ্ত সংখ্যক অগ্নি-নির্বাপক, অগ্নি নির্বাপনে প্রতিরোধক যন্ত্রপাতি মজুদ ও এগুলোর নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ ।
গ) শ্রমিকদের অগ্নি নিরাপত্ত্বা বিষয়ে প্রশিক্ষণ ও তাদের সাথে ব্যবস্থাপনার শলাপরামর্শের ব্যবস্থা
ঘ) শ্রমিকদের মাঝে অগ্নি নিরাপত্ত্বার দায়িত্ব বন্টন ও দায়িত্ব অর্পণ ।
ঙ) যথাযথ মাপের জরুরী নির্গমন পথ ও হাতল যুক্ত সিঁড়িপথ প্রতিবন্ধকতাহীন রয়েছে কি-না, তা নিশ্চিত করণ ।
চ) কারখানায় আকষ্মিক ও নিয়মিত অগ্নি মহড়া চালু রাখা ।
অত্র কোম্পানী পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্ত্বা (ওএসএইস) সংশ্লিষ্ট আইএলও কনভেনশন ও রিকমেনডেশন সমূহের প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধা প্রদর্শন করবে । (যেমন ঃ- কনভেনশন ১৫৫, কনভেনশন ১৬১ ইত্যাদি)। কোম্পানী যে কোন ক্রেতার এতদ্ সংক্রান্ত শ্রম কল্যাণকর কোন আচরণ –বিধি বা গাইডলাইনকে স্বাগত জানাবে ।
তথ্য সংরক্ষন ও পর্যালোচনা:
অত্র কোম্পানী পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্ত্বা (ওএসএইস) সংক্রান্ত যে কোন গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা সংরক্ষণের চেষ্টা করবে । বিশেষ করে কর্মক্ষেত্রে আঘাত বা দুর্ঘটনা, রুগ্ন অবস্থা, পেশাগত রোগ, পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্ত্বা বিধি প্রশিক্ষণ, অগ্নি মহড়া, মিটিং ইত্যাদি সংশ্লিষ্ট তথ্য সংরক্ষণ করা হবে । অত্র কোম্পানী র ব্যবস্থাপনা সমগ্র পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্ত্বা কার্যক্রমকে পুনর্বিবেচনা, মূল্যায়ন অনুসন্ধানের চেষ্টা করবে এবং চলমান উন্নয়নের জন্যে সংশোধন মূলক কার্যক্রম গ্রহণ করবে ।
পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা
প্রতি বছরের ২৮ এপ্রিল কর্মস্থলে নিরাপত্তা, সুস্বাস্থ্য এবং সম্মানজনক কর্মপরিবেশ আনয়নের জন্য ২০০৩ সাল থেকে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) বিশ্বব্যাপী দিবসটি উদযাপন করে আসছে। কর্মস্থলে দুর্ঘটনা ও রোগের কারণে প্রতি বছর দুই মিলিয়নেরও বেশি লোক মারা যায়। ‘আইএলও’-এর তথ্য অনুসারে প্রতি বছর ২৭০ মিলিয়ন পেশাগত দুর্ঘটনা ও ১৬০ মিলিয়ন পেশাগত রোগের ঘটনা ঘটে, যার আর্থিক মূল্য ২ দশমিক ৮ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার। সে প্রেক্ষাপটে ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৫ সালে গৃহীত জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা ২০৩০-এ পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার বিষয়ে জোর দেয়া হয়। জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়নের ৮ নম্বর লক্ষ্যমাত্রায় সমন্বিত টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং সবার জন্য উত্পাদনশীল পেশা এবং সম্মানজনক কাজের ওপর জোর দেয়া হয়।
বাংলাদেশে প্রতি বছর আনুমানিক ১১ হাজার ৭০০ শ্রমিক কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনার শিকার হয় এবং আরো ২৪ হাজার ৫০০ লোক কর্মক্ষেত্রের অনুন্নত পরিবেশের কারণে সৃষ্ট বিভিন্ন রোগে মারা যায়। ১৯৯০ সালে ঢাকায় সারাকা গার্মেন্টেসে অগ্নিদুর্ঘটনায় ৩২ জনের ও বেশি শ্রমিক মারা যান এবং ১০০ জন শ্রমিক মারাত্মকভাবে আহত হন। ১৯৯৭ সালে ঢাকার তিনটি কারখানা নোভাল গার্মেন্টেস, ফ্লোরেন্স ফ্যাব্রিক ও মডার্ন গার্মেন্টেসে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এসব অগ্নি দুর্ঘটনায় অন্তত পাঁচজন শ্রমিক নিহত হন ও ৫০ জন আহত হন। ২০০০ সালে নরসিংদীর চৌধুরী নিটওয়্যারে অগ্নিদুর্ঘটনায় অন্তত ২০ জন লোক মারা যান এবং ১০০ জন লোক মারাত্মক আহত হন। তাছাড়া ২০০৬ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারিতে চট্টগ্রামের কেটিএস টেক্সটাইলে অগ্নিদুর্ঘটনায় ৯১ জন প্রাণ হারান এবং ৪০০ জন শ্রমিক আহত হন। গত ছয় বছরে তৈরি পোশাক কারখানায় দুটি বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে। একটি হলো, ২০১২ সালে ঢাকার আশুলিয়ায় তাজরীন ফ্যাশনে দুর্ঘটনায় ১১৪ জনের মৃত্যু এবং দু-তিনশ জন মারাত্মক আহত হন। আর অন্যটি হলো, ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল রানা প্লাজা ধসে ১ হাজার ১৩৮ জনের অধিক লোকের মৃত্যু হয়। রানা প্লাজা ধসের পর বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পের কর্মপরিবেশ এবং নিরাপত্তার বিষয়টি আন্তর্জাতিকভাবে ব্যাপক সমালোচিত হয় এবং শিল্পটি বিদেশী ক্রেতাদের কাছ থেকে শ্রমিকদের নিরাপত্তা উন্নয়নের বিষয়ে বাধ্যবাধকতার সম্মুখীন হয়। ধারাবাহিকভাবে পোশাক কারখানায় কর্মপরিবেশ ও নিরাপত্তার জন্য গড়ে ওঠে তিনটি প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো— জাতীয় ত্রিপক্ষীয় কর্মপরিকল্পনা (এনটিপিটি) যা বাংলাদেশ সরকার কল-কারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের অধীন, ইউরোপীয় ক্রেতাদের অ্যাকর্ড এবং উত্তর আমেরিকার ক্রেতাদের অ্যালায়েন্স। এনটিএপি, অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্স মূলত পোশাক কারখানায় অগ্নি, বৈদ্যুতিক ও ভবনের কাঠামোগত ত্রুটি চিহ্নিতকরণ এবং সংস্কার বিষয়ে জোর দিয়ে তদারকি করছে। পৃথকভাবে তিনটি প্রতিষ্ঠান তাদের অধীন কারখানাগুলোর কাঠামোগত ও অগ্নিনিরাপত্তার বিষয়ে পরিদর্শন কার্যক্রম চালাচ্ছে। উল্লিখিত তিনটি প্রতিষ্ঠানের আওতায় পরিদর্শনের অন্তর্ভুক্ত পোশাক কারখানাগুলো অগ্নি ও ভবনের কাঠামোগত নিরাপত্তা উন্নয়নে কমবেশি অগ্রগতি অর্জন করেছে এবং যেসব কারখানা অতিরিক্ত ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে, তা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। উল্লেখ্য, অগ্রগতি সত্ত্বেও অদ্যাবধি ১ হাজার ৯টি কারখানা কোনো ধরনের পরিদর্শনের আওতায় আসেনি। এসব কারখানায় যেকোনো অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা পোশাক কারখানায় বিগত সময়ের অর্জনকে যেকোনো সময় ম্লান করে দিতে পারে।
পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা আসলে দুটি আন্তঃসম্পর্কিত আলাদা বিষয়। রানা প্লাজা ধসের পরে এনটিএপি, অ্যাকর্ড এবং অ্যালায়েন্স পোশাক কারখানার অগ্নি, বৈদ্যুতিক ও ভবনের কাঠামোগত ত্রুটি পরিদর্শনের মাধ্যমে পেশাগত নিরাপত্তার বিষয়টিই দেখছে। পেশাগত স্বাস্থ্য সম্পূর্ণ একটি আলাদা বিষয়। এটি অনেকটা মন্থর প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কর্মপরিবেশ থেকে রোগ, ব্যাধি এবং শারীরিক ও মানসিক বিপর্যয়ের সম্পর্ক আছে কিনা তার আলোচনাকে বুঝায়। যেমন— কর্মস্থল ও আশপাশের পরিবেশ, দূষণ, কর্মঘণ্টা, বিশ্রাম ও যন্ত্রপাতি সঠিকভাবে ব্যবহার না করার কারণে শ্রমিকদের কোনো শারীরিক ও মানসিক অসুবিধা ইত্যাদি। রানা প্লাজা ধসের পরে বাংলাদেশ সরকার ৫ নভেম্বর ২০১৩ জাতীয় পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা (ওএইচএস) ঘোষণা করে। উপমহাদেশে ব্রিটিশ শাসনামলে কর্মস্থলের দুর্ঘটনা এবং রোগের ক্ষতিপূরণের লক্ষ্যে ১৯২৩ সালে শ্রমিক কমপেনসেশন আইন তৈরি হয়। পেশাগত স্বাস্থ্য বলতে শুধু শিল্প কল-কারখানায় নিয়োজিত লোকদের স্বাস্থ্যগত নিরাপত্তাকে বোঝায় না। সব ধরনের কাজ বাণিজ্যিক, শিক্ষা, চিকিত্সা, প্রতিষ্ঠানসহ হালকা-ভারী যেকোনো ধরনের কাজের সঙ্গে স্বাস্থ্য সুরক্ষাকে বুঝায়। ব্রিটিশ শাসনামলে আরো তৈরি হয় ডক শ্রমিক আইন ১৯৩৪। বাংলাদেশ সরকার ২০০৬ সালের ১১ অক্টোবর ‘বাংলাদেশ শ্রমিক আইন ২০০৬’ প্রণয়ন করে। এ আইনে নিয়োগ প্রক্রিয়া, মাতৃত্বকালীন স্বাস্থ্যকল্যাণ, কর্মপরিবেশ, যন্ত্রপাতি ব্যবহার এবং নিরাপত্তা, কর্মঘণ্টা, বেতনের পরিমাণ ও পরিশোধ সময়, শ্রমিক ইউনিয়ন, ডক শ্রমিক বিধি, অপরাধ নিয়ন্ত্রণ, পর্যবেক্ষণ এবং প্রশাসনিক বিষয়ে আলোকপাত করা হয়। এসব বিষয়ে সুস্পষ্ট অধিকার, দায়িত্ব, কর্তব্য এবং কার্যকারিতার নির্দেশনা থাকলেও ২০১৩ সালে রানা প্লাজা ধসের পর জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশে আইনের অভাব বলে ব্যাপক সমালোচিত হয়। প্রকৃতপক্ষে মূল সমস্যগুলো হচ্ছে, এসব বিষয়ে শ্রমিকদের সচেতনতার অভাব, কর্মপরিবেশ-সংক্রান্ত সমস্যাগুলো মালিক ও আইনপ্রণেতা কর্তৃপক্ষের কাছে যথাযথভাবে উপস্থাপনের সুযোগের অভাব, অনেক ক্ষেত্রে মালিকদের আগ্রহের ঘাটতি এবং আইনের সঠিক কার্যকারিতার অভাব।
কর্মপরিবেশের দূষণ, কায়িক শ্রম, নিরাপত্তা যন্ত্রপাতি সঠিকভাবে ব্যবহার না করা, অধিক সময় বিরতিহীনভাবে কাজ করা, একই কাজ কায়িকভাবে বারবার করা ইত্যাদি কারণে দীর্ঘসময়ে শ্রমিকরা নানা রোগ ও শারীরিক জটিলতায় ভুগতে পারেন। উন্নত বিশ্বে শ্রমিক নিয়োগের সময় তাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার মাধ্যমে তাদের পূর্ণাঙ্গ বিবরণ সংরক্ষণ করা হয়। যার ফলে পরবর্তীকালে কোনো রোগে আক্রান্ত হলে তার কোনো সহসম্পর্ক বের করা সম্ভব হয়। কর্মক্ষেত্রের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা যে দুটি আলাদা বিষয়, সে সম্পর্কে শ্রমিক, মালিক এবং নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষকে আলাদা কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নসহ বাস্তবায়ন করতে হবে। এসব বিষয়ে টেলিভিশন, সংবাদ এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম বাড়াতে হবে। সর্বোপরি সাধারণ শ্রমিক, শ্রমিক ইউনিয়ন, কর্মকর্তা, মালিক, সরকারি-বেসরকারি সমন্বিত উদ্যোগে অর্জন হতে পারে সুরক্ষিত কর্মপরিবেশ, স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা।
 লেখক: সহযোগী অধ্যাপক, ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম
পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা
শ্রমিক-মালিকের যৌথ প্রচেষ্টার ফলে যে কোন কারখানাতেই উন্নতমানের উৎপাদন করা সম্ভব। যেহেতু কল্যাণমুখি উৎপাদন ব্যবস্থায় শ্রমিকই মুখ্য ভূমিকা পালন করে। সেহেতু শ্রমিকের সুস্ব্স্থ্যা রক্ষা ও তাদের পেশাগত নিরাপওাদানের বিষয়টি অবশ্যই জরুরী হিসাবে শ্রমিক, মালিক, সরকার ও সংশ্লিষ্ট সকলের বিবেচনা করা দরকার। বিশেষ করে কর্মক্ষেএে শ্রমিকের পেশাগত স্বাস্থ্য এবং পেশাগত নিরাপওার ব্যাপারে শ্রমিকসহ সংশ্লিষ্ট সকলের গুরূত্বপূর্ন ভূমিকা থাকা দরকার। এক কথায় পেশাগত স্বাস্থ্যওক্ষা হলো, যেকোন ব্যাবসায়িক শিল্প প্রতিষ্ঠান, কলকারখানা, গার্মেন্টস কারখানা, কৃষি-খামার, চা-বাগান কিংবা অন্য যে কোন ব্যাবসায়িক প্রতিষ্ঠানে এমন কোন প্রতিক’ল পরিবেশ সৃষ্টি করা থেকে বিরত থাকা- যা শ্রমিক-কর্মচারীদের স্বাস্থ্যে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলবে কিংবা মারাত্বক কোন দূর্ঘটনা সৃষ্টি করবে।
সাধারনত পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপওার ক্ষেএে, শ্রমের সাথে সংশ্লিষ্ট সকলের উচিত পারস্পারিক সহযোগিতার মাধ্যমে শ্রমিকদের শুধুমাএ কর্মক্ষেএের রোগ ও দূর্ঘটনা বিবেচনা না করে শ্রমিকের দৈহিক, মানসিক এবং সামাজিক স্বাস্থ্যের সঙ্গে সম্পর্কিত বিষয়াবলরি দিকে লক্ষ্য রাখা। ‘পেশাগত স্বাস্থ্য’ বলতে যে কোন পেশায় কর্মরত সকল শ্রমিকের দৈহিক, মানসিক এবং সামাজিক স্বাস্থ্যের সঙ্গে সম্পর্কিত বিষয়াবলী বোঝায়। পেশাগত স্বাস্থ্যের সঙ্গে ‘প্রতিকার ও প্রতিরোধ’ উভয় ব্যাবস্থাই যুক্ত রয়েছে। 

 স্বাস্থা-সমস্যা সৃষ্টির প্রক্রিয়াঃ
সাধারনত স্বাস্থ্যের ওপর যে কোন প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে হলে কোন দূষিত বস্তুকে হয় শরেিরর সংস্পর্শে আসতে হবে অথবা শরীরে প্রবেশ করতে হবে।৩টি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সাধারনত তা সম্পন্ন হয়ে থাকে ঃ
১.শ্বাস-প্রশ্বাস ।
২.সংস্পর্শ ।
৩.গলধ:করণ
দূর্ঘটনার কারনসমূহ :
১। অপর্যাপ্ত প্রশিক্ষন।
২। যোগাযোগের অভাব।
৩। পর্যাপ্ত তথ্যের অভাব।
৪। খন্ডকালীন কাজ বা ফলাফলের ভিওিতে মজুরী দেওয়া।
৫। চাপ সৃষ্টি।
৬। মেশিনারী ডিজাইন ও কার্যপদ্ধতিতে নিরাপওাহীনতা।
৭। অপর্যাপ্ত নিরাপওা ব্যবস্থা।
৮। নিরাপওামূলক পোশাক/সরঞ্জামাদি ব্যবহার বা সরবরাহ না করা।
৯। কাজে অন্যমনস্কতা ।
নিরাপওার ঝুকিসমূহ
১। আসা-যাওয়ার পথরোধ বা বাধাগ্রস্থ।
২। বৈদ্যুতিক ত্র“টি।
৩। পিচ্ছিল পথ।
৪। শিখাযুক্ত বা বিস্ফোরন ঘটায় এমন রাসায়নিক দ্রব্যের উপস্থিতি।
৫। ভারী জিনিসপএ।
৬। মেশিনের তত্বাবধান বা নিরাপওাবেষ্টিত না থাকা।
৭। গরম-ঠান্ডা জিনিসপত্র।
৮। ধারালো বা ঘূর্ণায়মান যন্ত্রপাতির উপস্থিতি ।
যেখানেই ঝুঁকি দেখা যাক বা চোখে পড়–ক দেরি না করে তা সরিয়ে ফেলতে হবে, যাতে আশেপাশে বা অন্য কোন জায়গায় তা দেখা না দেয়।ঝুঁকিকে নিয়ন্ত্রনে আনার ৩টি সহজ ধাপ ঃ
১। উৎপওি স্থানে।
২। উৎপওি স্থান থেকে শ্রমিকের কাছে পৌছানোর পথে।
৩। শ্রমিকের কাছে।
ঝুঁকি কমানোর জন্য ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের ভূমিকা :

১। কাজের জায়গা পরিদর্শন।
২। অভিযোগ সংগ্রহ।
৩। সবচেয়ে আগে কি করা দরকার তা নির্ধারন।
কর্মস্থলে দূর্ঘটনা এড়াতে হলে :
১। ঝুঁকিপূর্ণ কাজে মাথায় হেলমেট পরে কাজ করুন।
২। চোখে চশমা পরে কাজ করুন।
৩। হাতে গ্লোভস্ পরে কাজ করুন।
৪। পায়ে বুট জুতা পরে কাজ করুন।
৫। মুখে মাক্স ব্যবহার করুন।
৬। কর্মস্থলে নিরাপদে কাজ করুন।
৭। অসুস্থ্য শরীরে কাজ করা বিপদজনক।
৮। অসুস্থ্যবোধ করলে ফ্যাক্টরিতে অবস্থিত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
৯। কাজের সময় তন্দ্রা ঘটাতে পারে এমন ঔষধ সেবন করবেন না।
১০। মাদক দ্রব্য সেবন করা থেকে বিরত থাকুন।
১১। সুস্থ্য শ্রমিক অধিক উৎপাদনের পূর্বশর্ত।
১২। সর্ব প্রকার সাবধানতা অবলম্বন করে মেশিন চালানো উচিত।
১৩। কর্মস্থলে প্রয়োজনীয় ঢিলা পোশাক পরিহার করে এপ্রোন পরা বাঞ্ছনীয় অথবা ওড়না ভালোভাবে  পেঁচিয়ে কাজ করুন বং কর্মস্থলে শাড়ি পরা পরিহার করুন।
১৪। কাজের সময় অন্য চিন্তা পরিহার করুন।
১৫। মূহুর্তের অসাবধানতা বিপদের কারন হতে পারে।
১৬। কাজ শেষে হাত মুখ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে ধুয়ে ফেলুন।
১৭। বৈদ্যুতিক তারের ইনসুলেটর নষ্ট হয়ে গেলে সর্ট সার্কিট হয়ে দূর্ঘটনা ঘটতে পারে।
১৮। কাজ শুরুর পূর্বে আপনার মেশিন ভালোভাবে এবং নিয়মিত পরীক্ষা করুন । ত্র“টিপূর্ণ তার বা মেশিনের কোন ত্র“টি ধরা পড়লে অথবা কারখানার কোথাও কোন ত্র“টিপূর্ণ তার বা কোন মেশিন আপনার চোখে ধরা পড়লে সাথে সাথে ইলেকট্রিশিয়ানকে জানান একই সঙ্গে কারখানা কর্তৃপক্ষকেও অবহিত করুন।
মনে রাখবেন ঝুঁকিপূর্ণ মেশিন এবং ত্র“টিপূর্ণ বৈদ্যুতিক তারের সর্টসার্কিট গার্মেন্টস্ ফ্যাক্টরিতে অগ্নিকান্ডের অন্যতম কারন।
১৯। কাজ শুরুর পূর্বে মেশিনারী নিরাপওা গার্ড (যেমন- নিডিল গার্ড, পুলি কভার, নীচের মটর পুলি কভার, আই গার্ড ইত্যাদি) ঠিক আছে কিনা তা পরীক্ষা করে দেখুন।
২০। ব্যক্তিগত সুরক্ষা পদ্ধতি (যেমন-রাবার গ্লোবস্, মেটাল গ্লোবস্, মাক্স, চশমা, ইয়ার প্লাগ, এপ্রোন ইত্যাদি) পরিধান করে কাজ করুন ।
এই নিরাপওা বিধান সম্পূর্ন ভাবে না মেনে চললে আপনার এবং উৎপাদক মালিক উভয়েরই মারাত্বক ক্ষতি হতে পারে যা সমাজ এবং দেশের জন্যও ক্ষতি বটে।

বিভিন্ন পার্সোনাল প্রটেক্টিভ ইক্যুইপমেন্টের  ব্যবহার

CHIEF TRAINING OFFICER: MD. IZABUL ALAM

কর্মক্ষেত্রে নানাভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আঘাত প্রাপ্তির ঘটনা যে কোন অবস্থাতেই ঘটতে পারে এবং একে সম্পূর্ণ রূপে নির্মুল করতে না পারলেও যথাযথ প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে কমিয়ে আনা যেতে পারে। কর্মক্ষেত্রে বেশীর ভাগ দুর্ঘটনারই কারণ হচ্ছে অজ্ঞতা, অবহেলা এবং অসতর্কতা। আজকের ছোট সমস্যা ভবিষ্যতে বড় সমস্যার আকার ধারন করতে পারে। কর্তৃপক্ষ তাই গভীরভাবে অনুধাবন করে যে, সকল শ্রমিকদের মধ্যে সচারচর ঘটে যাওয়া আঘাত সমূহ সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি করতে পারলে আঘাতের বা দূঘটনার হার কমিয়ে আনা সম্ভব হবে।এ জন্য আঘাত কি তা আগে আমাদের জানতে হবে। আঘাত বলতে যে কোন শারীরিক বাধা বা সীমাবদ্ধতাকে বোঝায় যার কারণে স্বাভাবিক কর্মপ্রবাহে ব্যাঘাত ঘটে। আঘাত কেবল শারীরিক বিকৃতিকেই বুঝায় না বরং যে কোন বাঁধা বা ত্রুটি যা কোন বস্তু বা কাজের প্রবাহে বিঘ্ন ঘটায় তাকেও বুঝায়। আঘাত সাধারণত ৩ টি কারণে হয়ে থাকেঃ-

অজ্ঞতাঃ অজ্ঞতাই হচ্ছে আঘাতের মূল কারণ। কোন ব্যক্তি যদি আঘাতের কারণ সমূহ সম্পর্কে অজ্ঞ থাকে তাহলে সে কখনই প্রতিরোধ মূলক ব্যবস্থা নিতে পারবে না। কোন শ্রমিক যদি না জানে যে, সেলাই মেশিনের নিড্ল থেকে তার আঙ্গুলে/চোখে আঘাত লাগতে পারে তাহলে সে কখনও নিড্ল গার্ড/আই গার্ড ব্যবহারের গুরুত্ব বুঝবে না। তাই আঘাত প্রতিরোধের জন্য সচেতনতা সৃষ্টি করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
অবহেলাঃ-আঘাতের আরেকটি কারণ হচ্ছে অবহেলা। প্রায়ই আমরা ক্ষুদ্র সমস্যাকে অবহেলা করি যা পরবর্তীতে বৃহৎ সমস্যার সৃষ্টি করে। যেমন ত্রুটিযুক্ত বৈদ্যুত্যিক তারকে অবহেলা করি। কিন্তু এ থেকেই কেউ তড়িতাহত হতে পারে বা বড় ধরনের অগ্নিকাণ্ড ঘটতে পারে যা মৃর্ত্যুর কারণও হতে পারে। অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসঃ অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস আঘাত প্রাপ্তির একটি অন্যতম কারণ। যখন অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসের কারণে লোকজন প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে না তখনই তারা আঘাত প্রাপ্ত হয়। নিম্নে গার্মেন্টস ও টেক্সটাইল কারখানায় ব্যবহৃত কিছু পার্সোনাল প্রটেক্টিভ ইক্যুইপমেন্ট এর ছবি ও এদের ব্যবহার দেয়া হল।
ইয়ার প্লাগঃ স্বাভাবিক শব্দের চেয়ে বেশি শব্দের ক্ষেত্রে ইহা ব্যবহার করে কাজ করা হয় যাতে কেউ বধির না হয়ে যায়। যেমনঃ নিটিং, ডাইং, ওয়াশিং মেশিন ইত্যাদি।
ইয়ার মাফলারঃ স্বাভাবিক শব্দের চেয়ে উচ্চ শব্দের ক্ষেত্রে ইহা ব্যবহার করে কাজ করা হয় যাতে কেউ বধির না হয়ে যায়। যেমনঃ বয়লার, জেনারেটর, থ্রেড সাকার মেশিন ইত্যাদি।
ক্লথ মাস্কঃ সুইং, ফিনিশিং, নিটিং ফ্লোরে সবসময় কাপড়ের ধুলা, কাপড়ের গন্ধ এবং কাপড়ের সুতা নিঃশ্বাসের সাথে শরীরে প্রবেশ করে। যা স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। সেক্ষেত্রে  কাপড়ের মাস্ক ব্যবহার করা অত্যাবশকীয়।
ডাবল লিফ্টার গ্যাস মাস্ক (রেসপোরিটয় ভাপর): স্পট রিমোভিং, ডাইং, ওয়াশিং ও কেমিক্যাল ব্যবহারের সময় এই ধরনের মাস্ক ব্যবহার করতে হবে যাতে বিষাক্ত গ্যাস নিঃশ্বাসের সাথে শরীরের ভিতরে প্রবেশ করে বিভিন ধরনের রোগ হতে না পারে।
হ্যান্ড গ্লাভস : স্পট রিমোভিং, ডাইং, ওয়াশিং ও কেমিক্যাল ষ্টোরে কাজ করার সময় কেমিক্যাল শরীরে লাগলে ত্বকের ক্ষতি হয়। ফলে এর থেকে বিভিন্ন ধরনের চর্ম রোগ হতে  পারে। তাই এ ধরনের কাজে হ্যান্ড গ্লাভস ব্যবহার করতে হবে।
গগলস (চশমা) : স্পট রিমোভিং, ডাইং, কেমিক্যাল ষ্টোর, ওয়াশিং ও ওভার লক/ফ্লাট লক মেশিনে কাজ করার সময় চশমা(গগলস) ব্যবহার করতে হবে।
গাম বুট : ডাইং, কেমিক্যাল ষ্টোর ও ইটিপি সেকশনে কাজ কাজ করার সময় কেমিক্যাল ও এসিড জাতীয় পদার্থের ছোয়ায় পা পুড়ে যেতে পারে। তাছাড়া এসকল কেমিক্যালের প্রভাবে পায়ে বিভিন্ন চর্ম রোগ যেমনঃ একজিমা গ্যাংরিন এমনকি ক্যান্সারও হতে পারে। এ সমস্ত রোগ থেকে রক্ষা পাবার জন্য গাম বুট ব্যবহার করা অত্যান্ত জরুরী।
নিডল গার্ড : সুইং মেশিনে (সিঙ্গল নিড্ল ও ডাবল নিড্ল) চলাকালীন সময়ে অসতর্কতা বশত: কখনো আঙ্গুলে নিডল ঢুকে যায়। মেশিনে নিড্ল গার্ড ব্যবহার করলে আঙ্গুলে নিড্ল ঢুকবেনা।
আই গার্ড : ওবার লক, ফ্লাট লক, বাটন হোল, বাটন ষ্টিচ, বারটেক মেশিন ইত্যাদি মেশিনের নিড্ল ভেঙ্গে ছিটকে চোখে ঢোকার সম্ভাবনা থাকে, তাই এই সকর মেশিনে আই গার্ড ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
রাবার ম্যাট : সুইং মেশিনের পাদানি, আয়রন ম্যানের নীচে ও ইলেকট্রিক মেইন সুইচ বোর্ডের নিচে রাবার ম্যাট ব্যবহার করা হয় যাতে যেন ইলেকট্রিক শক শরীরে না লাগে।
মেটাল গ্লাভস : কাটিং মেশিনে কাটারম্যান মেটাল গ্লাভস ব্যবহার করে যাতে হাতের আঙ্গুল কেটে না যায়।
অপার পুলি কভার : মেশিন থেকে তৈল ছিটকিয়ে না পড়া, মেশিনের কাপড় বা ওড়না যাতে না জড়ায় সেজন্য ইহা ব্যবহার করা হয়।
আয়রন সেফটি কভার : আয়রন মেশিনের সংযোগ তার থেকে যাতে কোন প্রকার ইলেকট্রিক শক কিংবা গরম তাপ অনুভব না লাগে তাই ইহা ব্যবহার করা হয়।

ট্রাফিক আইন

CHIEF TRAINING OFFICER: MD. IZABUL ALAM

আধুনিক যুগে দুর্ঘটনার খরব শুনেই আমাদের ঘুম ভাঙে। কিন্তু একটু সচেতনতা আর যুগোপযোগী মোটরযান আইনের যথার্থ বাস্তবায়নে বেঁচে যেতে পারে অনেক মূল্যবান প্রাণ। সড়কে গাড়ি চলাচল নিয়ন্ত্রণ, গাড়ির চালক ও মালিকের দায়বদ্ধতা সৃষ্টি করাসহ বিভিন্ন বিষয়ে মোটরযান আইনের বিভিন্ন বিধান থাকলেও বাস্তবে এর কোনো প্রয়োগ নেই। ট্রাফিক আইন সম্পর্কে গাড়ির চালকদের বেশির ভাগেরই তেমন কোনো ধারণা থাকে না। ফলে আমাদের দেশে সড়ক দুর্ঘটনা দিন দিন বেড়েই চলেছে।
ভারতীয় উপমহাদেশে প্রথম মোটরযান আইন করা হয় ১৯৩৯ সালে। এরপর সময়ের প্রয়োজনেই এই আইনের আরো একটি অধ্যাদেশ ১৯৮৩ সালে পাস করা হয়, কাজেই সেটাও যে এখন আদিযুগের; তা বলার অপেক্ষা রাখে না। সে যা হোক, কাগুজে আইনের সমস্যা-সম্ভাবনা নিয়ে আলাপ থাক বরং বাংলাদেশের কিছু গুরুত্বপুর্ণ মোটরযান আইন জেনে রাখুন। রাস্তাঘাটে উপকারে আসতে পারে।

চালকের যোগ্যতা

২০ বছরের নিচে কোনো ব্যক্তি চালকের আসনে বসতে পারবে না। লাইসেন্সবিহীন গাড়ি চালানো একটি দণ্ডনীয় অপরাধ।
আইনের ১৩৮ ধারা অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি লাইসেন্স ছাড়া কোনো মোটরযান অথবা যাত্রীবাহী মোটরযান চালালে বা অন্যকে চালনা করতে দিলে সর্বোচ্চ চার মাসের কারাদণ্ড অথবা ৫০০ টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হতে হবে।
চালকের পাশাপাশি সহকারী চালকের জন্যও লাইসেন্স থাকা বাধ্যতামূলক। আইন অনুসারে এ ধরনের অপরাধের ক্ষেত্রে দায়িত্বরত পুলিশ কর্মকর্তা কোনো ওয়ারেন্ট ছাড়াই অভিযুক্ত চালককে গ্রেপ্তার করতে পারেন।
গাড়ির শ্রমিক

গাড়ির কন্ডাক্টর হতে হলে ১৮ বছর এবং কন্ডাক্টরের লাইসেন্স থাকতে হবে। পঙ্গু বা রোগাক্রান্ত কেউ কন্ডাক্টর হিসেবে গাড়িতে কাজ করতে পারবে না।
নির্ধারিত গতি:
মোটরযান আইনের ১৪২ নং ধারা অনুসারে, দ্রুতগতিতে কোনো মোটরযান চালালে অভিযুক্ত ব্যক্তি প্রথমবার অপরাধের জন্য সর্বোচ্চ এক মাস কারাদণ্ড কিংবা সর্বাধিক ৩০০ টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয়দণ্ডে দণ্ডিত হতে পারেন। শুধু তাই নয়, পরে অনুরূপ অপরাধের জন্য সর্বোচ্চ তিন মাস কারাদণ্ড কিংবা সর্বাধিক পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন এবং অনধিক এক মাস মেয়াদের জন্য লাইসেন্স বাতিল করা হতে পারে।
রাস্তার বিপজ্জনক অবস্থায় যেমন- ঢালু জায়গায় গাড়ি না থামাতে ড্রাইভারদের ওপর দায়িত্ব আরোপ করা হয়েছে। গাড়ির চালক বা কন্ডাক্টর চলন্ত গাড়িতে কিংবা বাম্পার বা ছাদে কিংবা ভেতর ব্যতীত অন্য কোনো স্থানে কোনো ব্যক্তিকে আরোহণ করতে দিতে পারবেন না এবং অনুমোদিত সংখ্যার চেয়ে বেশি যাত্রী নিতে পারবেন না।
এই আইনভঙ্গে প্রথমবারের জন্য সর্বোচ্চ তিন মাস কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ দুই হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডনীয় এবং পরবর্তী সময়ে একই অপরাধের জন্য সর্বাধিক ছয় মাস কারাদণ্ড অথবা সর্বাধিক পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা কিংবা উভয় দণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন।
বাম দিকে চলবে গাড়ি:
আইন অনুযায়ী গাড়ির চালক যতখানি সম্ভব রাস্তার বামদিকে নির্ধারিত লেনে গাড়ি চালাবেন এবং বিপরীত দিক থেকে আসা সব যানবাহনকে ডান দিক দিয়ে যেতে দেবেন। চালক যদি কোনো মিছিল কিংবা একদল সৈন্য বা ওই রাস্তায় কার্মরত পুলিশের সম্মুখীন হন কিংবা রাস্তা মেরামতে নিয়োজিত শ্রমিকদের পাশ দিয়ে যান তাহলে গাড়ির গতি ঘণ্টায় ১৫ মাইলের বেশি করা যাবে না।
চালক এমনভাবে গাড়ি চালাবেন, যাতে যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়। দুটি গাড়ি অতিক্রম করার সময় পরস্পরের গায়ে যেন না লাগে সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে । স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, হাসপাতাল এলাকা দিয়ে গাড়ি যাওয়ার সময় চালককে সব দিকে নজর রাখতে হবে এবং নির্দিষ্ট গতিসীমার চেয়ে বেশি গতিসীমায় গাড়ি চালানো যাবে না।
এ ছাড়া যেসব মোটরযান সর্বসাধারণের ব্যবহার্য স্থানে চালানো যাবে না বলে উল্লেখ করা হয়েছে, সেগুলো হচ্ছে-
১.নিবন্ধনপত্রে মালামাল বা যাত্রী বোঝাইবিহীন অবস্থায় যে ওজন নির্ধারিত হয়েছে তার চেয়ে অধিক ওজনসম্পন্ন গাড়ি।
২.নিবন্ধনপত্র অনুযায়ী যে ওজন নির্ধারিত হয়েছে তার চেয়ে অধিক ওজনসম্পন্ন গাড়ি।
৩.নিবন্ধনপত্রে এক্সেলের যে সর্বোচ্চ ওজন নির্ধারিত হয়েছে তার চেয়ে অধিক এক্সেল ওজনসম্পন্ন গাড়ি।
যত্রতত্র গাড়ি থামানো:
যেখানে সেখানে গাড়ি থামানো যাবে না বা যাত্রী ওঠানামা করানো যাবে না। নির্দিষ্ট এলাকা ছাড়া গাড়ি দাঁড় করালে জরিমানা এবং নির্দিষ্ট স্থান ছাড়া অন্য স্থান থেকে যাত্রী উঠালে জরিমানা দিতে হবে। নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করলে ৫০ টাকা এবং সময়সীমা প্রদর্শন না করে গাড়ি চালালে ৩০ টাকা জরিমানা দিতে হবে।
চালককে বাধ্যতামূলক ট্রাফিক সংকেত মেনে চলতে হবে। ট্রাফিক পুলিশ চাইলে গাড়ির কাগজপত্র দেখাতে চালক বাধ্য থাকবেন। রাস্তায় পথচারী পারাপারের জন্য নির্ধারিত সীমানার ওপর দিয়ে পথচারী পারাপারের সময় চালককে নির্দিষ্ট লাইন বরাবর অবশ্যই গাড়ি থামাতে হবে।
গাড়ির চালককে গাড়ি ডান কিংবা বাম দিকে ফেরাতে বা থামাতে হলে সংশ্লিষ্ট গাড়ির সঙ্গে সংযুক্ত নির
মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালানো যাবে না:
মদপান করে গাড়ি চালানো যাবে না। মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালালে প্রথমবার অপরাধের জন্য সর্বোচ্চ তিন মাসের কারাদণ্ড কিংবা সর্বোচ্চ এক হাজার টাকা জরিমানা কিংবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবে এবং দ্বিতীয় ও পরবর্তী সময়ে অনুরূপ অপরাধ করলে সর্বোচ্চ দুই বছরের কারাদণ্ড কিংবা এক হাজার টাকা জরিমানা কিংবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবে। উভয়ক্ষেত্রেই চালকের লাইসেন্স স্থগিত করা হবে।
আরো কিছু বিধিনিষেধ ও সাজা:
গাড়ির নিবন্ধন, ফিটনেস অথবা রুট পারমিট ছাড়া গাড়ি ব্যবহার করলে প্রথমবার অপরাধের জন্য তিন মাস পর্যন্ত কারাদণ্ড অথবা দুই হাজার টাকা জরিমানা কিংবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন মালিক বা চালক। পরবর্তী সময়ে অনুরূপ অপরাধ করলে সর্বাধিক ছয় মাসের কারাদণ্ড অথবা সর্বাধিক পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা কিংবা উভয় দণ্ডই হতে পারে। যেখানে ওভারটেকিং নিষিদ্ধ সেখানে ওভারটেক করলে চালককে ১০০ টাকা জরিমানা দিতে হবে।

মটরযান অধ্যাদেশ ১৯৮৩ মোতাবেক ট্রাফিক আইন ধারা সমূহ:-

 CHIEF TRAINING OFFICER: MD. IZABUL ALAM

ধারা-১৩৭: মোতাবেক যদি কোন ব্যক্তি ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়া গাড়ী চালায়,গাড়ীতে মেটালিক নাম্বার প্লেট ব্যবহার করে,ট্যাক্স টোকেনের মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়,নাম্বার প্লেট অস্পষ্ট,বাম্পার দ্বারা নাম্বার প্লেট আবৃত থাকে এবং রং পার্কিং করে; তাহলে উক্ত দ্বারা মোতাবেক ড্রাইভার বা মালিকের ২০০/-টাকা জরিমানা হবে।
ধারা-১৩৯: এ ধারায় বলা হয়েছে যে, কোন গাড়ীতে হাইড্রোলিক হর্ণ সংযোজিত পাওয়া গেল-উক্ত দ্বারা মোতাবেক ১০০/-টাকা জরিমানা করা হবে।
ধারা-১৪০: এ ধারায় বলা হয়েছে যে,নিষিদ্ধ স্থানে হর্ণ বাজাইলে,ট্রাফিক নির্দেশাবলী অমান্য করিলে,বাঁধা সৃষ্টি ও তথ্য প্রদানে অস্বীকৃতি জানাইলে,ট্রাফিক সংকেত অমান্য করিলে, ওয়ান-ওয়ে অমান্য করিলে,নিষিদ্ধ ইউটার্ণ করিলে,নিষিদ্ধ সময়ে যানবাহন চলাচল করিলে-উক্ত দ্বারা মোতাবেক ২৫০/-টাকা জরিমানা করা হবে।
ধারা-১৪২: এ ধারায় বলা হয়েছে আইনানুগ সর্ব্বোচ্চ গতিসীমা লংগন করিলে-জরিমানা হবে ৩০০/-টাকা মাত্র ।
ধারা-১৪৬: এ ধারায় বলা হয়েছে যে,দূর্ঘটনা সংক্রান্ত অপরাধ করিলে-জরিমানা হবে ৫০০ টাকা মাত্র ।
ধারা-১৪৯: এ ধারায় বলা হয়েছে যে,যানবাহনের হেড লাইট,ব্যাক লাইট,ইন্ডিকেটর, ব্রেক লাইট,লুকিং গ্লাস,রিয়ার মিরর (পেছনে দেখার আয়না),ওয়াইপার না থাকিলে বা ক্রটিযুক্ত থাকিলে,যানবাহলে আনসেইফ লোডিং থাকিলে,মটর সাইকেলে ২ জনের অধিক আরহন করিলে,চালকের পাশে বা ছাদে অতিরিক্ত যাত্রী বহন করিলে,হেলমেট ব্যবহার না করিলে-জরিমানা হবে ৩০০/-টাকা মাত্র ।
ধারা-১৫০: যে সকল যানবাহন হইতে স্বাস্থের জন্য ক্ষতিকর এমন ধোয়া বাহির হইলে-জরিমানা হবে ২০০/-টাকা মাত্র ।
ধারা-১৫১: অস্বচ্ছ, রঙ্গীন, কালো গ্লাস ব্যবহার করিলে,ট্রিনটেড পেপার ব্যবহার করিলে,ফিটনেস সার্টিফিকেটের সহিত গাড়ীর রংয়ের মিল না থাকিলে, গাড়ীর টায়ার পরিবর্তন করিলে,সরকার নির্ধারিত রং ব্যতিত অন্যকোন রং ব্যবহার করিলে,বিআরটিএর অনুমতি ছাড়া গাড়ীর রং পরিবর্তন করিলে ও মালিকানা পরিবর্তন না করিলে-জরিমানা হবে ১,২৫০/-টাকা মাত্র ।
ধারা-১৫২: এ ধারায় বলা হয়েছে যে,রেজিষ্ট্রেশন সার্টিফিকেট,ফিটনেস সার্টিফিকেট, রুট পারমিট (যে সকল যানবাহনের ক্ষেত্রে প্রযোজন্য) না থাকিলে, ফিটনেস সার্টিফিকেট অথবা রুট পারমিটের মেয়াদ শেষ হইলে,রুট পারমিটের শর্ত অমান্য করিলে, সিএনজি চালিত অটোরিকসা, ট্যাক্সিক্যাব এর চালক গন্তব্যস্থলে যাত্রী বহনে অস্বীকার করিলে,অনটেষ্ট, এপ্লাইড রেজিষ্টেশন(এ এফ আর),ড্রাইবার ব্যতিত আট আসন বিশিষ্ট গাড়ীর রুট পারটিম না থাকিলে, গ্যারেজ নাম্বার দিয়ে গাড়ী চালাইলে-এ ধরণের প্রতিটি অপরাধের জন্য পৃথক পৃথক ভাবে ৭০০/-টাকা মাত্র জরিমানা করার বিধান আছে এবং হয়ে থাকে।
ধারা-১৫৩: এ ধারায় বলা হয়েছে যে,লাইসেন্স ব্যতিত কিংবা প্রবিধান লংঘণ পূর্বক গাড়ীতে এজেন্ট বা ক্যানভাসার নিয়োজিত থাকিলে-জরিমানা হবে ১৫০/-টাকা মাত্র ।
ধারা-১৫৪: যানবাহনের ওজন, মালসহ ওজন, নির্ধারিত ওজনের চেয়ে অতিরিক্ত থাকিলে-জরিমানা হবে ৫০০/-টাকা মাত্র ।
ধারা-১৫৫: এ ধারায় বলা হয়েছে যে,ইন্সুরেন্স সার্টিফিকেট না থাকিলে, ইন্সুরেন্স সার্টিফিকেটে মেয়াদ শেষ হইলে-জরিমানা হবে ৫০০/-টাকা মাত্র ।
ধারা-১৫৬: মটরযান কিংবা আইনানুগ কর্তৃপক্ষের অনুমতি ব্যতিত সংশ্লিষ্ট মটরগাড়ী চালাইয়া বাহিলে নিয়া গেলে-জরিমানা হবে ৫০০/-টাকা মাত্র ।
ধারা-১৫৭: এ ধারায় বলা হয়েছে যে,গাড়ী দাঁড় করাইয়া অন্যান্য যানবাহন চলাচলে বাঁধা সৃষ্টি করিলে, নষ্ট গাড়ী মেরামত করত: অন্য যানবাহন চলাচলে বাঁধা সৃষ্টি করিলে, যাত্রী উঠানামা করাইয়া রাস্তায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করিলে,রং পার্কিং করিয়া রাস্তায়/ফুটপাতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করিলে-জরিমানা হবে ২৫০/-টাকা মাত্র ।
ধারা-১৫৮: এ ধারায় বলা হয়েছে যে,গাড়ীর স্পীড গভর্ণর সীল না থাকিলে, সিএনজি চালিত অটোরিকসা এবং ট্যাক্সিক্যাবের মিটার সেলের উপর অন্যায় হস্তক্ষেপ করিলে অর্থাৎ ঘষামাঝা ও টেম্পারিং করিলে-জরিমানা হবে ২৫০/-টাকা মাত্র ।
তাছাড়া লেন অমান্য অথবা লালবাতির সংকেত অমান্য করিলে ৫০০/-টাকা জরিমানা ছাড়াও ধারা-১৩৭, ১৩৯, ১৫০ ব্যাতিত অন্যান্য সকল ধারা মোতাবেক দায়িত্বপালনকারী হলুদ জ্যাকেট পরিদেয় সার্জেন্টগণ (সেয়েরা ইকো, চেকপোষ্ট এবং ইনফোসমেন্ট পেট্রোল কারে দায়িত্ব পালনকারী সার্জেন্ট) কর্তৃক দায়েরকৃত মামলার ক্ষেত্রে জরিমানার পরিমান উপরে বর্ণিত ধারায় প্রত্যেকটিতে দ্বিগুনহারে বৃদ্ধি পাবে।

 Road Safety
‘ট্রাফিক আইন মানি এবং যানজটমুক্ত ঢাকা গড়ি

CHIEF TRAINING OFFICER: MD. IZABUL ALAM

জনসাধারণের প্রতি-
১। রাস্তা পারাপারে ফুট-ওভারব্রীজ/আন্ডারপাস/জেব্রাক্রসিং ব্যবহার করুন, যত্রতত্র রাস্তা পারাপার দন্ডনীয় অপরাধ।
২। রাস্তা পারাপারের সময় হেডফোন ব্যবহার করা ও মোবাইলে কথা বলা উচিত না।
৩। পায়ে হেঁটে চলাচলের সময় ফুটপাত ব্যবহার করুন।
৪। চলন্ত গাড়িতে ওঠা ও নামা থেকে বিরত থাকুন।
৫। রাস্তায়/ফুটপাতে নির্মাণ সামগ্রী/দোকানের মালামাল/দোকানের সাইনবোর্ড রাখবেন না।
৬। ঝুঁকি নিয়ে গাড়িতে ভ্রমণ করবেন না। বাসের ছাদে, বাম্পারে, পা-দানিতে ভ্রমণ হইতে বিরত থাকুন।
৭। বাস-বে/নির্দিষ্ট স্থান ব্যাতিত গাড়িতে উঠা/নামা থেকে বিরত থাকুন।
৮। যাত্রীরা কখনই চালককে দ্রুত গতিতে গাড়ি চালাতে উদ্ধুদ্ধ করবেন না।
৯। পাবলিক পরিবহনে ধুমপান হতে বিরত থাকুন।
১০। রেলওয়ে ক্রসিং/লেভেল ক্রসিং এ লাল বাতি জ্বলন্ত অবস্থায় রাস্তা পার হওয়া থেকে বিরত থাকুন। ট্রেন চলে যাবার পর রাস্তা পার হোন।
১১। ভ্রমনকালীন সময়ে অপরিচিত লোকের দেয়া কোন কিছু খাবেন না।
১২। শারীরিক প্রতিবন্ধী, বৃদ্ধ, শিশু ও নারীদেরকে যানবাহন আসন ব্যবহারে অগ্রাধিকার দিন।
১৩। বাস বে/নির্ধারিত স্থান ব্যতীত রাস্তায় দাঁড়িয়ে যানবাহনের জন্য অপেক্ষা করা হতে বিরত থাকুন।
অভিভাবক ও শিক্ষকদের প্রতি-
১। ছোট ছোট ছেলে-মেয়েদেরকে ট্রাফিক নিয়ম-কানুন সম্পর্কে প্রাথমিক জ্ঞান দিন।
২। ফুটপাত দিয়ে চলাচল করার জন্য উদ্ধুদ্ধ করুন।
৩। শিশুদের জানতে হবে নিরাপত্তাই প্রথম।
৪। শিশুদের ট্রাফিক আইনের সাথে পরিচিত করুন।
গাড়ি চালকদের প্রতি-
১। গাড়ি চালানোর পূর্বে গাড়ির সমস্ত কাগজপত্র ও ড্রাইভিং লাইসেন্স চেক করে নিন ও হালনাগাদ কাগজপত্র সাথে রাখুন।
২। অযথা হর্ণ বাজানো থেকে বিরত থাকুন।
৩। সিটবেল্ট বেঁধে গাড়ি চালান।
৪। গাড়ি চালানোর সময় গতিসীমা মেনে চলুন।
৫। ঘনঘন লেন পরিবর্তন করা থেকে বিরত থাকুন।
৬। অযথা ওভারটেকিং করা থেকে বিরত থাকুন এবং সতর্কতার সাথে ওভারটেকিং করুন।
৭। গাড়ি চালানোর পূর্বে গাড়ির সমস্ত কাগজপত্র ও ড্রাইভিং লাইসেন্স চেক করে নিন ও হালনাগাদ কাগজপত্র সাথে রাখুন।
৮। স্ব-স্ব প্রতিষ্ঠানের লোগোসহ স্থায়ী স্টীকার ব্যতীত আলগা/অস্থায়ী যে কোন ধরণের স্টীকার ব্যবহার হতে বিরত থাকুন।
৯। দূর্ঘটনা প্রতিরোধে গাড়ির যন্ত্রাংশ চেক করে নিন।
১০। উল্টো পথে যে কোন যান চালানো থেকে বিরত থাকুন।
১১। গাড়ি চলাচলের নির্ধারিত পথে গাড়ি পার্ক করে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবেন না।
১২। ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রী বহণ করবেন না।
১৩। ক্লান্ত/অসুস্থ/মাতাল অবস্থায় গাড়ি চালানো হতে বিরত থাকুন।
১৪। সর্বদা বাম লেন চালু রাখুন।
১৫। ইন্টারসেকশনে এবং রাস্তায় যাত্রী উঠানো/নামানো হতে বিরত থাকুন।
১৬। ট্রাফিক আইন ও সিগন্যাল জানুন এবং মেনে চলুন।
১৭। বাস বে/নির্দ্দিষ্ট স্থান ব্যতীত যত্রতত্র বাস থামিয়ে যাত্রী উঠানামা করাবেন না।
১৮। গাড়ী থামানোর ক্ষেত্রে সর্বদা রাস্তার বাম ঘেঁসে থামাবেন।
১৯। যাত্রী উঠানো নামানোর স্থান ব্যাতিত যাত্রী ওঠানো/নামানো থেকে বিরত থাকুন।
২০। ডানে/বামে যাওয়ার ক্ষেত্রে ইন্ডিকেটর ব্যবহার করুন।
মোটর সাইকেল চালকদের প্রতি-
১। মটর সাইকেল চালানোর পূর্বে গাড়ির সমস্ত কাগজপত্র ও ড্রাইভিং লাইসেন্স চেক করে নিন ও হালনাগাদ কাগজপত্র সাথে রাখুন।
২। মটর সাইকেলে দুই জনের বেশী আরোহণ করবেন না।
৩। চালক এবং আরোহী উভয়েই হেলমেট ব্যবহার করুন।
৪। ফুটপাতে মটর সাইকেল চালাবেন না।
৫। উল্টো পথে মটর সাইকেল চালানো থেকে বিরত থাকুন।
৬। গাড়ি চলাচলের নির্ধারিত পথে মটর সাইকেল পার্ক করে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবেন না।
৭। ট্রাফিক সিগন্যাল অমান্য করে মোটর সাইকেল চালাবেন না।
মালিকদের প্রতি-
১। চালক নিয়োগের পূর্বে চালকের দক্ষতা, বৈধ লাইসেন্স ও ঠিকানা যাচাই করে নিন।
২। চালকের মেকানিক্যাল ও ট্রাফিক আইন সম্পর্কেও জ্ঞান যাচাই করে নিন।
৩। ড্রাইভাররা যাতে মাতাল/অসুস্থ অবস্থায় গাড়ি চালানো থেকে বিরত থাকে সে বিষয়টি নিশ্চিত করুন।
৪। চালক এর পর্যাপ্ত বিশ্রাম এর বিষয়টি গুরত্ব দিন।
৫। লং রুটের বাস/ট্রাক/কাভার্ড ভ্যান এ দুজন চালক এর ব্যবস্থা রাখুন।
৬। আপনার গাড়ির হালনাগাদ কাগজপত্র গাড়িতে সংরক্ষণ করুন।
৭। গাড়িতে হাইড্রোলিক হর্ণ, হুটার, বিকন লাইট সংযোজন/ব্যবহার (প্রযোজ্য ক্ষেত্র ব্যতীত) করা থেকে বিরত থাকুন।
৮। মাইক্রোবাসের কাঁচে কৃত্রিম আবরণ (টিনটেড পেপার) লাগাবেন না।



প্রশ্নোত্তর পর্ব
?
ধন্যবাদ

CHIEF TRAINING OFFICER: MD. IZABUL ALAM

No comments:

Post a Comment

সিকিউরিটি সুপারভাইজার ও সিকিউরিটি ইনচার্জ এর দায়িত্ব ও কর্তব্যাবলী

  সিকিউরিটি সুপারভাইজার ও সিকিউরিটি ইনচার্জ এর দায়িত্ব ও কর্তব্যাবলী   একজন নিরাপত্তা প্রহরী বা সিকিউরিটি সুপারভাইজার বা সিকিউরিট...